স্মিথ জানালেন তিনি মানুষ

এই অ্যাশেজে প্রথমবারের মতো পঞ্চাশ না করে আউট হয়েছেন স্মিথ। ছবি: এএফপি
এই অ্যাশেজে প্রথমবারের মতো পঞ্চাশ না করে আউট হয়েছেন স্মিথ। ছবি: এএফপি

বিবিসির টেস্ট ম্যাচ স্পেশালের টুইট দিয়েই শুরু করা যাক স্টিভ স্মিথ বন্দনা। অস্ট্রেলিয়ার স্কোর তখন ৩ উইকেটে ৮১ । স্মিথের একটি ছবি দিয়ে টিএমএস জানাল, ‘যদি কেউ অস্ট্রেলিয়াকে ৩৯৯ রানের লক্ষ্যে নিতে পারে, সেটি এই ব্যক্তি।’ স্মিথের রান তখন ২৩। অস্ট্রেলিয়ার স্কোরে আর মাত্র ৩ রান যোগ হতেই ফিরে গেলেন তিনি। তিনি। 

টিএমএস আর দেরি করেনি, সঙ্গে সঙ্গে টুইট করল, ‘আমাদের আরও নিয়মিত এটা করা উচিত ছিল।’ কী করা উচিত ছিল? ওই যে কারও অতি প্রশংসা করে ‘কুফা’ লাগিয়ে দেওয়া। এবারের অ্যাশেজে স্টিভ স্মিথ এমনই অবিশ্বাস্য ফর্মে আছেন যে বাস্তব অবাস্তব সব উপায়ই ভেবে দেখা হয়েছে তাঁকে আউট করার জন্য। ‘কুফা’ লাগানোর ব্যাপারটি সিরিজের একদম শেষ ইনিংসে এসে আবিষ্কার রায় তাই দুঃখ হতেই পারে ইংলিশদের। স্টুয়ার্ট ব্রডের একটি বলে লেগ গালিতে ক্যাচ দিয়ে অবশেষে একটি রহস্যের অবসান ঘটালেন স্মিথ। জানালেন এবারের অ্যাশেজে যে স্মিথ খেলছেন তিনি আসলেই মানুষ।

এবারের অ্যাশেজটা ছিল স্মিথের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা। ‘শিরীষ কাগজ’ কাণ্ডের পর এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছিলেন। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফেরার পর প্রথম টেস্ট সিরিজই কি না অ্যাশেজ! বার্মিংহামে যখন মাঠে নেমেছিলেন দুয়োর চোটে মাঠে কান পাতা যাচ্ছিল না। পাঁচ টেস্ট, ছয় সপ্তাহ ও ১১৯৬ বল পরে মাত্র ২৩ রান করে আউট হয়েছেন তখন তাঁর সম্মানে পুরো গ্যালারি উঠে দাঁড়িয়েছে। উষ্ণ করতালিতে মাঠ ভরে গেছে।

বার্মিংহামে ১৪৪ ও ১৪২ রানের দুই ইনিংসের পর একে একে তাঁর ব্যাট থেকে দেখা মিলেছে ৯২, ২১১, ৮২, ৮০ ও ২৩ রানের ইনিংস। সহজ ভাষায় এবারের অ্যাশেজে ৭৭৪ রান করেছেন স্মিথ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের রান তাঁর অর্ধেকের কাছাকাছি। পুরো সিরিজের প্রথমবারের মতো ৮০ রানের নিচে আউট হওয়ার পরও তাই গ্যালারি উঠে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছে। ছয় সপ্তাহ আগেও দুয়ো দেওয়ায় ব্যস্ত থাকা প্রতিপক্ষই এখন তাঁর সমর্থকদের দলে ভিড়ে গেছেন।

এই শতাব্দীতে এক সিরিজে স্মিথের চেয়ে বেশি রান কেউ করেননি। এর আগের রেকর্ডটিও (৭৬৯, প্রতিপক্ষ ভারত) তাঁর। ইতিহাসেই এক সিরিজে তাঁর চেয়ে বেশি রান করার রেকর্ড আছে আরও এগারোজনের। ১৯৩০ সালে ডন ব্র্যাডম্যানের ৯৭৪ রান এখনো নাগালের বাইরেই থাকছে সবার। তবে বহুদিন পর কারও ব্যাটে ব্র্যাডম্যানকে ছাড়িয়ে দেওয়ার হুংকার শোনা গেছে। ১১০.৫৭ গড়ে রান তোলা স্মিথের পক্ষে কি সম্ভব হতো ব্র্যাডম্যানকে টপকানো? উত্তরে না বলার আগে একটি তথ্য মাথায় রাখুন, মাথায় চোট না পেলে আরও তিন ইনিংসে ব্যাট করার সুযোগ পেতেন স্মিথ। জীবনের সেরা ফর্মে থাকা স্মিথ, তিন ইনিংস আর ২০১ রান—এ সমীকরণের উত্তর জানা হবে না কখনো!

তিন ইনিংস না খেলেই যা খেলেছেন, সেটাই অবিশ্বাস্য। এ সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম নয় ইনিংসের সর্বমোট রানের ৩৩ ভাগেরও বেশি রান এসেছে স্মিথের ব্যাট থেকে। ৩ ইনিংস কম খেলে। আজ সিরিজের শেষ ইনিংসে মাত্র ২৩ রানে আউট হওয়ায় পরিসংখ্যানটা একটু ‘বাস্তব’ রূপ নেবে। তবে সিরিজ শেষেও প্রথম দুই টেস্টের শেষে অ্যাশেজের উইকিপিডিয়ায় মজা করে দেওয়া সংজ্ঞা টাকেই সত্য বলে মনে হচ্ছে, অ্যাশেজ হলো সে টেস্ট সিরিজ যা ইংল্যান্ড ও স্টিভ স্মিথের মধ্যে খেলা হয়। সত্যিই তো, সব দিক থেকে এগিয়ে থাকার পরও অ্যাশেজে যে ড্র (ওভাল টেস্টে ইংলিশদের জয়ী ধরে) মেনে নিতে হচ্ছে ইংল্যান্ডকে, তার কারণ তো স্মিথ আর তাঁর ব্যাকরণ বদলে দেওয়া ব্যাটিং।

টুইটার দিয়ে লেখা শুরু হয়েছিল। খুদে ব্লগ বার্তা দিয়েই শেষ হোক এ লেখার। বিবিসি ফাইভ স্মিথের বিদায় বার্তা জানিয়েছে এভাবে, ‘স্টিভ স্মিথ ২৩ রানে ফিরছেন। হ্যাঁ, আপনি ঠিকই পড়ছেন!’ প্রতিপক্ষকে মাত্র ২৩ রানের যন্ত্রণা দিয়ে ফিরছেন স্মিথ, সেটা এতটাই অবিশ্বাস্য হয়ে উঠেছে গত কয়েক দিনে। কিংবদন্তিদের জন্ম এভাবেই হয়।