১ বল বাকি থাকতে উঠিয়ে নেওয়া হলো ব্যাটসম্যানকে, বিগ ব্যাশে বিতর্ক

বিগ ব্যাশের ম্যাচ আজ বিতর্ক ছড়িয়েছেছবি: টুইটার

টি-টোয়েন্টিতে ধুঁকতে থাকা ব্যাটসম্যানকে উঠিয়ে নেওয়ার ব্যাপারটি চালু করার কথা ওঠে প্রায়ই। সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে উঠে গিয়েছিলেন কাইরন পোলার্ড, যদিও পরে বলা হয়েছিল চোটের কথা। বিগ ব্যাশে সিডনি সিক্সার্স আজ যা করল, সেটিকে ‘স্বেচ্ছায় অবসর’ নেওয়ার খুব কাছাকাছি কিছু বলা যায়। যদিও সেটি নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক।

এসসিজিতে অ্যাডিলেড স্ট্রাইকার্সের বিপক্ষে চ্যালেঞ্জার ম্যাচে ১৬৭ রান তাড়ায় ব্যাটিং করছিল সিক্সার্স। শেষ ওভারে পরপর ২ উইকেট হারানোর পর শেষ ৪ বলে তাদের প্রয়োজন ছিল ১১ রান। এরপর নামেন ফিল্ডিংয়ের সময় হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটে পড়া জর্ডান সিল্ক। লেগ সাইডে বাউন্ডারি ছিল তুলনামূলক ছোট, ফলে পাঠানো হয় ডানহাতি সিল্ককে। মুখোমুখি প্রথম বলে সিঙ্গেল নিয়ে তিনি স্ট্রাইক ফিরিয়ে দেন সে সময় ৫৫ বলে ৮৬ রানে অপরাজিত থাকা হেইডেন কারকে।

হ্যারি কনওয়ের পঞ্চম বলে ছক্কা মেরে সিক্সার্সের আশা বাঁচিয়ে রাখেন কার, পরের বলে আসে ২ রান। ফলে শেষ বলে সিক্সার্সের প্রয়োজন ছিল ২ রান। তবে সিল্ক স্বাভাবিকভাবেই দৌড়াতে পারছিলেন না ঠিকঠাক। এমন সময়ই সিডনির হেড কোচ গ্রেগ শিপার্ট সংকেত দেন সিল্ককে উঠে আসতে।

সিল্কের বদলে পাঠানো হয় জে লেনটনকে। এমনিতে লেনটনের এ ম্যাচ খেলার কথা ছিল না। আদতে তিনি ছিলেন সিডনির কোচিং স্টাফে। ২০২০ সালে সর্বশেষ স্বীকৃত ম্যাচ খেলেছিলেন এ উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান। তবে জশ ফিলিপে কোভিড পজিটিভ হওয়ার পর ডেকে পাঠানো হয় তাঁকে। এরপর তো পড়ে গেলেন অভূতপূর্ব এক পরিস্থিতিতেই।

ক্রিকেটের আইনে অবশ্য সিল্কের উঠে যাওয়া নিয়ে কোনো বাধা নেই। চোট ছাড়াও যেকোনো সময় উঠে যেতে পারেন কোনো ব্যাটসম্যান। তবে এটি ক্রিকেটের ‘চেতনা’র সঙ্গে সাংঘর্ষিক কি না, সে প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ। ধারাভাষ্যে মার্ক ওয়াহ বলেছেন, ‘এটা ক্রিকেটের আইনেই পড়ে, তবে ক্রিকেটের চেতনার মধ্যে পড়ে কি না, নিশ্চিত নই।’

ইংল্যান্ড ক্রিকেটার লুক রাইট অবশ্য টুইটারে সিডনির এ সিদ্ধান্তকে বলেছেন ‘বেশ স্মার্ট’। আর সাবেক ক্রিকেটার জেমস টেইলর বলছেন, সিডনির এমন সিদ্ধান্ত বোধগম্য হচ্ছে তাঁর পুরোপুরিই! শেষ পর্যন্ত অবশ্য ম্যাচের ফলের ওপর সরাসরি প্রভাব রাখেনি সিল্কের ‘আহত অবসর’। কনওয়ের শেষ বলে চার মেরে সিডনিকে ফাইনালে নিয়ে গেছেন কার।

পিটার সিডল, ‘আপনি যে কাউকে তুলে নিতে পারেন, দিনের শেষে এটি করতে পারেন আপনি, এমন বড় কোনো ব্যাপার না এটি। অবশ্যই আম্পায়ারদের কাছে এ ব্যাপারটা তুলে ধরার সময় আমি হতাশ ছিলাম, তবে এটা শুধুই উঠে যাওয়ার ব্যাপার। মাঝে মাঝে ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ অংশে হতে পারে এটি। শেষ পর্যন্ত এটা খেলারই অংশ।’

অর্ধশতক হাঁকিয়েছেন হেইডেন কার
ছবি: টুইটার

সে সময় আম্পায়ারদের সঙ্গে কথা বলতে দেখলেও পরে কোনো আপত্তি জানাননি অ্যাডিলেড অধিনায়ক আর সিডনি অধিনায়ক ময়েজেস হেনরিকেস ক্রিকেটের চেতনার প্রসঙ্গের ব্যাপারটিই ধরতে পারছেন না এখানে, ‘আমি জানি না এটি কীভাবে (চেতনাবিরুদ্ধ)। এটা খেলার নিয়মের মধ্যে পড়ে। আমাদের একজন হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটে পড়েছে, যে এ লিগেরই অন্যতম ফিট একজন খেলোয়াড়। হয়তো এর সঙ্গে আমাদের (ঠাসা) সূচির সম্পর্ক আছে। ৮ দিনে পাঁচটি ফ্লাইট বদলাতে হয়েছে, টানা খেলেছি অনেকগুলো ম্যাচ।’

চোট থাকার পরও সিল্ককে কেন পাঠানো হলো, কেনই-বা পরে উঠিয়ে নেওয়া হলো, সেটিও ব্যাখ্যা করেছেন হেনরিকেস, ‘আমরা শেষ ওভারে বাউন্ডারির আশায় তাকে আটে পাঠিয়েছিলাম। যখনই সে শেষ দিকে আর স্ট্রাইক পেল না, আমাদের এমন একজন দরকার ছিল যে দৌড়াতে পারবে। ফলে তাকে উঠিয়ে নিয়ে দৌড়াতে পারে এমন একজনকে পাঠিয়েছি।’

অবশ্য লেনটনের কাছে পুরো ব্যাপারটিই অবিশ্বাস্য। ২৪ ঘণ্টা আগেও তিনি জানতেন না তাঁকে খেলতে হবে, ‘গতকালও আমি অনুশীলনে নিজের কিট আনিনি। আজই বলা হয়েছে, আমি খেলব। আমি হেইডেনকে বলেছিলাম, কোনো বল না খেলে শূন্য রানে অপরাজিত থাকা সেরা ইনিংস এটি আমার। আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম, হুট করে সিল্ককে উঠিয়ে নেওয়া হলো, আমি দৌড়াতে শুরু করলাম। পাগলাটে ব্যাপার, পুরো দিনটিই এমন ছিল।’

২৮ জানুয়ারি মেলবোর্নে হবে বিগ ব্যাশের ফাইনাল, সিডনির প্রতিপক্ষ সেখানে পার্থ স্কর্চার্স।