হাসারাঙ্গাকে হতাশ করে হাসিটা রঙিন বাংলাদেশের

প্রথম ওয়ানডেতে জয় বাংলাদেশের।ছবি: শামসুল হক

এই একটা ক্যাচ হাতছাড়া করাই না বাংলাদেশকে ভোগায়! এমনই মনে হচ্ছিল তখন।

বাংলাদেশের মাথাব্যথা হয়ে ওঠা বানিন্দু হাসারাঙ্গা ক্যাচ দিয়েছিলেন মিড উইকেটে। সাকিব আল হাসানের বলটা ব্যাটে লাগাতে পারেননি হাসারাঙ্গা, মিড উইকেটে ক্যাচ ওঠে। বাউন্ডারি সীমানা থেকে কিছুটা ভেতরের দিকে দৌড়ে এসে চেষ্টা করেছিলেন লিটন দাস, কিন্তু ক্যাচটা ধরতে পারেননি। হাসারাঙ্গার রান তখন ৪৬ বলে ৬৩! সাকিবের ওই বলের আগে শ্রীলঙ্কার জয়ের সমীকরণ ছিল—৫৮ বলে দরকার ৬৬ রান।

৪১তম ওভারের তৃতীয় বলে হাসারাঙ্গার এই ক্যাচ হাতছাড়া হওয়া বাংলাদেশের মাথাব্যথা আরও বাড়ানোরই কথা। সেই ৩৫তম ওভারের প্রথম বলে ১৪৯ রানে সপ্তম উইকেট হারিয়েছিল শ্রীলঙ্কা, এরপর যে উইকেটে গেঁড়ে বসেছিলেন হাসারাঙ্গা ও ইসুরু উদানা। এর মধ্যে শ্রীলঙ্কার রান ২০০-ও পেরিয়ে গিয়েছিল।

তবে অবশেষে স্বস্তি দিলেন শ্রীলঙ্কার সপ্তম উইকেটটি যিনি নিয়েছিলেন, সেই মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। ৪৪তম ওভারের শেষ বলে হাসারাঙ্গাকে আফিফের ক্যাচ বানান সাইফউদ্দিন। ৬০ বলে ৭৪ রান করেন তিনি। এরপর পরের ওভারের প্রথম বলে মোস্তাফিজ এসে উদানাকেও (২৩ বলে ২১) ফিরিয়ে দেন। বাংলাদেশের মাথাব্যথা সেখানেই বলতে গেলে শেষ। এরপর ৪৯তম ওভারের প্রথম বলে দুষ্মন্ত চামিরাকেও ফিরিয়ে আনুষ্ঠানিকতা শেষ করলেন মোস্তাফিজ। শ্রীলঙ্কা অলআউট ২২৪ রানে, বাংলাদেশ ম্যাচ জিতল ৩৩ রানে।

মিরাজ নিয়েছেন ৪ উইকেট।
ছবি: প্রথম আলো

৩৮.৫ থেকে ৪০.৩—এই ১০ বল যেন বাংলাদেশের চিন্তার ভাঁজ আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল। ৩৯তম ওভারের পঞ্চম বলের পর চোট পেয়ে মাঠ ছেড়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান। সেই ওভারের শেষ বলটি করেছেন মাহমুদউল্লাহ। মোস্তাফিজ ৬.৫ ওভারে ২৬ রানে নিয়েছিলেন ১ উইকেট। তখন মনে হচ্ছিল, মোস্তাফিজের ওই ৩.১ ওভারই ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দিতে পারে। এর মধ্যে ৪১তম ওভারে হাসারাঙ্গার ওভাবে ক্যাচ মিস হলো!

আটে নেমে যে শুরু থেকেই বাংলাদেশকে ভুগিয়ে যাচ্ছিলেন হাসারাঙ্গা! ১০২ রানে ৬ উইকেট হারানো শ্রীলঙ্কার হয়ে সপ্তম উইকেটে দাসুন শানাকার সঙ্গে ৪৭ রানের জুটি গড়েছিলেন হাসারাঙ্গা, এরপর অষ্টম উইকেটে উদানার সঙ্গে তো জুটিতে পঞ্চাশ রানই পেরিয়ে গেলেন। সে পথে তাঁর ১৯ ওয়ানডের ক্যারিয়ারে দ্বিতীয় ফিফটিও এল।

মোস্তাফিজ ৩ উইকেট পেয়েছেন।
ছবি: প্রথম আলো সা

বাংলাদেশের সমর্থকদের তখন আরও মাথাব্যথা ছিল এই যে ৪ উইকেট নিয়ে শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং লাইনআপে বড় ধাক্কা দেওয়া মিরাজের ১০ ওভার শেষ হয়ে গেছে। ২ মেডেনসহ ৩০ রান দিয়েছেন তিনি। সাকিবের ১০ ওভারও শেষ। ৪৪ রান দিয়ে ১ উইকেট তাঁর। এর মধ্যে মোস্তাফিজও মাঠের বাইরে চলে গিয়েছিলেন।

কিন্তু ৪২তম ওভারের মাঝামাঝিতে বাংলাদেশ একটা সুসংবাদ পায়। মোস্তাফিজ ফিরে আসেন মাঠে। এরপর তো ৪৪তম ওভারের শেষ বল আর পরের ওভারের প্রথম বলে সাইফউদ্দিন আর মোস্তাফিজ মিলে শ্রীলঙ্কাকে বড় দুই ধাক্কাই দেন।

এর আগে ৩০ রানের ওপেনিং জুটির পর লঙ্কানদের ওপর প্রথম আঘাত হানেন মেহেদী হাসান মিরাজ। খুবই সাধারণ একটা বল ছিল সেটি। বোলারের পাশ দিয়ে বের করে মারতে চেয়েছিলেন গুনাতিলকা। বলটি সোজা চলে যায় মিরাজের হাতে। নিজের বলে ক্যাচ নেন এ অফ স্পিনার।

সাকিবের ক্যারিয়ারে ১০০০ উইকেট হলো।
ছবি: প্রথম আলো

মোস্তাফিজ এরপর বোলিংয়ে এসেই তুলে নেন পাথুম নিশাঙ্কার উইকেট। বাঁহাতি পেসারের বলটি ছিল লেংথ বল। কিন্তু নিশাঙ্কা বলের বাউন্সটা বোঝেননি সেভাবে। পুল করতে গিয়ে ব্যাটের মাঝখানে নিতে পারেননি। মিড উইকেটে তাঁর ক্যাচটি ধরেছেন আফিফ হোসেন।

৪১ রানে ২ উইকেট হারানোর পর কিছুটা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেছিলেন কুশল পেরেরা আর কুশল মেন্ডিস। ৪১ রান যোগ করেন এ দুজন। কিন্তু জুটি ভেঙে ফেলেন সাকিব আল হাসান। দ্বিতীয় বাংলাদেশি বোলার হিসেবে স্বীকৃত ক্রিকেটে ১০০০ উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়লেন তিনি। এতে প্রথম নামটি বাঁহাতি স্পিনার, বর্তমানে নির্বাচক আবদুর রাজ্জাকের।

এরপর শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং আত্মসমর্পণ করে মিরাজের কাছে। একে একে ফেরেন কুশল পেরেরা, ধনঞ্জয়া ডি সিলভা আর আশেন বান্দারা। হাসারাঙ্গা-উদানার ৫৯ বলে ৬২ রানের জুটি সে খুশি মিলিয়ে দেওয়ার শঙ্কা জাগিয়েছিল বেশ ভালোভাবেই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে বাংলাদেশ ওড়াল বিজয়ডঙ্কা।