হারের ব্যবধানটাই শুধু কমিয়েছেন কোহলিরা

ভালো করেননি কোহলি।ছবি: এএফপি

ইনিংস বিরতিতেই কি ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণ হয়ে গিয়েছিল? যতই ভারতের ব্যাটিং লাইনআপ অন্যতম সেরা কিংবা উইকেট রানপ্রসবা হোক—৩৭৪ রান তাড়া করা কি এতই সহজ! সিডনিতে আজ ভারত সেটা পারেওনি। তবে বিরাট কোহলির দল হারের আগে হেরে বসেনি। ৩৭৫ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ৫০ ওভার ৮ উইকেটে করতে পেরেছে ৩০৮ রান। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে ৬৬ রানে হেরে সিরিজ শুরু হয়েছে ভারতের।

পর্বতপ্রমাণ রান তাড়া করা আদৌ সম্ভব হবে কি না—এই ভাবনা পাশে সরিয়ে ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা শুরু করেছিলেন ইতিবাচক ক্রিকেটে। মিচেল স্টার্কের এলোমেলো বোলিংয়ের সুযোগে প্রথম ওভারেই উঠেছে ২০ রান। প্রথম ৫ ওভারে ভারতের রান কোনো উইকেট না হারিয়ে ৫৩! দুর্দান্ত শুরু দেখে ‘কঠিন তবে হলেও হতে পারে’ এমন ভাবনায় যখন আশাবাদী হতে শুরু করেন ভারতীয় সমর্থকেরা, তখনই ছন্দপতন! জশ হ্যাজলউডের বলে পয়েন্টে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের ক্যাচ হয়ে ফেরেন ১৮ বলে ২২ রান করা মায়াঙ্ক আগারওয়াল। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে রান তাড়া করার ‘রাজা’ বিরাট কোহলি আভাস দিয়েছিলেন দারুণ কিছুর।

ব্যাটসম্যানদের পর বোলাররাও ভালোভাবেই দায়িত্ব সেরেছেন।
ছবি: আইপিএল

অতি আত্মবিশ্বাসী হয়েই ভুলটা করলেন কোহলি। হ্যাজলউডকে এগিয়ে এসে খেলতে চেয়েছিলেন ভারতীয় অধিনায়ককে। তাঁকে এগিয়ে আসতে দেখে অস্ট্রেলিয়ান পেসার ব্যাক অব লেংথ থেকে এমন উচ্চতায় বল তুললেন, পুলটা ঠিকঠাক হলো না তাঁর। অ্যারন ফিঞ্চের ক্যাচ হয়ে কোহলি ফিরলেন ২ চার ১ ছক্কায় ২১ বলে ২১ রান করে। এক বল পরেই হ্যাজলউডের শর্ট বলে শ্রেয়াস আয়ার (২) যেভাবে ফিরলেন, নিশ্চিত এই আউটের ভিডিও তিনি নিজেও দেখতে চাইবেন না! হতাশ করেছেন পাঁচে নামা লোকেশ রাহুলও (১২)। কোনো উইকেট না হারিয়ে ৫.১ ওভারে ৫৩ রান থেকে ১৩.৩ ওভারে ৪ উইকেটে ১০১—৫০ বলের মধ্যে এলোমেলো ভারতীয় টপ ও মিডল অর্ডার।

এরপরও যে ভারতের স্কোর ৩০০ পেরিয়েছে, তাতে সবচেয়ে বড় অবদান শিখর ধাওয়ান ও হার্দিক পান্ডিয়ার পঞ্চম উইকেট যোগ করা ১২৭ বলে ১২৮ রান। সদ্য শেষ হওয়া আইপিএলে দুর্দান্ত ব্যাটিং করা ধাওয়ান অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও ছন্দটা ধরে রেখেছেন। তবে তাঁর চেয়ে বেশি আকর্ষণীয় ছিল পান্ডিয়ার ব্যাটিং। স্বভাবসুলভ পাওয়ার হিটিংয়ে পান্ডিয়া অ্যাডাম জাম্পার বলে আউট হওয়ার আগে ৪ ছক্কা আর ৭ চারে করেছেন ৭৬ বলে ৯০ রান। অস্ট্রেলিয়ান লেগ স্পিনারের আরেক শিকার ধাওয়ানের রান ৮৬ বলে ৭৪। দুজন ফেরার পর ভারত যতক্ষণ খেলেছে শুধুই পরাজয়ের ব্যবধান কমাতে।

