৫২ বছর বয়সে চলে যাওয়া ওয়ার্নের জীবন ১০০ বছরের সমান

জীবনটা পরিপূর্ণরূপে উদ্‌যাপন করে গেছেন ওয়ার্নফাইল ছবি

৫২ বছর বয়সেই চলে গেলেন শেন ওয়ার্ন। জীবনকে উদ্‌যাপন কিংবা উপভোগের কতটুকু সময়ই-বা পেলেন! কিন্তু যা পেয়েছেন, সেটিই উদ্‌যাপন করে গেছেন সর্বকালের সেরা এই অস্ট্রেলীয় লেগ স্পিনার। নিজেকে কিংবদন্তির কাতারে নিয়ে গেছেন, প্রচুর উপার্জন করেছেন, সেই উপার্জনে জীবনের রূপ-রস-গন্ধের পুরোটাই উপভোগ করে গেছেন। অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট দলে তাঁর দীর্ঘদিনের সতীর্থ, ঘনিষ্ঠ বন্ধু মাইকেল ক্লার্ক বললেন, জীবন উদ্‌যাপনে ওয়ার্নের ধারেকাছেও কেউ নেই। সবার চেয়ে এ কাজ বরং একটু বেশিই ভালো করতেন কিংবদন্তি লেগ স্পিনার।

বন্ধুর হঠাৎ মৃত্যু কাঁদিয়েছে ক্লার্ককেও। ওয়ার্নের চলে যাওয়াটা এতটাই আকস্মিক যে বিষয়টি পুরোপুরি অনুধাবন করতে যে কারোই সময় লাগছে। ক্লার্কের তো আরও বেশি লেগেছে। থাইল্যান্ডের কোহ সামুইয়ে হার্ট অ্যাটাকে ওয়ার্নের মৃত্যুর দুদিন পর অস্ট্রেলিয়ার একটি রেডিও অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছেন ক্লার্ক। উদ্দেশ্য বন্ধুর স্মৃতিচারণা। সেখানেই অস্ট্রেলিয়াকে ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতানো অধিনায়ক বলেছেন, ওয়ার্ন তাঁকে শিখিয়েছিলেন, কীভাবে জীবনের উদ্‌যাপনটা পরিপূর্ণভাবে করা যায়। একই সঙ্গে সুন্দর মুহূর্তগুলোকে উপভোগের মন্ত্রটাও ক্লার্ক বন্ধু ওয়ার্নের কাছ থেকেই পেয়েছেন।

মাইকেল ক্লার্ক ওয়ার্নের জীবন উদ্‌যাপনের মন্ত্রটাকেই দারুণ মনে করেন
ফাইল ছবি

ওয়ার্নের এ বিষয়ই তিনি সামনে নিয়ে আসতে চান, ‘এমন একজন যে তার জীবনটা উপভোগ করেছে, আমি ওয়ার্নের এই দিকই তুলে ধরতে চাই। জীবনের ভালো মুহূর্তগুলো পরিপূর্ণভাবে উপভোগ করো—এটাই ছিল ওয়ার্নের মূলমন্ত্র। সে এটা দারুণভাবে করেছে। সেটি মাঠে হোক কিংবা মাঠের বাইরে। মাঠে সে জীবন উপভোগ করেছে দারুণ পারফরম্যান্স দিয়ে। মাঠের বাইরে সে জীবনের সুন্দর মুহূর্তগুলো উপভোগ করেছে। এটা সে অন্য যে কারও চেয়ে ভালোভাবে করেছে। তার জীবন থেকে আমরা যেটি নিতে পারি, সেটি হচ্ছে, জীবনকে উপভোগের মন্ত্র।’

শুক্রবার নিজের জনসংযোগ ব্যবস্থাপকের কাছ থেকে ওয়ার্নের মৃত্যুর খবরটি প্রথম জানতে পারেন ক্লার্ক। বলেছেন সে মুহূর্তের কথাও, ‘আমি আমার ম্যানেজারের কাছ থেকে খবরটা শুনি। বিশ্বাস করুন, আমার মনে হয়েছে, খুব প্রিয় কাউকে হারিয়ে ফেললাম। আমি এখনো বিষয়টি পুরোপুরি অনুধাবন করতে পারিনি। সময় লাগবে, তবে ব্যাপারটা এখনো আমার কাছে পুরোপুরি পরাবাস্তব ঠেকছে। এত তাড়াতাড়ি এমন কিছু ঘটে যেতে পারে! পুরোপুরি অবিশ্বাস্য একটা ব্যাপার।’

ওয়ার্নের ৫২ বছরের জীবনটা ১০০ বছরের সমান
ছবি: রয়টার্স

মাত্র ৫২ বছর বয়সে চলে যাওয়া ওয়ার্নের জীবনটা ক্লার্কের কাছে ‘১০০ বছর বাঁচা’ একটা জীবনের মতোই, ‘আমি মনে করি, আমরা যারা ওয়ার্নকে চিনি ও ভালোবাসি, তারা সবাই তার জীবনকেই আগামী দিনগুলোতে উদ্‌যাপন করব। ৫২ বছর বয়সী তার জীবনটা ছিল ১০০ বছরের সমান।’

অস্ট্রেলিয়ার হয়ে টেস্টে ৭০৮ উইকেট নিয়েছেন ওয়ার্ন। সব মিলিয়ে ১০০১টি উইকেট তাঁর নামের পাশে। খেলার মাঠে রাজত্ব করেছেন। খেলা ছাড়ার পর কখনো পাদপ্রদীপের আলো থেকে সরে যাননি। বিতর্কে জড়িয়েছেন, কোচিং, ধারাভাষ্য, কলাম লেখা—কর্মময়, অর্জনমুখর একটা জীবন।

ক্লার্ক ঠিকই বলেছেন, ৫২ বছর বেঁচেও ওয়ার্ন যেন ১০০ বছর কাটিয়ে গেছেন পৃথিবীতে।