'ফুটবলার' সাকিব, 'গবেষক' মুশফিক, 'মাছশিকারি' মোস্তাফিজ...

তাঁদের মূল পরিচয় ক্রিকেটার। প্রায় প্রত্যেকের গায়ে লেগে আছে ‘তারকা’ তকমা। ক্রিকেটের বাইরে সাকিব-মুশফিকদের আরও কিছু গুণ আছে, যেগুলো মুগ্ধ করে।

বাবা ফুটবল কোচ, ফুটবল যে মিশে আছে সাকিবের রক্তেই। ছবি: প্রথম আলো
বাবা ফুটবল কোচ, ফুটবল যে মিশে আছে সাকিবের রক্তেই। ছবি: প্রথম আলো


‘ফুটবলার’ সাকিব
ক্রিকেটের বাইরে যে খেলাটা সাকিব আল হাসানকে চুম্বকের মতো টানে, সেটি ফুটবল। বড় ক্রিকেটার হয়েছেন, ক্রিকেট দিয়ে নিজেকে দেশের সবচেয়ে বড় তারকা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন, তবে তাঁর রক্তে কিন্তু ফুটবল। বাবা মাশরুর রেজা ছিলেন পেশাদার ফুটবলার। জেলা-বিভাগীয় পর্যায়ে দাপটের সঙ্গে ফুটবল খেলেছেন। পরে যুক্ত হয়েছিলেন কোচিংয়ে। চেয়েছিলেন ছেলে সাকিবকেও ফুটবলার বানাবেন। ছেলের ফুটবল প্রতিভা যে বরাবরই মুগ্ধতা ছড়ানো। কিন্তু নিয়তি লিখে রেখেছিল অন্য চিত্রনাট্য, পেশাদার ফুটবলার না হয়ে সাকিব তাই হয়েছেন বড় ক্রিকেটার। কেন ফুটবলার না হয়ে ক্রিকেটার হওয়া, একবার এ প্রশ্নে বলেছিলেন, ‘মনে হয় আইসিসি ট্রফি জেতার পরই ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্নটা জাগে।’ ক্রিকেটের সঙ্গে বন্ধনটা পাকাপোক্ত হলেও ফুটবলের প্রতি টান আছে আগের মতোই। সুযোগ পেলে ফুটবলের বুট পরে নেমে যান খেলতে। বাঁ হাতি অলরাউন্ডারের পায়ের কারিকুরি দেখে বিস্ময়ভরা চোখে কত মানুষ যে বলেছেন, ‘সাকিব তো ফুটবলারও হতে পারতেন!’

পড়াশোনায় মনোযোগী, এখন পিএইচডিটাও করতে চাচ্ছেন মুশফিক। ছবি: প্রথম আলো
পড়াশোনায় মনোযোগী, এখন পিএইচডিটাও করতে চাচ্ছেন মুশফিক। ছবি: প্রথম আলো


গবেষক মুশফিক
বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সফল ব্যাটসম্যান। মিডল অর্ডারে বড় ভরসা মুশফিকুর রহিম শুধু ক্রিকেটেই ভালো নন, পড়াশোনাতেও অসাধারণ। ক্রিকেটীয় ব্যস্ততার কারণে বেশির ভাগ ক্রিকেটার পড়াশোনায় তেমন সময় দিতে পারেন না। মুশফিক সেখানে আশ্চর্য ব্যতিক্রম। পড়াশোনা শুধু করার জন্য করেননি, ভালো কিছু অর্জনের লক্ষ্যেই করেছেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন ‘প্রথম শ্রেণি’ পেয়ে। স্নাতকোত্তরেই থামলে পারতেন। মুশফিক সেঞ্চুরি করার পর যেমন ডাবল সেঞ্চুরির দিকে পা বাড়ান, তেমনি মাস্টার্সের পর শুরু করেছেন এমফিল। তাঁর গবেষণার বিষয় উপমহাদেশের ক্রিকেট ইতিহাস। এমফিলকে মুশফিক এখন রূপ দিয়েছেন পিএইচডিতে। সফলভাবে গবেষণাটা শেষ করাই তাঁর লক্ষ্য।

ছিপ ফেলে মাছ ধরতে ‘ওস্তাদ’ মোস্তাফিজ। ছবি: প্রথম আলো
ছিপ ফেলে মাছ ধরতে ‘ওস্তাদ’ মোস্তাফিজ। ছবি: প্রথম আলো


