হনুমার নামের বানান ভুল করে কটাক্ষের শিকার ভারতের মন্ত্রী

ভারতের ক্রিকেটার হনুমা বিহারির নামের বানান ভুল করে বিপাকে দেশটির মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়ছবি: টুইটার

হনুমা বিহারি ‘ক্রিকেটকে খুন করেছেন’—টুইটারে এই মন্তব্য করেছিলেন সংগীতশিল্পী ও ভারতের কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকারের মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যথারীতি তাঁকে ধুয়ে দিয়েছেন অনেকে।

খেলা না বুঝে মন্ত্রীকে ফালতু মন্তব্য করতে নিষেধ করেছেন তাঁরা। কিন্তু বাবুল সুপ্রিয় এত সহজে হার মানবেন কেন! নিজের যুক্তির পক্ষে সাফাই গেয়ে পরে আরও একটি টুইটে বলেছেন, ‘হনুমা ‘‘সেট’’ হয়ে যাওয়ায় আমি শুধু বাজে বলগুলোই মারার কথা বলেছি।’

যাঁকে নিয়ে এত কথা, এত আলোচনা, সেই হনুমা বিহারিও শেষ পর্যন্ত চুপ করে থাকতে পারেননি। দেশের মন্ত্রীর মারাত্মক এক ভুল ধরিয়ে দিয়ে নেটিজেনদের মন কেড়ে নিয়েছেন সিডনি টেস্টের ‘নায়ক’।

ঘটনাটা খুলেই বলা যাক। সিডনি টেস্টে ভারতকে হার থেকে বাঁচিয়েছেন হনুমা। চোট নিয়ে ১৬১ বলে তাঁর ২৩ রানের চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞার ইনিংস খেলেন তিনি।

হনুমার সঙ্গে রবিচন্দ্র অশ্বিনের ২৫৯ বলে অবিচ্ছিন্ন ৬২ রানের ইনিংসের জন্য ড্র মেনে নেন অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক টিম পেইন। এরপর ক্রিকেট বিশ্ব হনুমার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলেও তাঁর কচ্ছপগতির ইনিংস ভালো লাগেনি বাবুল সুপ্রিয়র।

পরশু এক টুইটে বাবুল লেখেন, ‘৭ রান করতে ১০৯ বল! একে নির্মমতা বললেও কম বলা হয়। হনুমা বিহারি কেবল ভারতের ঐতিহাসিক এক জয়ের সুযোগই নষ্ট করছে না, সে ক্রিকেটকেও খুন করছে। জেতার পথে না হাঁটা, সেটা যতই সংকীর্ণ হোক না কেন, একধরনের অপরাধ।’

এরপর বাবুল সুপ্রিয়কে নিয়ে মজা লুটেছেন নেটিজেনরা। নানা শ্লেষাত্নক ও হাস্যরসাত্মক মন্তব্যের ঝড় উঠেছিল টুইটারে।

এরপর নিজের বক্তব্যের পক্ষে সাফাই গেয়ে আরও একটি টুইট করেন বাবুল, ‘হনুমা যদি বাজে বলগুলো বাউন্ডারিতে পাঠাত, তাহলে ভারত হয়তো ঐতিহাসিক এক জয় তুলে নিত। পন্ত যা করেছে সেটা কিন্তু অপ্রত্যাশিত ছিল। তাই আমি আবারও বলছি, হনুমাকে শুধু বাজে বলগুলো মারার কথাই বলেছি, কারণ সে তখন সেট ছিল।’

হনুমা–অশ্বিনের জুটির আগে ৮২ স্ট্রাইকরেটে ৯৭ রানের ইনিংস খেলেন পন্ত। হনুমার ইনিংসের গতির সঙ্গে তুলনায় পন্তের ইনিংস টেনেছেন বাবুল সুপ্রিয়।

কিন্তু ভারতের এই মন্ত্রী সম্ভবত ভুলে গেছেন হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটে হনুমার নড়াচড়া করতেই সমস্যা হচ্ছিল। বেশির ভাগ সময়ই দৌড়ে রান নেননি কিংবা নিতে পারেননি।

সে যাই হোক, বাবুল সুপ্রিয়র এই টুইট হনুমা বিহারির চোখ এড়িয়ে যাওয়ার কথা না। যেহেতু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে সংবাদমাধ্যমে এ নিয়ে প্রচুর হইচই হচ্ছে।

তো, বাবুলের প্রথম টুইটে হনুমা একটি মন্তব্য করেছেন, ‘হনুমা বিহারি’; মানে, ইংরেজিতে নিজের নামের বানানটা লিখে বাবুল সুপ্রিয়র ভুল ধরিয়ে দিয়েছেন ভারতের এই ক্রিকেটার।

বাবুল সুপ্রিয় বিহারি লিখেছেন ইংরেজি ‘বি’ শব্দ দিয়ে। কিন্তু হনুমার নামে ইংরেজি ‘ভি’ শব্দ দিয়ে বিহারি লেখা হয়।

দেশের মন্ত্রী যদি জাতীয় দলের খেলোয়াড়ের এমন অযৌক্তিক সমালোচনার সঙ্গে তাঁর নামের বানানও লিখতে ভুল করেন, সেটি কোনো অবস্থায়ই শোভন নয়।

নেটিজেনদের প্রতিক্রিয়া দেখে অন্তত এমনই মনে হবে। স্টারস্পোর্টস ভারতের ক্রিকেট বিশ্লেষক সারাং ভালেরাও হনুমার জবাবে একটি সরস জিআইএফ ছবি পোস্ট করেন, যার মুল কথা, আলোচনা এখানেই শেষ।

ভারতের এক ক্রিকেটপ্রেমীর মন্তব্য, ‘এটা কী ছিল?’ আরেকজনের মন্তব্য, ‘দারুণ ব্যাটিং হনুমা।’ ভারতীয় এই ক্রিকেটারের সমালোচনা করে প্রথম টুইটটি করার পরও মুণ্ডুপাত হয়েছে বাবুলের। একজন লিখেছেন, ‘ক্রিকেট নিয়ে আপনাকে মন্তব্য করতে হবে না। গানবাজনা আর রাজনীতি নিয়েই থাকুন।’

তাঁর বুদ্ধিবৃত্তিক সংকীর্ণতা নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। একজনের মন্তব্য, ‘টুইটার অ্যাকাউন্টে নামের পাশে ওই নীল ছাপলেই তাঁর বুদ্ধিবৃত্তি নিয়ে নিশ্চিন্ত হওয়া উচিত নয়।’