স্মিথদের সঙ্গে এক লিফটেও চড়তে পারেননি ভারতীয় ক্রিকেটাররা!

গোটা অস্ট্রেলিয়া সফরজুড়েই বৈষম্যের শিকার হয়েছেন ভারতীয় ক্রিকেটাররা।ছবি: এএফপি

ভারত-অস্ট্রেলিয়া সিরিজ হবে, আর সেখানে বল-ব্যাটের লড়াই ছাড়াও অন্য কিছুর লড়াই হবে না, তা কি হয়? বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম দুই পরাশক্তির লড়াই মানে অন্য মাত্রার স্নায়ুযুদ্ধও বটে।

এবারই যেমন, মাঠের লড়াইয়ের বাইরে আলোচনায় ছিল অনেক কিছুই। এমনিতেই করোনাকালে জৈব সুরক্ষা নিয়ে বাড়তি কড়াকড়ি ছিল, ভারত–অস্ট্রেলিয়া সিরিজে তো সেসব কখনো কখনো মাত্রাতিরিক্তই মনে হয়েছে ভারতীয় দলের সদস্যদের। বিশেষ করে ব্রিসবেনে শেষ টেস্টের আগে কুইন্সল্যান্ড সরকারের বাড়ি কোয়ারেন্টিন–নির্দেশনা ভারতীয় দলের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার করেছিল। ব্যাপার এমন দাঁড়িয়েছিল যে টেস্টটা শেষ পর্যন্ত ভারত খেলবে কি না, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছিল। এর পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়াতে বিদেশি দল সিরিজ খেলতে গেলে যা হয়, সেই কথার লড়াই তো ছিলই। টিম পেইনের অতিকথনও অনেক সময় বিরক্তির কারণ হয়েছে। পেইনের সঙ্গে তো রীতিমতো কথার লড়াইয়েই মেতেছিলেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। তবে সবকিছুকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল সিডনি ও ব্রিসবেনে ভারতীয় ক্রিকেটারদের নিয়ে গ্যালারির দর্শকদের বর্ণবিদ্বেষী কটূক্তি।

তবে সিরিজে জৈব সুরক্ষার নামে কিছু জিনিস যে ভারতীয় দলকে ‘অপমান’ করার জন্যই করা হয়েছিল, সে ব্যাপারে রীতিমতো বোমাই ফাটিয়েছেন স্পিনার অশ্বিন। তিনি জানিয়েছেন, গোটা সিরিজেই রীতিমতো বৈষম্যের শিকার হয়েছেন তাঁরা। সিডনিতে দুই দলকে একই জৈব সুরক্ষা বলয়ের মধ্যে থাকতে হলেও একই লিফটে কখনো দুই দলের খেলোয়াড়দের চাপতে দেওয়া হয়নি। যে লিফটে স্মিথ-ওয়ার্নাররা উঠতেন, সেটায় চাপতে পারতেন না অশ্বিন-রাহানেরা।

বৈষম্যের শিকার হয়েই যেন অশ্বিনরা অস্ট্রেলিয়া সফরে আরও বেশি করে জ্বলে উঠেছিলেন।
ছবি: টুইটার

অশ্বিন সোজাসাপ্টাই বলেছেন, এমন বৈষম্যমূলক ব্যবহার হজম করা কষ্টকর, ‘আমরা যখন সিডনিতে পৌঁছালাম, তখন আমাদের যথারীতি কোয়ারেন্টিনে রাখা হলো অনেক কড়াকড়ি করে। তবে একটা বিচিত্র ঘটনা ঘটেছে সিডনিতে। সত্যি বলতে কি, অবিশ্বাস্যই বলা চলে। ভারত, অস্ট্রেলিয়া—দুই দলের খেলোয়াড়েরাই একই জৈব সুরক্ষা বলয়ের মধ্যে ছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও অস্ট্রেলিয়ার খেলোয়াড়েরা যখন লিফটের মধ্যে থাকত, ভারতের কাউকে সে লিফটে উঠতে দেওয়া হতো না!’

ভারতের ফিল্ডিং কোচ আর শ্রীধরের ইউটিউব চ্যানেলে এই অবিশ্বাস্য ঘটনা তুলে ধরেছেন অশ্বিন। জানিয়েছেন, এমন ব্যবহারে বেশ কষ্টই পেয়েছিলেন তাঁরা, ‘এসব মানা যায়? আমাদের অনেক খারাপ লেগেছে তখন। আমরা একই জৈব সুরক্ষা বলয়ের মধ্যে আছি। আমাদের হজম করতে অনেক কষ্ট হয়েছে ব্যাপারটা। আপনি লিফটে চাপছেন ঠিকই কিন্তু আরেকজনের সঙ্গে লিফটে চাপতে পারছেন না, যে কিনা আপনার মতোই একই জৈব সুরক্ষা বলয়ের বাসিন্দা।’

এ কারণেই কি না, সিডনিতে ভারতকে উদ্ধার করার চোয়ালবদ্ধ সংকল্প দেখা গিয়েছিল অশ্বিনদের মধ্যে। অশ্বিন আর হনুমা বিহারী মিলে একরকম হারতে থাকা টেস্টটা ড্র করে ফিরেছিলেন। সে টেস্টেও উইকেটের পেছনে থাকা অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়কের সঙ্গে অনেক কথার লড়াই হয়েছিল অশ্বিনের। সিডনিতে অশ্বিনকে আরও অনেক কটু কথা বলেছিলেন পেইন। এই জুটির ব্যাটিংয়ের সময় পেইন নিজের মেজাজ ধরে রাখতে পারেননি। তিনটি ক্যাচ ফেলা এই অধিনায়ক অশ্বিনকে খোঁচা মেরে বলেছিলেন, ‘ভারতে আমার বন্ধুসংখ্যা তোমার চেয়ে বেশি।’ সে ম্যাচে প্রকাশের অযোগ্য ভাষাও ব্যবহার করেছিলেন পেইন। সে জন্য অবশ্য ম্যাচ শেষে ক্ষমাও চাইতে হয়েছে তাঁকে।

শুধু লিফট-কাণ্ডই নয়, গোটা সিরিজে আরও অনেক ব্যাপারে বৈষম্যের কথা তুলে ধরেছেন ভারতীয়রা। সিডনিতে তৃতীয় টেস্ট খেলে ব্রিসবেনে ভারত উঠেছিল সোফিটেল নামের একটি পাঁচ তারকা হোটেলে। চতুর্থ টেস্টের ভেন্যু গ্যাবা থেকে চার কিলোমিটার দূরের হোটেলটাকে নাকি ভারতীয় ক্রিকেটারদের কাছে ঠিক ‘জেলখানা’ মনে হয়েছিল তখন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভারতীয় দলের এক সদস্য সেবার জানিয়েছিলেন, ‘বিছানা করতে হচ্ছে নিজেদের, পরিষ্কার করতে হচ্ছে টয়লেটও। খাবার এসেছে কাছের এক ভারতীয় রেস্তোরাঁ থেকে, যেগুলো আমাদের ফ্লোরে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। আমরা এক ফ্লোর থেকে অন্য ফ্লোরে যেতে পারিনি। পুরো হোটেল খালি পড়ে থাকলেও আমরা সুইমিংপুল ব্যবহার করতে পারিনি। হোটেলের সব ক্যাফে ও রেস্তোরাঁও বন্ধ ছিল।’

অশ্বিনের কথাটা বিতর্ককে আরও উসকে দেবে—এটা নিশ্চিত।