৫০তম জয়ের পর পঞ্চপাণ্ডবের লক্ষ্য 'লাকি সেভেন'

সাকিব আল হাসান, মাশরাফি বিন মুর্তজা, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ, তামিম ইকবাল: বাংলাদেশ ক্রিকেটের পঞ্চপাণ্ডব। ছবি: প্রথম আলো
সাকিব আল হাসান, মাশরাফি বিন মুর্তজা, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ, তামিম ইকবাল: বাংলাদেশ ক্রিকেটের পঞ্চপাণ্ডব। ছবি: প্রথম আলো
>

ক্রিকেটের তিন সংস্করণ মিলিয়ে কাল ৫০তম জয়ের দেখা পেয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের ‘পঞ্চপাণ্ডব’খ্যাত মাশরাফি, সাকিব, তামিম, মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ

মাশরাফি বিন মুর্তজা আগেই বলে দিয়েছেন, এটাই তাঁর শেষ বিশ্বকাপ। অর্থাৎ পরের বিশ্বকাপে একসঙ্গে দেখা যাবে না ‘পঞ্চপাণ্ডব’কে। বিষয়টি তাই আর সবার মতো পাঁচ ক্রিকেটারও জানেন—শেষটা রাঙাতে যা করার এই বিশ্বকাপেই করতে হবে!

তাঁদের শুরুটা এমন ছিল না। বাংলাদেশ তখন শুধু কেনিয়া ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জিতত। বাকি দলগুলোর বিপক্ষে মাঝেমধ্যে একটু ঝলক দেখানো, এই যা। মাশরাফি তখন চোটে জর্জর, খেলায় আজ ফিরছেন তো কাল মাঠের বাইরে। এর মধ্যে ২০০৫ থেকে ২০০৭—এ তিন বছরে ওঁরা চারজন এলেন, মুশফিক, সাকিব, তামিম ও মাহমুদউল্লাহ। ধীরে ধীরে তাঁরা নিজেদের প্রতিষ্ঠা করলেন সোনালি প্রজন্ম হিসেবে। গত ডিসেম্বরে এই প্রজন্ম একসঙ্গে খেলেছে নিজেদের শততম আন্তর্জাতিক ম্যাচ। আর কাল দেখা পেলেন ৫০তম জয়েরও।

টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে কাল একসঙ্গে ১০৩তম ম্যাচ খেললেন এই পাঁচ ক্রিকেটার। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৫ উইকেটের জয়টা তাঁদের জন্য এক মাইলফলক। ক্রিকেটের তিন সংস্করণ মিলিয়ে এটি ছিল পঞ্চপাণ্ডবের ৫০তম আন্তর্জাতিক জয়। আর এক ম্যাচ হারলে তাঁদের পরাজয়ের ‘ফিফটি’ও পূর্ণ হবে। সামনে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনাল ও বিশ্বকাপ ক্রিকেট ২০১৯ থাকায় বলতে পারেন, এমন মজা না করাই ভালো।

মজা নয়, সত্যি। ১০৩ ম্যাচে ৫০জয় আর ৪৯ হার। বাকি ৪ ম্যাচে ‘নো রেজাল্ট’। ২০০৭ সাল থেকে একসঙ্গে খেলছেন এই পাঁচ ক্রিকেটার। তাঁরা একসঙ্গে মাঠে থাকলে বাংলাদেশের জয়ের সম্ভাবনা বাড়ে। পরিসংখ্যান বলছে, তিন সংস্করণ মিলিয়ে এ পর্যন্ত ৫৫৯টি আন্তর্জাতিক ম্যাচে বাংলাদেশের জয়-পরাজয়ের অনুপাত ০.৪২৪ (১৫৯ জয়)। কিন্তু পঞ্চপাণ্ডব মাঠে থাকলে হার-জিতের অনুপাত বেড়ে দাঁড়ায় ১.০২০। তারপরও আছে কষ্ট, আক্ষেপ আর হতাশার গল্প।

ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে এর আগে ছয়টি টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলেছে বাংলাদেশ। আয়ারল্যান্ডে কাল মিলল সপ্তম ফাইনালের দেখা। পঞ্চপাণ্ডব আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে একসঙ্গে খেলা শুরুর পর এই সাতটি ফাইনালের দেখা পেল বাংলাদেশ। জেতা হয়নি একটিও। বয়সে যেহেতু মাশরাফি সবার বড় তাই কথাটা এভাবে বলা যায়—মাশরাফি চলে যাওয়ার আগে ওঁরা সবাই মিলে কি অন্তত একটা টুর্নামেন্টের শিরোপা জিততে পারবেন না? আশাবাদীরা বলবেন, ‘লাকি সেভেন’-এ হয়ে যেতে পারে। আর দুঃসাহসী আশাবাদীরা এক কাঠি সরেস হয়ে বলতে পারেন, ওটা না হলেও বিশ্বকাপ তো আছেই!

পঞ্চপাণ্ডবের পথচলা শুরু ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে, মূলত এই পাঁচজনের মধ্যে সর্বশেষ অভিষিক্ত মাহমুদউল্লাহর অভিষেকের পর থেকেই। আর সেখান থেকেই যেন একটু একটু করে বদলাতে শুরু করেছে এ দেশের ক্রিকেট। স্বাভাবিকভাবেই ওয়ানডে সংস্করণে তাঁরা একসঙ্গে বেশি ম্যাচ খেলেছেন। ৭৩ ম্যাচ একসঙ্গে খেলে পেয়েছেন ৩৭ জয়ের দেখা। টি-টোয়েন্টিতে ২৯ ম্যাচে ১২ জয় আর টেস্টে এই পাঁচ ক্রিকেটার মিলে মাত্র একটি ম্যাচই খেলেছেন। বলতে পারবেন, কোন ম্যাচ?

ঠিকই ধরেছেন। ২০০৯ ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ সফরে প্রথম টেস্ট। বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক হিসেবে সেটি ছিল মাশরাফির প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট। টেস্টের তৃতীয় দিনে পায়ে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়লেন মাশরাফি। পরে তো আর টেস্ট খেলতে পারলেন না। সাকিবের নেতৃত্বে জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। পঞ্চপাণ্ডবের একসঙ্গে ওটাই প্রথম ও শেষ টেস্ট, এ সংস্করণে প্রথম ও শেষ জয়ও।

এই পাঁচ ক্রিকেটারের ওপর প্রত্যাশার বিশাল চাপ বলেই বোধ হয় বারবার প্রশ্নটা চলে আসে, এঁরা চলে গেলে কীভাবে এগোবে দেশের ক্রিকেট? পঞ্চপাণ্ডবের জয়ের ফিফটির মাইলফলকটা আরেকবার সামনে নিয়ে আসছে প্রশ্নটি। এ ক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কা হতে পারে উদাহরণ। ৯৬ বিশ্বকাপজয়ী ডি সিলভা-রানাতুঙ্গাদের সেই সোনালি প্রজন্মের কারণেই দলে এসে মজবুত ভিত্তি পেয়েছিলেন মাহেলা জয়াবর্ধনে ও কুমার সাঙ্গাকারা। কিংবা ভারতের ‘ফ্যাব ফাইভ’—শচীন টেন্ডুলকার, ভিভিএস লক্ষণ, সৌরভ গাঙ্গুলী, রাহুল দ্রাবিড় ও বীরেন্দর শেবাগদের উদাহরণও টানা যায়। বিরাট কোহলি-রোহিত শর্মারা আজ তাঁদের গড়ে দেওয়া ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে।

লিটন-সৌম্য-সাব্বিররাও পারবেন তাঁদের অনুসরণ করতে?