২৪৭ ওভারের টেস্টে ফল বের করতে পারবে বাংলাদেশ-পাকিস্তান?

ব্যাটিং ধস দেখছে বাংলাদেশছবি: শামসুল হক

শিরোনামের প্রশ্নের উত্তর, হ্যাঁ। আর কিছু না হোক ড্র তো হতেই পারে!

কিন্তু প্রশ্নের জিজ্ঞাসা অন্য, ঢাকা টেস্টে কোনো বিজয়ী খুঁজে বের করা সম্ভব কি?

প্রথম দিনে আলোকস্বল্পতা মাত্র ৫৭ ওভার খেলা হতে দিয়েছে। দ্বিতীয় দিন বৃষ্টি নামার আগে হয়েছে ৬.২ ওভার। তৃতীয় দিন কোনো বলই হয়নি। এমনকি দুই দলকে মাঠেও যেতে দেয়নি বৃষ্টি। এমন টেস্টে কোনো দলের জয়ের আশা করা একটু কঠিন বটে। কিন্তু ইতিহাস বলছে। এমন ম্যাচেও ফল বের করতে পারে যেকোনো দল।

এদিকে পাকিস্তান ৩০০ রানে ইনিংস ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশ ৩১ রান তুলতেই ৪ উইকেট হারিয়ে ম্যাচটাও জমিয়ে তুলেছে।

আউট হয়েছেন সাদমান
ছবি: প্রথম আলো

প্রথম তিন দিনে মাত্র ৬৩.২ ওভার খেলা হয়েছে। বৃষ্টি আর বাধা না দিলে আজ তিন সেশন মিলে ৮৬ ওভার খেলা হওয়ার কথা। আগামীকাল সাড়ে ৯টায় খেলা শুরু হলে আরও ৯৮ ওভার খেলা যাবে। অর্থাৎ ঢাকা টেস্টে ২৪৭ ওভারের মতো খেলা সম্ভব। আর এর মধ্যেই ম্যাচের মীমাংসা হওয়াও সম্ভব।

টেস্টে সবচেয়ে কম দৈর্ঘ্যের ম্যাচটি খেলেছে অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা। ১৯৩২ সালে মেলবোর্ন টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে অভিষেক হয়েছিল একজন জ্যাক ফিঙ্গলটনের। কিংবদন্তি এই ক্রিকেটারের অভিষেকের ম্যাচ বিখ্যাত হয়ে আছে অন্য কারণে।

সাজিদ খানের বল খেলতে পারছে না বাংলাদেশ
ছবি: প্রথম আলো

সে টেস্টে প্রথম ইনিংসে ২৩.২ ওভার খেলেই অলআউট হয়ে গিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। ৩৬ রানের জবাবে ইনিংস উদ্বোধন করতে নেমে ফিঙ্গলটন নিজেই করেছিলেন ৪০ রান। অস্ট্রেলিয়া তবু অলআউট হওয়ার আগে ৫৪.৩ ওভারে মাত্র ১৫৩ রান তুলেছিল। ডন ব্র্যাডম্যান ব্যাট করতেই নামেননি সেদিন। প্রথম দিনেই দ্বিতীয়বার ব্যাট করতে নেমে ৫ রানে ১ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা।

বৃষ্টি দ্বিতীয় দিন কোনো খেলা হতে দেয়নি। তৃতীয় দিন রোববার ছিল, তাই টেস্টেরও ‘ছুটি’ ছিল। ১৫ ফেব্রুয়ারি আবার ব্যাট করতে নেমেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। ৪৫ রানে গুটিয়ে যাওয়া দলটি ৩১.৩ ওভার খেলতে পেরেছিল। সব মিলিয়ে ১০৯.২ ওভারের সে ম্যাচে ইনিংস ও ৭৩ রানে জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া। তাই বলে বাংলাদেশও কিন্তু কম দৈর্ঘ্যের ম্যাচ কম দেখেনি। ঢাকা টেস্টের জন্য নির্ধারিত ২৪৭ ওভারের কম সময়েই দুবার টেস্ট শেষ হতে দেখেছে বাংলাদেশ, সেটাও মিরপুরেই! চলুন দেখে নেওয়া যাক, মিরপুরে হওয়া সবচেয়ে কম দৈর্ঘ্যের পাঁচ ম্যাচ।

