৪ নয়, টি-টোয়েন্টিতে এক বোলারের জন্য ৫ ওভার

টি-টোয়েন্টিতে বোলারদের দাপট বাড়াতে নতুন ভাবনার কথা বলছেন ওয়ার্ন।ছবি: রয়টার্স
অস্ট্রেলিয়ান লেগ স্পিন কিংবদন্তির ভাবনাটা এই, এখন টি-টোয়েন্টি একজন বোলার সর্বোচ্চ চার ওভার করে বোলিং করার সুযোগ পান। সীমাটা বাড়িয়ে পাঁচ ওভার করে দিলে কেমন হয়?

বিশ্বকে বদলে দেওয়া কত ধারণাই তো হঠাৎ করেই কারও মাথায় চলে এসেছে। টি-টোয়েন্টিতেও তেমন একটা বদল দেখা যাবে কি? উত্তর ভবিষ্যৎ দেবে। ধারণাটার জন্ম ধারাভাষ্যকক্ষে। এসেছে শেন ওয়ার্নের মাথা থেকে।
কী ধারণা? ক্রিকেটটা দিনে দিনে ব্যাটসম্যানদের খেলা হয়ে যাচ্ছে, বোলাররা এখানে ‘সৎ ছেলে’—এমন একটা সমালোচনা তো অনেকদিন ধরেই শোনা যায়। বোলারদের দাপট এখানে আরও বাড়াতেই ওয়ার্ন ভাবনাটার কথা জানিয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ান লেগ স্পিন কিংবদন্তির ভাবনাটা এই, এখন টি-টোয়েন্টি একজন বোলার সর্বোচ্চ চার ওভার করে বোলিং করার সুযোগ পান। সীমাটা বাড়িয়ে পাঁচ ওভার করে দিলে কেমন হয়?


তাতে কী হবে? একজন বোলার পাঁচ ওভার করা মানে অধিনায়ক দলের সেরা বোলারদের আরও একটি করে বেশি ওভারের জন্য পাবেন, যেটি খেলায় বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে—এমনই ধারণা ওয়ার্নের। গতকাল ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে তিন টি-টোয়েন্টির সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচটিতে স্কাই স্পোর্টসে ধারাভাষ্য করার সময়ে কথাগুলো বলেছেন ওয়ার্ন। ‘চারজন বোলার, পাঁচ ওভার করে করবে—কেমন হবে সেটা? আমার কাছে তো মনে হয় ব্যাট-বলের মধ্যে আরও ভালো প্রতিদ্বন্দ্বীতা এনে দেবে সেটা। টি-টোয়েন্টি যেভাবে ব্যাটসম্যানদের অনুকূলে চলে যাচ্ছে, সেখানে আপনি নিশ্চয়ই দলের সেরা বোলারকে যত বেশি সম্ভব বোলিংয়ে আনতে চাইবেন’—ওয়ার্নের বিশ্লেষণ।

ওয়ার্ন জানালেন টি-টোয়েন্টিকে ঘিরে নতুন ভাবনা।
ছবি: এএফপি


অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি যখন কথাগুলো বলছিলেন, পিচে আগুন ঝরাচ্ছিলেন দুই ইংলিশ ফাস্ট বোলার জফরা আর্চার ও  মার্ক উড। শেষ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়াকে ১৫৭ রানে গুটিয়ে দিয়ে ম্যাচটা ৬ উইকেটে জিতে সিরিজও জয় নিশ্চিত করেছে ইংল্যান্ড, যে জয়ের ভিত্তি গড়ে দিয়েছে শুরুতে আর্চার-উডদের অমন বোলিংই। এই দুজনের বোলিং দেখে ওয়ার্নের মনে হচ্ছিল, ‘যখন আপনি এমন আগুনে বোলার পাবেন, আপনি ওদের আরেকটি ওভার বেশি আক্রমণে রাখতে চাইবেন। ওরা (চার ওভারের বদলে) পাঁচ ওভার করতে পারলে ব্যাপারটা আরও ভালো হতো না?’

প্রথমে চার বোলারের পাঁচ ওভারের কথা বলেছিলেন ওয়ার্ন, তবে সেটি এমনিতে ২০ ওভারের হিসাব দিতেই বলা আর কী! এখন যেমন একজন বোলার ৪ ওভার করতে পারেন, কিন্তু কতজন বল করতে পারবেন সেটির কোনো সীমা বেঁধে দেওয়া নেই। ওয়ার্নের ধারণাতেও ব্যাপারটা তেমনি হবে, ‘...আপনার আটজন বোলার থাকতে পারে, সেটা ব্যাপার নয়। কিন্তু আমি একজন বোলারকে পাঁচ ওভার বোলিং করতে দেখতে চাই। (ইংল্যান্ডের লেগ স্পিনার আদিল) রশিদ মাঝের দিকে পাঁচ ওভার করতে পারত এখানে, যেটা স্পিনের বিপক্ষে (অস্ট্রেলিয়ার) ব্যাটসম্যানদের ভালো পরীক্ষা নিত। আর পেসারদের শুরু আর শেষের দিকে কাজে লাগানো যেত।’

আপনার আটজন বোলার থাকতে পারে, সেটা ব্যাপার নয়। কিন্তু আমি একজন বোলারকে পাঁচ ওভার বোলিং করতে দেখতে চাই।
শেন ওয়ার্ন

এই ভাবনার আরেকটা সুবিধাও দেখছেন ওয়ার্ন। এখন টি-টোয়েন্টিতে যেমন ‘ব্যাটিংও পারেন বোলিং পারেন কিন্তু কোনোটিতে একেবারে সেরা নন’ এমন ক্রিকেটারদের দাপট দেখা যাচ্ছে—যাঁদের ক্রিকেটের ভাষায় অনেকে ‘বিটস অ্যান্ড পিসেস’ ক্রিকেটারও বলেন—এমন ক্রিকেটারের সংখ্যা কমে যাবে বলে মনে হচ্ছে ওয়ার্নের। ‘আমার মনে হচ্ছে এটা (বোলারের পাঁচ ওভারের নিয়ম) করলে বিটস অ্যান্ড পিসেস’-এর সংখ্যা কমে যাবে। দল গড়ার সময় আপনি আপনার সেরা বোলার আর সেরা ব্যাটসম্যানদেরই নিতে পারবেন’—ওয়ার্নের বিশ্লেষণ।

ধারাভাষ্যকক্ষে তাঁর পাশে থাকা সাবেক ইংল্যান্ড অধিনায়ক মাইকেল আথারটনেরও ওয়ার্নের ভাবনাটা বেশ পছন্দ হয়েছে, ‘দারুণ ভাবনা। ব্যাপারটা যখন ক্রিকেট, শেনের মাথা সব সময়ই দারুণ সব কল্পনার জায়গা।’ এই পদ্ধতিতে অলরাউন্ডারদের নিয়ে অবশ্য একটু শঙ্কা আছে আথারটনের, ‘এটার অসুবিধা কী হতে পারে, সেটি ভাবার চেষ্টা করছিলাম এতক্ষণ। এটা কি সত্যিকারের অলরাউন্ডারদের বিপক্ষে যাবে? তবে এটার সুবিধাগুলো এখনই বুঝতে পারছি। এতে চনমনে, দক্ষ খেলোয়াড়েরা ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেওয়ার সুযোগটা আরও বেশি পাবে।’
আইসিসি এ নিয়ে ভাববে কি না, কে জানে!