'বল নিয়ে নাও, নয়তো বলবে আমি অবসর নিচ্ছি'

মাঠের বাইরেও ধোনি-কোহলির সম্পর্কটা এমন। ফাইল ছবি
মাঠের বাইরেও ধোনি-কোহলির সম্পর্কটা এমন। ফাইল ছবি

এম এস ধোনি। মহেন্দ্র সিং-এর বদলে আপাতত এমএসের পূর্ণ অর্থ বুঝে নিন: ম্যান অব দ্য সিরিজ! ৩৮ বছর বয়সে পা রেখেও ধোনি যে সিরিজের সেরা খেলোয়াড় হলেন, সেটিও অস্ট্রেলিয়া সফরে। বিশ্বকাপ জেতানো সেই ২০১১ সালের পর ধোনি এই প্রথম কোনো দ্বিপাক্ষিক সিরিজে সেরা খেলোয়াড় হলেন এমন একসময়, যখন ধোনি কেন দলে—এই প্রশ্ন দিন দিন কেবলই জোরালো হচ্ছিল।

ধোনি আভাস দিয়ে রেখেছেন, ২০১৯ বিশ্বকাপ খেলেই অবসর নিতে চান। কিন্তু এতটা সময় ধোনিকে দেওয়ার পক্ষে ছিলেন না অনেকে। ছিলেন না লিখতে হচ্ছে। কারণ, সেই নিন্দুকেরা আপাতত লুকিয়েছেন। অস্ট্রেলিয়া সফর দিয়ে ধোনি যে আবারও নিজের পুরোনো চালের কেরামতি দেখিয়েছেন। এর মধ্যে ধোনির একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, যেটি তাঁর নিন্দুকদেরও পাল্টা জবাব হয়ে থাকল।

ভিডিওটি পোস্ট করেছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া ডটকমডটএইউ, তাদের টুইটার পেজে। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ভারত প্রথমবার ওয়ানডে সিরিজ জেতার পর ড্রেসিং রুমের উদযাপন নিয়ে বানানো হয় ভিডিওটি। সেখানেই উদযাপনের একপর্যায়ে ধোনি হাতে থাকা ম্যাচ বলটি ব্যাটিং কোচ সঞ্জয় বাঙ্গারকে দিয়ে দেন। সে সময় তাঁকে বলতে দেখা যায়, ‘বল নিয়ে নাও, নয়তো বলবে আমি অবসর নিচ্ছি।’

গত বছরের জুলাইয়ে ভারতের ইংল্যান্ড সফরে ঘটা ঘটনাকেই ধোনি ব্যঙ্গ করেছেন। সেবার তৃতীয় ওয়ানডেতে হেরে যাওয়ার পর ধোনি ম্যাচের বলটি চেয়ে রাখেন আম্পায়ারদের কাছ থেকে। ম্যাচ হারার পরও বলটা স্মারক হিসেবে রেখে দিচ্ছেন, তবে কি ধোনি...। দুই-দুইয়ে পাঁচ মিলিয়ে গুঞ্জন রটে গেল, ধোনি অবসর নিচ্ছেন।

২-১-এ জেতা এই সিরিজের বল ধোনির রেখে দেওয়াই উচিত। ভারতীয়দের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রান (১৯৩) করেছেন। তিন ম্যাচেই কমপক্ষে ফিফটি, দুটিতে অপরাজিত বলে গড়ও ১৯৩! প্রথম ম্যাচ হারার পরও শেষ দুই ম্যাচে ভারতকে জিতিয়েছেন ধোনিই। দুই ম্যাচেই সেরা খেলোয়াড় হয়েছিলেন। যোগ্য হিসেবেই সিরিজ–সেরার পুরস্কারও জিতেছেন। এই ফর্ম নিয়েই অস্ট্রেলিয়ার পর এবার নিউজিল্যান্ডে উড়াল দিচ্ছেন ধোনি। ২৩ জানুয়ারি শুরু হচ্ছে ৫ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ।

অস্ট্রেলিয়া সফরের আগের ২৯ ওয়ানডেতে ধোনির ফিফটি ছিল মোটে একটি। এ কারণেই দিন দিন দলে তাঁর অবস্থান নিয়ে নিন্দুকের গলার জোর বাড়ছিল। এই সময়ে ধোনি সবচেয়ে বেশি সমর্থন পেয়েছেন খোদ অধিনায়ক বিরাট কোহলির। ক্রিকেটে অনেক সময়ই সাবেক ও বর্তমান অধিনায়কের ঠিক বনিবনা হয় না। ধোনি-কোহলির সম্পর্কটা একেবারেই উল্টো। ধোনি নিজে থেকে কোহলির জন্য সিংহাসনের পথ পরিষ্কার করেছেন, জায়গা আঁকড়ে ধরে রাখেননি। কোহলিও সেই সম্মান ধোনিকে প্রতি মুহূর্তে দিয়ে আসছেন। ম্যাচে এমন অনেক মুহূর্ত দেখা যায়, কার্যত ধোনির নির্দেশেই সব হয়। কোহলি ওই ঠান্ডা মাথার জাদু জানেন বলে নিজে চুপটি করে থাকেন।

ধোনির দুঃসময়ে কোহলির এই পাশে দাঁড়ানোকে স্যালুট করেছেন সৌরভ গাঙ্গুলী, ‌‘খুব কম অধিনায়কই তাদের খেলোয়াড়ের জন্য এতটা করে। গত ১৫-১৬ মাসে যে কোহলি ধোনিকে বাতিল করে দেয়নি, এর জন্য আমি ওর প্রশংসা করি। এই আস্থাটাই একটি বড় দলকে তৈরি করে। বড় খেলোয়াড়দের মধ্যে পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা ও আত্মত্যাগটা না থাকলে কোনো দলই বড় দল হয়ে উঠতে পারে না।’