বাংলাদেশ দুই ইনিংস মিলিয়ে ৭৫ ওভার খেলতে পেরেছিল
ফাইল ছবি

বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা, ২০১৮

ভয়ংকর এক উইকেট বানিয়েছিল বাংলাদেশ। দীর্ঘ বিরতির পর টেস্ট খেলতে নেমে আবদুর রাজ্জাক ৪ উইকেট নিয়েছেন। আরেক বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলামও নিয়েছিলেন ৪ উইকেট। মোস্তাফিজুর রহমানের জন্যও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল উইকেট, পেয়েছিলেন দুই উইকেট। ৬৫.৩ ওভার খেলেই অলআউট হয়েছিল শ্রীলঙ্কা। ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশ বুঝতে পেরেছিল, কত কঠিন উইকেট সেটি। ৪৫.৪ ওভারে গুটিয়ে যাওয়ার আগে মাত্র ১১০ রান করেছিল স্বাগতিক দল। দ্বিতীয় ইনিংসে ৭৩.৫ ওভার খেলে বাংলাদেশকে ৩৩৯ রানের লক্ষ্য দেয় শ্রীলঙ্কা। ২৯.৩ ওভারে ১২৩ রান তুলেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। মোট ২১৪.৩ ওভারের টেস্টে বাংলাদেশ হারে ২১৫ রানে।

বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে, ২০১৪

তুলনামূলক কঠিন উইকেটের ম্যাচ। প্রথম দিনেই অলআউট হয়ে যায় জিম্বাবুয়ে। ৭৫.৫ ওভারে প্রতিপক্ষকে গুটিয়ে দিয়ে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে ৯৮ ওভার খেলতে পেরেছিল। মিরপুরের উইকেটের চরিত্র দ্বিতীয় ইনিংসে টের পেয়েছে দুই দল। মাত্র ৩৫.৫ ওভার খেলতেই গুটিয়ে যায় জিম্বাবুয়ে। ৩৯ রানে ৮ উইকেট নেন তাইজুল। মাত্র ১০১ রানের লক্ষ্য ছুঁতেই কষ্ট হয়েছিল বাংলাদেশের। ৩৩.৩ ওভারের লক্ষ্য ছুঁতেই ৭ উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। তিন দিনে শেষ হওয়া ম্যাচে মোট খেলা হয়েছিল ২৪৩.১ ওভার।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ দুই ইনিংস মিলে ৯৬ ওভার খেলেছিল
ফাইল ছবি

বাংলাদেশ-ভারত, ২০০৭

বাংলাদেশের ব্যর্থতার গল্প এটি। ৪০০ রানের আগে ভারতের কোনো উইকেট ফেলতে পারেনি বাংলাদেশ। এর মধ্যেই ভারতের চার ব্যাটসম্যান সেঞ্চুরি পেয়েছেন। ১৫৩ ওভারে ৩ উইকেটে ৬১০ রান তুলে ইনিংস থামিয়ে দেয় ভারত। বাংলাদেশ দুই ইনিংস মিলেই খেলেছিল মাত্র ৮৪.৫ ওভার! ইনিংস ও ২৩৯ রানে জিতেছিল ভারত। ইনিংসের ব্যাপ্তি? ২৪৭.৫ ওভার।

বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ২০১৮

স্পিনবান্ধব উইকেটে দাপট দেখিয়েছিল সে টেস্টে বাংলাদেশ। ১৫৪ ওভার ব্যাট করে মাহমুদউল্লাহর শতকে ৫০৮ রান তুলেছিল বাংলাদেশ। জবাবে ১১১ রানে অলআউট হয়ে ফলোঅনে পড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দ্বিতীয় ইনিংসেও মাত্র ২১৩ রান করে ইনিংস ও ১৮৪ রানে হারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দুই ইনিংস মিলিয়ে ৯৬ ওভার খেলেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। অর্থাৎ ম্যাচের দৈর্ঘ্য ছিল কাঁটায় কাঁটায় ২৫০ ওভার।

বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা, ২০০৮

সুযোগ হাতছাড়া করার গল্প এটি। ১৯২ রানে অলআউট হয়েও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২২ রানের লিড পেয়েছিল বাংলাদেশ। রিভার্স সুইং ব্যবহার করে ২৭ রানে ৬ উইকেট পেয়েছিলেন শাহাদাত হোসেন। দ্বিতীয় ইনিংসেও আবার ব্যর্থতা। ১৮২ রান তুলতেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। ২০৫ রানের লক্ষ্যে ৫ উইকেট হাতে রেখে জিতেছিল সফরকারীরা। সে ম্যাচে মোট ২৫৬ ওভার খেলা হয়েছিল।