৩৬-এ শেষ না হওয়ার বুদ্ধি দিলেন টেন্ডুলকার

ভারতের ব্যাটসম্যানদের অসহায় মনে হয়েছিল গতকাল।ছবি: এএফপি

ঝকঝকে একটা দুপুর এভাবে ভারতের ক্রিকেটে অন্ধকার ডেকে আনবে, কে জানত? অ্যাডিলেডে আগের দিনই তৃপ্তির ঢেকুর তুলে ডিনার সেরেছিল ভারত। পরশুর সে তৃপ্তি গতকাল লাঞ্চের পর উবে গেল। ৩৬ রানে অলআউট হয়েছে ভারত। নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে ইনিংসে সবচেয়ে কম রানের রেকর্ড গড়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ শুরু করেছে বিরাট কোহলির দল।

স্বাভাবিকভাবেই চারদিকে চলছে সমালোচনা। দ্বিতীয় টেস্ট থেকে তো কোহলিও থাকবেন না, চোটে রোহিত শর্মাও নেই। এই ভারত তখন কী করবে, সে শঙ্কার কথাও শোনা যায়। এত শঙ্কা আর সমালোচনার ফাঁকে একটু ভিন্ন কিছু করলেন শচীন টেন্ডুলকার। ভারতীয় ব্যাটিং কিংবদন্তি উত্তরসূরিদের দিলেন অস্ট্রেলিয়ায় ব্যাটিংয়ের টিপস।

হ্যাজলউডের বাড়তি বাউন্স সামলাতে পারেননি কোহলিরা।
ছবি: এএফপি

মাত্র ১৮ বছর বয়সে অস্ট্রেলিয়া সফর করেছিলেন টেন্ডুলকার। সে সফরেই নিজের জাত চেনাতে ভুল হয়নি ভারতীয় ব্যাটিং কিংবদন্তির। বিরুদ্ধ কন্ডিশনে কীভাবে খেলতে হয়, এ ব্যাপারে তাঁর চেয়ে ভালো আর কে বলতে পারে? অ্যাডিলেড বিপর্যয়ের পর তাই উত্তরসূরিদের একটা বুদ্ধি দিয়েছেন টেন্ডুলকার। কীভাবে ফর্মে থাকা অস্ট্রেলিয়ান পেসারদের সামলাতে হয়, কীভাবে রান তুলে প্রতিপক্ষকে ব্যাকফুটে পাঠাতে হয়।

১৮ বছর বয়সে অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে টেন্ডুলকারকে মুখোমুখি হতে হয়েছিল মার্ভ হিউজ, ক্রেইগ ম্যাকডারমট, মাইক হুইটনি ও পল রাইফেলের। তাঁদের কারও বলের গতি ছিল ভয় জাগানো, আর যাঁদের সেখানে ঘাটতি ছিল, সেটা তাঁরা আগ্রাসন দিয়ে পুষিয়ে দিতেন। এমন বোলিং আক্রমণের মধ্যেই অস্ট্রেলিয়ায় নিজের তৃতীয় টেস্টেই ১৪৮ করেছিলেন টেন্ডুলকার। এরপর পার্থের গতিময় উইকেটে করেছেন ১১৪ রান।

সে সিরিজের কথা এখনো টেন্ডুলকারের স্মৃতিতে তাজা, ‘তাঁরা সবাই শীর্ষস্থানীয় বোলার ছিলেন। তাঁদের দেখেই বড় হয়েছি আমি। ১৯৮৭-৮৮ সালে বলবয় ছিলাম, আর ১৯৯১-৯২ সিরিজে আচমকা আমি তাঁদেরই খেলছি। আমি জানতাম একবার আমি প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়ালেই কেউ আর আমার বয়স নিয়ে ভাববে না।’ নিজের ইউটিউব চ্যানেলে বলেছেন টেন্ডুলকার।