মাছশিকারি মোস্তাফিজ
গত বছর বড়শিতে ১২ কেজি পাঙাশ গেঁথে সাতক্ষীরায় বেশ হইচই ফেলে দিয়েছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান! অবসরে ক্রিকেটাররা নানাভাবে সময় কাটান। মোস্তাফিজের ভালো লাগে মাছ ধরে সময় কাটাতে। সময় পেলেই ছিপি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন মাছ শিকারে। ঢাকায় থাকলে দিয়াবাড়িতে বেশি যাওয়া হয়। তবে মাছ ধরাটা তাঁর জমে বেশি সাতক্ষীরায় নিজ এলাকায়। মাছ ধরতে সংগ্রহে আছে ১০-১৫টি ছিপ। দুটি এনেছেন ইংল্যান্ড থেকে। একটি ছিপির দাম তো প্রায় লাখ টাকা। মোস্তাফিজ অবশ্য ছিপের দামের সঙ্গে মাছ শিকারের সম্পর্ক খুঁজে পান না, ‘দামি ছিপ হলেই যে মাছ ভালো উঠবে, এটির কোনো নিশ্চয়তা নেই। ৫ হাজার টাকার ছিপেও ভালো মাছ উঠতে পারে। আমার ব্যক্তিগত কোনো পছন্দ নেই, ভাইদের পরামর্শেই আসলে ছিপ কেনা হয়।’

ব্যাটিং যখন করেন তখন মনে হয় তিনি শিল্পীই। রং-তুলি হাতেও লিটন কিন্তু দারুণ একজন শিল্পী।
ব্যাটিং যখন করেন তখন মনে হয় তিনি শিল্পীই। রং-তুলি হাতেও লিটন কিন্তু দারুণ একজন শিল্পী।


শিল্পী লিটন
ছন্দে থাকলে ২২ গজে তিনি তো ছবিই আঁকেন। পুরো মাঠটা তখন হয়ে যায় বিরাট ক্যানভাস। হাতের ব্যাট হয় তুলি। লিটন দাস যখন খেলেন, মুগ্ধ হয়ে শুধু তাকিয়ে দেখতে হয়। ক্রিকেটের বাইরেও যে তাঁর শিল্পীসত্তা আছে, কদিন আগে তাঁর স্ত্রীর সৌজন্যে সেটি দেখা গেল। দুদিন আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিটন ও তাঁর স্ত্রী সঞ্চিতা নিজেদের আঁকা ছবি পোস্ট করেছেন। সঞ্চিতার আগে থেকেই ছবি আঁকার অভ্যাস থাকলেও লিটন প্রথমবারের মতো ছবি এঁকেছেন।

গিটার বাজিয়ে মেহরাব জুনিয়ার গান গাইতে ভালোবাসেন। ছবি: প্রথম আলো
গিটার বাজিয়ে মেহরাব জুনিয়ার গান গাইতে ভালোবাসেন। ছবি: প্রথম আলো


গায়ক মেহরাব
মেহরাব হোসেন জুনিয়র কি তাহলে নীরবেই ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়ে ফেললেন? অমিত প্রতিভা নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আসা মেহরাবের পথ চলা খুব একটা দীর্ঘায়িত হয়নি। বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে দারুণ আলো ছড়ানো মেহরাব বাংলাদেশের হয়ে খেলেছেন ৭টি টেস্ট, ১৮টি ওয়ানডে ও ২টি-টোয়েন্টি। ৯ বছর ধরে তাঁর ক্রিকেট ক্যারিয়ার সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছিল ঘরোয়া ক্রিকেটে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর থেকে সপরিবার টরোন্টয় বাস করছেন মেহরাব। ক্রিকেটের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হলেও গান-গিটারের সঙ্গে সম্পর্কটা তাঁর এখনো আছে। সতীর্থদের মধ্যে তাঁর গানের গলা আর গিটার বাজানোর বিশেষ সুখ্যাতি আছে। কখনো কখনো টিভি অনুষ্ঠানে অনুরোধের ঢেঁকি গিলতে গাইতেও হয়েছে। মেহরাবের গাওয়া গান শুনে আপনাকে বলতেই হবে, ‘একটা অ্যালবাম বের করলেই পারেন!’