'বাংলাদেশের না জেতার কারণ নেই'

বাংলাদেশের ব্যাটিং-শক্তি নিয়ে আশাবাদী আমিনুল ইসলাম। প্রথম আলো ফাইল ছবি
বাংলাদেশের ব্যাটিং-শক্তি নিয়ে আশাবাদী আমিনুল ইসলাম। প্রথম আলো ফাইল ছবি

চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ভারতের বিপক্ষে সেমিফাইনাল নিয়ে ক্রিকেটপ্রেমীদের অধীর অপেক্ষা। এজবাস্টনের ঐতিহাসিক মাঠে প্রতিযোগিতার বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে বাংলাদেশ কেমন করবে, এ নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ গ্রুপ ম্যাচে দুর্দান্ত জয়ের পর মাশরাফি-সাকিবদের নিয়ে আশাবাদী গোটা দেশ। জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম মনে করেন, ঠান্ডা মাথায়, পরিকল্পিত ক্রিকেট খেললে এই ম্যাচে বাংলাদেশের না জেতার কোনো কারণ নেই। ভারত খুবই শক্তিশালী দল হলেও বাংলাদেশও একেবারে অনভিজ্ঞ দল নয়।

দুবাই থেকে প্রথম আলোর সঙ্গে এক আলাপচারিতায় বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ানের কণ্ঠে আত্মবিশ্বাসই ঝরেছে, ‘দুই দলের তুলনায় বাংলাদেশ খুব একটা পিছিয়ে নেই। বরং আমাদের মাশরাফি-সাকিব-মাহমুদউল্লাহ-মুশফিক ও তামিমের মতো অভিজ্ঞ পারফরমার আছে। আমার তো মনে হয়, ঠান্ডা মাথায় খেললে, পরিকল্পনা করে সেটির সুন্দরভাবে বাস্তবায়িত হলে এই ম্যাচ বাংলাদেশের না জেতার কোনো কারণ নেই। ভারত শক্তিশালী দল, সন্দেহ নেই। তবে বাংলাদেশও কিন্তু অনভিজ্ঞ নয়।’

আমিনুলের কাছে এই ম্যাচে বাংলাদেশের শক্তি দুটি জায়গায়—ব্যাটিং-গভীরতা ও বৈচিত্র্যময় পেস আক্রমণ, ‘আমাদের ব্যাটিং-গভীরতা আছে। ব্যাটিং ক্লিক করলে আমরা বড় স্কোর করতে পারি। বড় সংগ্রহও তাড়া করতে পারি। মাশরাফি, রুবেল, তাসকিন, মোস্তাফিজের পেস আক্রমণ বৈচিত্র্যপূর্ণ। এরা একেকজন একেক ধরনের পেসার। এই দুই জায়গার শক্তি এখন কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারলে সাফল্য আসবে।’

ভারতীয় দলের শক্তিমত্তা সম্পর্কে কোনো সন্দেহই নেই আমিনুলের, ‘ভারত অনেক শক্তিশালী দল। ব্যাটিংটা ওদের দুর্দান্ত। কোহলি দুর্দান্ত ব্যাটসম্যান। নিজের দিনে সে যেকোনো প্রতিপক্ষকেই রীতিমতো “খুন” করে ফেলতে পারে। ওদের ভালো স্পিনার আছে, হার্দিক পান্ডিয়ার মতো অলরাউন্ডার আছে। উমেশ-ভুবনেশ্বরের মতো ফাস্ট বোলার আছে। ম্যাচটা বাংলাদেশের জন্য যে বিরাট পরীক্ষা, তাতে কোনো সন্দেহই নেই। তবে বাংলাদেশ যখন সেমিফাইনালেই খেলছে, তখন পেছনে ফিরে তাকানোর কোনো সুযোগ নেই। আমাদের যা আছে, সেটি নিয়েই কোহলিদের বিপক্ষে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।’