পৃথ্বী শ ভালো শুরু এনে দিতে পারছেন না।
ছবি: এএফপি

সেই সিরিজ তাঁকে ব্যাটিংয়ের খুঁটিনাটি তো বটেই, মানসিক দিক থেকেও অনেক কিছু শিখিয়েছে বলে জানালেন টেন্ডুলকার, ‘তাঁরা (অস্ট্রেলিয়ার বোলার) সম্ভাব্য সবকিছুই করেছেন আমাকে আউট করার জন্য, আমাকে ড্রেসিংরুমে ফেরত পাঠানোর জন্য। কিন্তু আমি সে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে প্রস্তুত ছিলাম। ওই সফরটা খেলোয়াড় হিসেবে আমাকে বদলে দিয়েছে। শুধু টেকনিক্যালিই নয়, মানসিকভাবেও। বড় ম্যাচে কীভাবে খেলতে হয়, শিখিয়েছে।’

সেই শিক্ষাটা যে কাজে লেগেছে, অস্ট্রেলিয়ায় ২০ টেস্টে ৬ সেঞ্চুরিসহ ৫৩.২০ গড়ে টেন্ডুলকারের ১৮০৯ রানই তা বলে। সেই শিক্ষা থেকে উত্তরসূরিদের প্রতি ব্যাটিংয়ের একটা পরামর্শও দিয়েছেন ভারতের ব্যাটিং জিনিয়াস। সেটি কী? ‘মানুষ অস্ট্রেলিয়ার পিচে গতি আর খাড়া বাউন্সের কথা বলে। কিন্তু এমন গতি আর বাউন্সের অর্থ তো বোলারদের জন্যও গুড লেংথের জায়গা কমে যাওয়া। সে ক্ষেত্রে বোলারদের বল ফেলার আদর্শ জায়গা খুঁজে নেওয়াও অনেক কঠিন হয়ে যায়’—টেন্ডুলকারের বিশ্লেষণ।

অস্ট্রেলিয়ান পেসাররা ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের দুর্বলতা খুঁজে নিয়েছিলেন কাল।
ছবি: এএফপি

সে ক্ষেত্রে ব্যাটসম্যানদের প্রতি তাই আরও ইতিবাচক হওয়ার আহ্বান টেন্ডুলকারের, ‘ব্যাটসম্যান যদি ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে নামে, শুধু বল ঠেকানোর বদলে রান করার রাস্তা খোঁজে…তাহলে কিন্তু রান করার অনেক সুযোগই পাবে।’

শুধু কথায় নয়, খেলোয়াড়ি জীবনে নিজে কাজেও এটি প্রমাণ করে দেখিয়েছেন টেন্ডুলকার। অস্ট্রেলিয়ার পিচ আর অস্ট্রেলিয়ান বোলারদের গতি আর বাউন্স কীভাবে কাজে লাগিয়েছেন, সেটির বিশদ ব্যাখ্যাই দিয়েছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১০০ সেঞ্চুরিয়ান কিংবদন্তি, ‘প্রথম দিকে টপ অব দ্য বলে খেলতে চেষ্টা করতাম। কিন্তু যত সময় গেছে, আমার চিন্তা বদলেছে। ভাবলাম, কেন সব সময় বলের ওপরে ব্যাট রেখেই খেলতে হবে! থার্ডম্যান না থাকলে তো বলের নিচে ব্যাট নিয়ে গতিটাকে কাজে লাগানো যায়। যদি ওরা খাটো লেংথে একটু গড়বড় করে ফেলে, সে ক্ষেত্রে আমি স্লিপ বা গালিতে থাকা ফিল্ডারের মাথার ওপর দিয়ে মারব।’

এই ভাবনার একটা সুফলও বুঝিয়ে বললেন টেন্ডুলকার, ‘এসব ক্ষেত্রে আমি যদি টাইমিং ঠিকঠাক করতে না-ও পারি, বাড়তি গতি আর বাউন্সের কারণেই বল ফিল্ডারকে পার করে যাবে।’