১৮ বছর ধরে ভারতকে কেন হারাতে পারে না বাংলাদেশ?
ফুটবলে বাংলাদেশ-ভারত একসময়ের দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দল। আগে পাশাপাশি হাঁটলেও জোর কদমে অনেক এগিয়ে গিয়েছে ভারত। এখনো বাংলাদেশ-ভারত মাঠে নামলে খেলোয়াড় থেকে শুরু করে সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনার কমতি থাকে না। কিন্তু একটা পরিসংখ্যানে চোখ রাখলে অবাক হতে হয়, ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশে শেষ জিতেছিল ১৮ বছর আগে।
শেষ জয়টি এসেছিল ২০০৩ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে। সেমিফাইনালে ভারতকে ২-১ গোলে হারিয়ে ফাইনালের টিকিট কেটেছিল বাংলাদেশ। রোকনুজ্জামান কাঞ্চনের গোলে ১-০ গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর ভারতকে সমতায় ফেরান আলভিতো রোনালদ। অতিরিক্ত সময়ের ৭ মিনিটে ‘গোল্ডেন গোল’ করেছিলেন বাংলাদেশের মিডফিল্ডার মতিউর মুন্না। এরপর ভারতের বিপক্ষে ৮টি ম্যাচ খেলে ৪ ড্রয়ের বিপরীতে ৪ হার। ২০০৩ সালে বাংলাদেশের র্যাঙ্কিং ছিল ১৫১ আর ভারত ১২৭। ১৮ বছর বাদে বাংলাদেশ ১৮৯ আর ভারত ১০৭।
প্রশ্নটি এসেই যায়, এই ১৮ বছরে ভারতকে কেন হারাতে পারল না বাংলাদেশ?
উত্তর খোঁজা হয়েছিল জাতীয় দলের সাবেক স্ট্রাইকার মোহাম্মদ আলফাজের কাছে। ভারতকে হারানো ম্যাচের সে দলে ছিলেন। এখন কোচিংয়ে যুক্ত হয়েছেন। বর্তমানে মোহামেডান স্পোর্টিং লিমিটেডের সহকারী এই কোচের আফসোস, তাঁদের পরবর্তী সময়ে হাল ধরার মতো ভালো একটা প্রজন্ম গড়ে ওঠেনি।
প্রায় এক যুগের বেশি সময় জাতীয় দলে খেলেছেন আলফাজ। হতাশা নিয়ে তিনি বলেন, ‘১৮ বছর ধরে ভারতকে হারাতে পারে না বাংলাদেশ। এটা অবাক লাগে। বর্তমান ভারতের চেয়ে আমাদের সময়ের ভারত অনেক বেশি শক্তিশালী ছিল। বাইচুং ভুটিয়ার মতো স্ট্রাইকার ছিল। হারলে ওর কাছেই হারতাম। তবু আমাদের সঙ্গে তাদের খেলা হলে ম্যাচটি ফিফটি-ফিফটি ধরা হতো। আসলে পরবর্তী সময়ে খুব ভালো প্রজন্ম গড়ে ওঠেনি, যারা ভারতকে হারিয়ে দেবে।’
আলফাজের মতো একই আফসোস তাঁর সতীর্থ আরমান মিয়ার। বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা মিডফিল্ডার বলা হয় আরমানকে। তাঁর মতে, সব সময় প্রকৃতিপ্রদত্ত খেলোয়াড় পাওয়া যাবে না, খেলোয়াড় তৈরির পরিকল্পনা থাকতে হবে। ফুটবল কর্মকর্তাদের এ ব্যাপারে একহাত নিলেন আরমান, ‘বাস্তবতা হলো, ভারত আমাদের চেয়ে অনেক এগিয়ে গিয়েছে। আমাদের উন্নতিটা হলো শুধু মুখে মুখে। কিন্তু খেলতে নামলে বোঝা যায় আমাদের অবস্থাটা কোথায়। খোঁজ নিয়ে দেখেন ভারতের কতগুলো একাডেমি আছে আর বাংলাদেশের অবস্থাটা আমরা সবাই জানি। পরিকল্পনা না থাকলে সামনে এগোনো যায় না। এখন বাংলাদেশের উচিত ভারতকে অনুসরণ করে খেলোয়াড় তৈরি করা।’
ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের ৩০টির ওপরে একাডেমি আছে আর বাফুফে বহু বছর ধরে চেষ্টা করেও সফলভাবে একটি একাডেমিই চালাতে পারছে না। বেশ কয়েকবার ব্যর্থ চেষ্টার পর আবার এলিট একাডেমি চালুর চেষ্টা করছে কমলাপুরে।
এই বছর জুলাইয়ে দোহায় বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ভারতের বিপক্ষে সর্বশেষ ম্যাচে ভারতের কাছে ২-০ গোলে হেরেছে বাংলাদেশ। এর আগের ৩ ম্যাচ ড্র। হঠাৎ করে কোনো ড্র বা জয়কে কোনো দলের মানদণ্ড বলতে নারাজ আরমান, ‘কোনো ম্যাচে ড্র করা বা জেতা একটা দলের মানদণ্ড নয়। একটা দলের ভালোমন্দ নির্ভর করে শিরোপা জেতার ওপর আর সেটা নির্ভর করে সামগ্রিক পরিকল্পনার ওপর। একটা টুর্নামেন্টে খেলতে যাওয়ার আগে কয়েকটা আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলিয়ে দিলাম। এতেই ভালো দল হওয়া গেলে অন্যান্য দেশও এই কাজই করত। পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলোয়াড় তৈরি করত না তারা।’
আলফাজ-আরমানদের পরবর্তী সময়ে আলো হয়ে এসেছিলেন স্ট্রাইকার জাহিদ হাসান এমেলি। ২০০৫ সাফ ফুটবলে সর্বশেষ ফাইনাল খেলেছে বাংলাদেশ। সে দলে ছিলেন এমিলি। গ্রুপ পর্বে ভারতের বিপক্ষে ১-১ গোলে ড্রয়ের ম্যাচে দুর্দান্ত গোল করেছিলেন। ২০১৫ সালে সর্বশেষ সাফ খেলা এমিলি তাঁদের দলটির সঙ্গে বর্তমান দলের পার্থক্য করলেন, ‘আগে ম্যাচ ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো খেলোয়াড় ছিল। ভালো মিডফিল্ডার ছিল, ভালো উইঙ্গার ছিল। কিন্তু এখন ম্যাচ ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো কেউ নেই।’
তবে বর্তমান প্রজন্মের প্রশংসাও করেছেন বাংলাদেশের হয়ে পাঁচটি সাফে অংশগ্রহণ করা এমেলি, ‘এই দলের খেলোয়াড়দের ফিটনেসের মান খুব ভালো। মাঠে তারা অনেক দৌড়াতে পারে। সর্বোচ্চটা দিয়ে খেলে। কিন্তু অভাবটা হলো ম্যাচ জেতানোর মতো খেলোয়াড় নেই।’