১০ উইকেট হাতে নিয়ে দিন শুরু, দিন শেষেও হাতে ১০ উইকেট

আউট হয়ে যাচ্ছেন মাসভাউরে।ছবি: আবুধাবি ক্রিকেট

জিম্বাবুয়ে তাহলে টেস্ট ক্রিকেটে চোখধাঁধানো একটা দিনই কাটিয়েছে!

আবুধাবিতে আফগানিস্তান-জিম্বাবুয়ের টেস্টটাতে কী হচ্ছে না হচ্ছে সেটা যদি অনুসরণ না করে থাকেন, তাহলে শিরোনাম দেখে কারও এমন ধারণা হওয়া অস্বাভাবিক নয়। ১০ উইকেট হাতে নিয়ে দিন শুরু করা জিম্বাবুয়ে যদি ১০ উইকেট হাতে রেখেই দিন শেষ করে, তার মানে তো আবুধাবিতে ব্যাটিং–শৌর্যের অনুপম প্রদর্শনী উপহার দিয়েছেন আজ জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানরা!

শিরোনামটা ঠিকই আছে, শুধু একটু ফাঁক থেকে গেছে কথাটায়। আজ টেস্টের তৃতীয় দিনের শুরুতে আর শেষে হাতে ১০ উইকেট আছে ঠিকই, দিনের শুরুতে আর শেষে ক্রিজে জিম্বাবুয়ের দুই ওপেনার প্রিন্স মাসভাউরে ও কেভিন কাসুজাই আছেন ঠিকই, শুধু ‘ফাঁক’ হয়ে থাকছে মধ্যে জিম্বাবুয়ের ১১ ব্যাটসম্যানের একবার ক্রিজে ঘুরে যাওয়ার কথা। জিম্বাবুয়ের একটা ইনিংস শেষ হয়ে যাওয়ার কথা।

বিনা উইকেটে ৫০ রান নিয়ে দিনের শুরু করেছিল প্রথম ইনিংস খেলতে নামা জিম্বাবুয়ে। আফগানিস্তানের প্রথম ইনিংসে ৫৪৫ রানের জবাবে এর মধ্যে ২৮৭ রানে অলআউট হয়েছে জিম্বাবুয়ে। ফলো অনের শিকার হয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে আবার ব্যাট করতে নেমেছে জিম্বাবুইয়ানরা, দিন শেষ করেছে দ্বিতীয় ইনিংসে বিনা উইকেটে ২৪ রান নিয়ে। এখনো আফগানদের দ্বিতীয়বার ব্যাটিং করাতে হলে আরও ২৩৪ রান করতে হবে জিম্বাবুয়েকে।

ওপেনার মাসভাউরের (৬৫) পর ছয়ে নামা সিকান্দার রাজা (৮৫) ফিফটি পেয়েছেন, আরেক ওপেনার কাসুজা ও তিনে নামা তারিসাই মুসাকান্দার ৪০ ছাড়ানো ইনিংস আর আটে নামা রেগিস চাকাভার ৩৩ রান...জিম্বাবুয়ে ইনিংসে রান বলতে এ-ই। বেশ কজন ব্যাটসম্যানই রান পেয়েছেন বটে। কিন্তু প্রতিপক্ষ যখন দ্বিতীয় দিনে ৪ উইকেটে ৫৪৫ রানের পাহাড় গড়ে ইনিংস ঘোষণা করে, তখন এ রান যথেষ্ট নয় মোটেও।

রশিদ খান নিয়েছেন ৪ উইকেট।
ছবি: আবুধাবি ক্রিকেট

জিম্বাবুয়ের কপাল পুড়েছে জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানদের শট নির্বাচনে ভুল আর অসময়ে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসা। এখনো ব্যাটিংয়ের জন্য ভালো পিচে আফগান স্পিনার রশিদ খান আর আমির হামজা বল ঘোরাতে পেরেছেন ঠিকই। রশিদ ৪ উইকেট পেয়েছেন ১৩৮ রানে, আমির ৩ উইকেট নিয়েছেন ৭৩ রানে। কিন্তু কাসুজা-মাসভাউরেদের ভুল শট খেলার মূল্য দিতে হলো জিম্বাবুয়েকে। দিনটা জিম্বাবুয়ের একেবারে খারাপ কাটেনি, তবে আফগানদের খুবই ভালো কেটেছে।