ভারতের বিপক্ষে ভালো ফিল্ডিংয়ের বিকল্প নেই বলেই মনে করেন বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশের প্রথম অধিনায়ক, ‘ভারতের মতো দল, যাদের ব্যাটিং লাইনআপ অসম্ভব শক্তিশালী, তাদের বিপক্ষে ফিল্ডিং-দুর্বলতা খুব ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে। কোহলি কিংবা রোহিত অথবা শিখর ধাওয়ানের মতো ব্যাটসম্যানদের কোনোভাবেই সুযোগ দেওয়া চলবে না।’

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে যে দলটি জিতেছে, সেটিকেই সেমিফাইনালে চাইছেন আমিনুল, ‘নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে একটা কম্বিনেশন পাওয়া গেছে। যদিও এই দলেও সাকিবের পাশাপাশি জেনুইন একজন স্পিনারের অভাব ছিল; কিন্তু মোসাদ্দেক সেই অভাব দুর্দান্তভাবে পূরণ করেছে। আপাতত আমি সেমিফাইনালে এই দলটিকেই খেলানোর পক্ষে।’

ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে আমিনুলের কোনো অভিযোগ নেই। সাব্বিরকেও তিনি তিন নম্বর জায়গাতেই খেলানোর পক্ষে, ‘সাব্বিরের পেছনে একটা বিনিয়োগ আছে। আমাদের সবার উচিত সাব্বিরকে সময় ও সুযোগ দেওয়া। কে জানে সাব্বিরই হয়তো এই ম্যাচে ভালো খেলে দেবে। মাহমুদউল্লাহ পরের দিকেই থাক। সে নিচের দিকেই ভালো খেলে। ভালো ফিনিশার হয়ে ওঠে। ওর জায়গা পরিবর্তন কিংবা ওকে ওপরে তুলে নেওয়ার কোনো কারণ আমি দেখি না।’

ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে সাকিব আল হাসানই বাংলাদেশের তুরুপের তাস হয়ে উঠতে পারেন বলে মত আমিনুলের। সাকিবের প্রতি তাঁর এই আস্থার কারণ—অভিজ্ঞতা, ‘সাকিব বড় মঞ্চের ক্রিকেটার। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের পর এটি নিয়ে কারওরই সন্দেহ থাকা উচিত নয়। সে আগেও অনেকবার এটি প্রমাণ করেছে। বাংলাদেশের এই দলে ভারতীয় ক্রিকেটারদের বিপক্ষে খেলার অভিজ্ঞতা সাকিবেরই সবচেয়ে বেশি। সে আইপিএলে অনেক দিন ধরেই খেলছে। বোলিংয়ে সে ধার হারিয়েছে, এটা ঠিক নয়। সে উইকেট পাচ্ছে না কোনো কারণে। এটা ঠিক হয়ে যাবে। আমি আশা করি নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সে ব্যাটিংটা যেভাবে করেছে, ভারতের বিপক্ষে সেমিফাইনালেও সেভাবেই করবে। মাথা ঠান্ডা রাখবে।’

বাংলাদেশকে বিশ্বকাপে নিয়ে গেছেন। প্রথম টেস্টে ছিলেন সেরা পারফরমার। দলকে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনালে দেখে দারুণ উচ্ছ্বসিত আমিনুল, ‘এটা স্বপ্ন পূরণ হওয়ার মতো ব্যাপার। এমন স্বপ্ন আমরা দেখেছি সব সময়ই। তবে আমি মনে করি, সময় এখন স্বপ্নকে এগিয়ে নেওয়ার। আমি নিশ্চিত, মাশরাফি-সাকিব-তামিম-মুশফিক-মাহমুদউল্লাহরা সেমিফাইনালে খেলেই সন্তুষ্ট থাকতে চাইবে না। ওরা স্বপ্ন দেখে, স্বপ্নকে এগিয়ে নেওয়ার সামর্থ্যও রাখে।’