১০০০ ছক্কার মালিক এখন গেইল
টি-টোয়েন্টিতে একজন ব্যাটসম্যানের রানসংখ্যা ১৩,৫৭২। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেক রানই করেছেন ছক্কা মেরে! বীরেন্দর শেবাগ তাই টুইটারে কথাটা বলেই ফেলেন, ‘টি-টোয়েন্টির ব্র্যাডম্যান। কোনোরকম সন্দেহ ছাড়াই (টি-টোয়েন্টিতে) সর্বকালের সেরা ক্রিস গেইল। বিনোদনের বাপ।’ আর কাল নিখুঁত ইয়র্কারে যিনি তাঁকে আবেগাপ্লুত করেন, সেই জফরা আর্চার টুইট, ‘এখনো তিনি বস’—ইউনিভার্সাল বস।
সত্যি, এই সংস্করণে গেইল কোনো সন্দেহ ছাড়াই ‘বস’। রাজস্থান রয়্যালসের বিপক্ষে কাল সেঞ্চুরি পেতে আর ১ রান দরকার ছিল। আর্চারের ইয়র্কার তাঁর রক্ষণ গলে স্টাম্প ভেঙে দিতেই গেইল নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি। সেঞ্চুরি না পাওয়ার হতাশায় ব্যাট ছুড়ে মারেন মিড উইকেটের দিকে। চলে যাওয়ার আগে হাত মিলিয়েছেন আর্চারের সঙ্গে। ওপাশ থেকে গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ব্যাট তুলে এনে তাঁর হাতে ধরিয়ে না দিলে গেইল হয়তো ব্যাট ছাড়াই ফিরতেন! আইপিএলের আচরণবিধি ভেঙেছেন ঠিকই কিন্তু মাঠে ওই ঘটনাটা দর্শক কিন্তু উপভোগ করেছেন, যেন এমন কিছু গেইলকেই মানায়!
৮ ছক্কা ও ৬ চারে ৬৩ বলে ৯৯ রান। গেইলের সহজাত ইনিংস। মজাটা অন্যখানে। টি-টোয়েন্টিতে সেঞ্চুরি সবার কাছে ভীষণ কাঙ্ক্ষিত হলেও গেইলের কাছে ডাল-ভাত মনে হওয়াটা অসম্ভব কিছু না। ২২ সেঞ্চুরি সে কথাই বলে। সেঞ্চুরিসংখ্যায় তাঁর ধারে-কাছেও কেউ নেই। কিন্তু এই ৪১ বছর বয়সেও গেইলের এখনো কী তীব্র রানক্ষুধা, তার প্রমাণ কাল আউট হওয়ার পর গেইলের অমন আবেগাপ্লুত হয়ে পড়া। এমনিতেই কিংস ইলেভেন ব্যাটসম্যানের জন্য কালকের ম্যাচটা একপর্যায়ে হয়ে পড়ে ‘বিশেষ কিছু’—৭ নম্বর ছক্কা মেরে টি-টোয়েন্টিতে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে গড়েছেন ১০০০তম ছক্কা মারার মাইলফলক। ভাবা যায়! রাজস্থানের কাছে পাঞ্জাবের ৭ উইকেটের ছাপিয়ে কাল আইপিএলের চুম্বক অংশ ছিলেন ক্রিস গেইল—১০০১ ছক্কা!
ছক্কা মারায় গেইলের ধারেকাছে আর কেউ নেই—এ কথাটা বুঝিয়ে দেবে একটি পরিসংখ্যান। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কাইরান পোলার্ডের ছক্কাসংখ্যা ৬৯০। তৃতীয় সর্বোচ্চ ব্রেন্ডন ম্যাককালাম (৪৮৫)। পার্থক্যটা খালি চোখেই পরিষ্কার। গেইল নিজেও খুশি, ‘এক হাজার ছক্কা—আরেকটি রেকর্ড? শুধু ধন্যবাদ দিতে চাই। এই ৪১ বছর বয়সেও ভালো মারতে পারায় ধন্যবাদ জানাতে চাই। বছরের পর বছর ধরে কঠোর পরিশ্রমের ফল পাচ্ছি। এখনো খেলছি, একই কাজ করে যাচ্ছি একইভাবে, কৃতজ্ঞ।’
২০০৬ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ঘরোয়া টি-টোয়েন্টিতে প্রথম ছক্কা হাঁকান গেইল। সাধারণত ছক্কার চেয়ে চারের সংখ্যা অনেক বেশি থাকে ব্যাটসম্যানদের। গেইলের ক্ষেত্রে হিসেবটা আলাদা। তিনি চারের চেয়ে ছক্কা মারতে বেশি ভালোবাসেন, তাই মাত্র ৪০টি ছক্কা পিছিয়ে আছেন চারের সংখ্যার (১০৪১) চেয়ে। গেইলকে ‘টি-টোয়েন্টির ফেরিওয়ালা’ বলাটাও যথার্থ। বরং আরেকটু বাড়িয়ে বলা যায় টি-টোয়েন্টিতে ছক্কা মারার ফেরিওয়ালা—আইপিএলে সর্বোচ্চ ৩৪৯ ছক্কা মেরেছেন, যেটি পৃথিবীর যে কোনো টি-টোয়েন্টি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে কোনো ব্যাটসম্যানের মারা সর্বোচ্চসংখ্যক ছক্কা। সিপিএল (১৬২), বিপিএল (১৩২) ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও (৬০) সর্বোচ্চ ছক্কা মারার রেকর্ড গেইলের।
টি-টোয়েন্টি ম্যাচে গেইলকে একবার ছক্কা মারার নেশায় পেয়ে বসলে বোলারদের রক্ষা নেই। ম্যাচে ন্যূনতম ১০টি করে ছক্কা মেরেছেন ১৮বার। অন্য কোনো ব্যাটসম্যান এমন তিনবারের বেশি করে দেখাতে পারেননি। কোনো শুধু একটি দলের (রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু) হয়ে সর্বোচ্চ ২৬৩ ছক্কা গেইলের। এমনকি এখন যে দলে খেলছেন—কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব—তাদেরই ভুগিয়েছেন সবচেয়ে বেশি। নির্দিষ্ট একটি দলের বিপক্ষে সর্বোচ্চ ৬১ ছক্কা মেরেছেন গেইল, সেটি তাঁর এখনকার দল পাঞ্জাব।