চা-বিরতির পর ৪৫ রানে ৪ উইকেট হারিয়েছে জিম্বাবুয়ে। ৪৪ রানে ৪ উইকেট হারিয়েছে মধ্যাহ্নবিরতি থেকে ফেরার পরপরই! মধ্যাহ্নবিরতির পর দ্বিতীয় ওভারে পেসার সায়েদ শিরজাদ দুই বলে ২ উইকেট নিয়েছেন। এই দুই ধসের আগে আর মাঝে জিম্বাবুয়েকে আফগানদের কাছাকাছি যাওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছেন মাসভেরে-রাজারা।

সিকান্দার রাজা শেষ পর্যন্ত লড়ে গেছেন।
ছবি: আবুধাবি ক্রিকেট

সকালের সেশনে এই শিরজাদের ৪ ওভারেই ২২ রান তুলে নিয়েছিলেন জিম্বাবুয়ের দুই ওপেনার, বিশেষ করে কাসুজা। কিন্তু রশিদ খান আক্রমণে আসার পর কাসুজার ধৈর্যচ্যুতি ঘটল। ব্যক্তিগত ৪১ রানের পথে ওপেনিং জুটিতে ৯১ রান এনে দিয়েছিলেন কাসুজা, কিন্তু এরপর রশিদ খানের স্টাম্পের অনেক বাইরের বলকে না ছেড়ে দিয়ে খেলতে গেলেন, হলেন ক্যাচ আউট! ২০১১ সালের আগস্টের পর টেস্টে প্রথম শতরানের উদ্বোধনী জুটির মুখ দেখতে দেখতেও দেখা হলো না জিম্বাবুয়ের।

তিনে নামা মুসাকান্দাকে সঙ্গে নিয়ে মাসভাউরে ইনিংস গড়ার কাজে আবার হাত দেন। রান পেলেও স্টাম্প ঢেকে ব্যাটিং করার দিকে মনোযোগ না দেওয়ার খেসারত দিতে হলো মাসভাউরেকে। ১৪৩ বলে ৫ চারে ৬৫ রানের ইনিংসের পর বোল্ড হলেন হামজার বলে। ২ উইকেটে ১৪৫ রান নিয়ে মধ্যাহ্নবিরতিতে যায় জিম্বাবুয়ে।

আরেক উইকেট আমির হামজার, ৩ উইকেট পেয়েছেন তিনি।
ছবি: আবুধাবি ক্রিকেট

ফিরেই ধস। শন উইলিয়ামস ও ওয়েসলি মাধেভেরেকে দুই বলে ফেরান শিরজাদ। মাধেভেরের টেস্ট ক্যারিয়ারের তিন ইনিংস এখনো রানের মুখ না দেখলেও আজকের ইনিংস নিয়ে দুবার ‘গোল্ডেন ডাক’ দেখে ফেলেছে। উইকেট পতনের মিছিলে যোগ দিলেন ক্যারিয়ার–সর্বোচ্চ ৪১ রান করা মুসাকান্দাও। রশিদ খানের শর্ট বলগুলোকে আক্রমণ করতে থাকা মুসাকান্দা রশিদের বলেই হলেন এলবিডব্লু। কিছুক্ষণ পর রায়ান বার্লও ফিরলেন হামজার বলে বোল্ড হয়ে। জিম্বাবুয়ের রান তখন ৬ উইকেটে ১৮৯।

রাজার তখন একলার লড়াই! রেগিস চাকাভার সঙ্গে সপ্তম উইকেট জুটিতে ৫৩ রান করেন, কিন্তু আর কারও কাছ থেকে তেমন সমর্থন পেলেন না রাজা। ব্যক্তিগত ৮৫ রানে শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে যখন আউট হলেন রাজা, দুই দিন বাকি থাকা এই টেস্টে জিম্বাবুয়ের হার এড়ানো প্রায় অসম্ভবই মনে হচ্ছে। দুই টেস্টের সিরিজের দ্বিতীয় এই টেস্টে জিতে আফগানিস্তানের সিরিজে সমতা ফেরানোর গল্পও প্রায় নিশ্চিত মনে হচ্ছে।