প্রথম স্পেলেই হ্যাজলউড মীমাংসা করে দিয়েছেন ম্যাচের।
ছবি: এএফপি

ভারতকে ইনিংস বিরতিতেই ম্যাচ থেকে ছিটকে দেওয়ার মূল কাজটা করেছেন অ্যারন ফিঞ্চ ও স্টিভ স্মিথ। দুজনের সেঞ্চুরিতেই অস্ট্রেলিয়া গড়ে ৬ উইকেটে ৩৭৪ রানের পাহাড়। ৪ ছক্কা ও ১১ চারে ৬৬ বলে ১০৫ রানের ‘সাইক্লোন’ বইয়ে দেন স্মিথ। তুলে নিয়েছেন ওয়ানডেতে নিজের দ্রুততম সেঞ্চুরি (৬২ বল)। ফিঞ্চ আউট হয়েছেন ১১৪ রান করে। দুজনের এই ইনিংস আর গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের ১৯ বলে ৪৫ রানের ‘টর্নেডো’য় ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডেতে নিজেদের সর্বোচ্চ স্কোর পেয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। ওয়ানডেতে এটি ভারতের বিপক্ষে কোনো দলের তৃতীয় সর্বোচ্চ স্কোর।

১৯৯২ বিশ্বকাপে ভারতের জার্সির আদলে বানানো নতুন জার্সিতে মাঠে নেমেছিলেন বিরাট কোহলিরা। মোট পাঁচ বোলার ব্যবহার করেন ভারতের অধিনায়ক বিরাট কোহলি। শুধু পেসার মোহাম্মদ শামি-ই ওভারপ্রতি গড়ে ৬-এর নিচে রান দিয়েছেন। উইকেট পেয়েছেন ৩টি। স্পিনার যুজবেন্দ্র চাহাল বেধড়ক মার খাওয়ার পরও কোহলি কেন তাঁকে ৪০তম ওভারের পর ২ ওভার বল করিয়েছেন, সেটি বড় প্রশ্ন। ১০ ওভারে ৮৯ রানে ১ উইকেট নেন এই লেগ স্পিনার। ওয়ানডেতে কোনো ভারতীয় স্পিনারের এক ইনিংসে এটাই সর্বোচ্চ রান দেওয়ার নজির। এ পথে চাহাল ছাপিয়ে গেছেন নিজের অতীত রেকর্ড।

সবচেয়ে বেশি উইকেট পেয়েছেন জাম্পা।
ছবি: এএফপি

অস্ট্রেলিয়ার এই রানপাহাড়ে কৃতিত্ব আছে ডেভিড ওয়ার্নারেরও। ২৭.৫ ওভারে ফিঞ্চের সঙ্গে ১৫৬ রানের জুটি গড়ে আউট হন এই ওপেনার। নিজে খেলেছেন ৭৬ বলে ৬৯ রানের ইনিংস। এমন দুর্দান্ত শুরু পাওয়ার পর অস্ট্রেলিয়াকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে দেননি স্মিথ। ৩৬ বলে ফিফটি তুলে নেওয়ার পর খুনে মেজাজ হারাননি তিনি। বেধড়ক পিটিয়েছেন ভারতের দুই স্পিনারকে। ৭৩ রানে ১ উইকেট নেন বুমরা। ওয়ানডেতে ২৮২ ডেলিভারির পর উইকেটের দেখা পেয়েছেন এই পেসার।
ওয়ানডেতে কখনো এত রান তাড়া করে জিততে পারেনি ভারত। সিডনিতেও তার ব্যতিক্রম হয়নি।