১০০ মাইল তুলতে মাদক নাও, এমন প্রস্তাব পেয়েছিলেন শোয়েব

একমাত্র শোয়েব আখতারই পেরেছেন ১০০ মাইলের সীমা পেরোতে।
ফাইল ছবি

শোয়েব আখতার, ব্রেট লি, শেন বন্ড, শন টেইট কিংবা হালের জফরা আর্চার—বল হাতে গতির ঝড় তোলা বোলারের কথা বললে নামগুলো শুরুর দিকেই আসবে। একটু পেছনে গেলে আসবে অ্যালান ডোনাল্ড কিংবা ওয়াকার ইউনিসের নাম। তা এত যে গতি তুলতেন, সেটির পেছনে রহস্য কী ছিল?

বোলিং অ্যাকশন, গায়ের জোর...অনেক ব্যাপারই আসবে। কিন্তু শোয়েব আখতারের ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে নাকি তাঁকে কেউ একজন অন্য আরেকটি ব্যাপারও ফাস্ট বোলিংয়ের ক্ষেত্রে লাগবে বলে জানিয়েছিলেন! সেটি কী? মাদক! ঘণ্টায় ১০০ মাইল গতি তুলতে গেলে মাদক নিতেই হবে, ক্যারিয়ারের শুরুতে তাঁকে এমনটাই কেউ একজন বলেছিলেন বলে জানালেন শোয়েব নিজেই। তবে সে প্রস্তাবে কখনো রাজি হননি এখনো বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগতির বলের রেকর্ডের মালিক শোয়েব।

যখন ক্রিকেট খেলতে শুরু করেছিলাম, তখন আমাকে একজন বলেছিল, ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার (আসলে ১০০ মাইল হবে) গতি তুলতে হলে আমাকে মাদক নিতে হবে। কিন্তু আমি সব সময়ই মাদক নেওয়ার ব্যাপারে না বলে এসেছি
শোয়েব আখতার, পাকিস্তানের সাবেক ফাস্ট বোলার

পাকিস্তানের সাবেক গতিতারকা হঠাৎ কথাগুলো বলার পেছনে অবশ্য কারণ আছে। তিনি আজ গিয়েছিলেন পাকিস্তানের মাদকবিরোধী বাহিনীর (এএনএফ) বার্ষিক মাদক ধ্বংসকরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হয়ে। সেখানেই ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে কোনো একজনের কাছ থেকে গতি তুলতে মাদক নেওয়ার প্রস্তাব পাওয়ার কথা জানান রাওয়ালপিন্ডি এক্সপ্রেস। পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম অ্যাসোসিয়েট প্রেস শোয়েবকে উদ্ধৃত করে লিখেছে, ‘যখন ক্রিকেট খেলতে শুরু করেছিলাম, তখন আমাকে একজন বলেছিল, ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার (আসলে ১০০ মাইল হবে) গতি তুলতে হলে আমাকে মাদক নিতে হবে। কিন্তু আমি সব সময়ই মাদক নেওয়ার ব্যাপারে না বলে এসেছি।’

মাদক ছাড়াই অবশ্য স্পিডোমিটারে ঘণ্টায় ১০০ মাইল গতি তুলেছেন শোয়েব। ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই তো গতিতারকা হিসেবে নাম কুড়িয়েছিলেন, ঘণ্টায় ১০০ মাইল গতি তুলে (১০০.০৪ মাইল) প্রথমবার বিশ্বের দ্রুততম বলের রেকর্ডটা শোয়েব নিজের করে নেন ২০০২ সালের ২৭ এপ্রিল। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে লাহোরে কিউই ব্যাটসম্যান ক্রেইগ ম্যাকমিলানকে ওই গতিতে বলটা করেন শোয়েব, হয়ে যান ক্রিকেটে ১০০ মাইল গতি তোলা প্রথম বোলার। তাঁর আগে ক্রিকেটে দ্রুততম বলের রেকর্ডটি ছিল অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি জেফ টমসনের (১৯৭৫ সালে ৯৯.৮ মাইল)।

মাদক ধ্বংসকরণ অনুষ্ঠানে শোয়েব আখতার।
ছবি: টুইটার

কিন্তু নিজের রেকর্ডটা পরের বছরই আবার ভেঙে দেন শোয়েব। ২০০৩ বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ ছিল সেটি। দক্ষিণ আফ্রিকার নিউল্যান্ডসে সেদিন নিজের করা দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলে শোয়েব গতি তোলেন ঘণ্টায় ১৬১.৩ কিলোমিটার। মাইলের হিসেবে ঘণ্টায় ১০০.২ মাইল! এখন পর্যন্ত ক্রিকেটে এই গতি ছাড়ানো আর কারও পক্ষে সম্ভব হয়নি।

তা নিজের সেই গর্ব কোনো মাদক ছাড়াই হয়েছে বলে দাবি তো করেছেনই, আজ এএনএফের সেই অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের একজন ক্রিকেটারের মাদকের কাছে ক্যারিয়ার হারানোর কথাও বলেছেন শোয়েব। কে সেই ক্রিকেটার, নাম বলেননি শোয়েব। তবে পাকিস্তানের জিওসুপার টিভি লিখেছে, ধারণা করা হচ্ছে পাকিস্তানের সাবেক ফাস্ট বোলার মোহাম্মদ আসিফের দিকে ইঙ্গিত করেছেন শোয়েব।

সে প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে ২০১০ সালে ইংল্যান্ডে পাকিস্তানের স্পট ফিক্সিং কেলেঙ্কারির প্রসঙ্গও টেনে আনেন শোয়েব। সেখানে স্পট ফিক্সিংয়ে জড়িয়ে যাওয়া মোহাম্মদ আমিরের প্রসঙ্গে শোয়েব বলেন, ‘পাকিস্তানি পেসার মোহাম্মদ আমিরকেও ইংল্যান্ড সফরের আগে সাবধান করা হয়েছিল, কিন্তু খারাপ সঙ্গের পাল্লায় পড়ে সে অমন কাজ করে বসেছে।’

মাদক এড়িয়ে এ সময়ের তরুণদের কীভাবে ফিট থাকতে হবে, অনুষ্ঠানে সে বিষয়েও কথা বলেছেন শোয়েব। তা করতে গিয়ে ৪৫ বছর বয়সী সাবেক ফাস্ট বোলার টেনে এনেছেন পাকিস্তানের ১৯৯২ বিশ্বকাপজয়ী কিংবদন্তি অধিনায়ক ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের কথা। ইমরান প্রতিদিন সকালে প্রাতর্ভ্রমণে বের হন, তরুণদেরও তা-ই করার পরামর্শ দিলেন শোয়েব।