আপনি জানতেও পারবেন না সম্পর্কটা কী থেকে কী হয়ে গেল!’
খুব বেশি দিন নয়, দুজনে একসঙ্গে কাজ করেছেন মাত্র আড়াই মৌসুম। এ আড়াই মৌসুমে জোসে মরিনিও আর পল পগবার সম্পর্কের দুই পিঠই দেখেছে বিশ্ব। মধুর চেয়ে সম্পর্কটাতে অম্লের ভাগই বেশি।
ওল্ড ট্রাফোর্ডে মরিনিও আর পগবা পা রেখেছেন একই সময়ে। চেলসিতে নিজের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষে মরিনিও ইউনাইটেডের দায়িত্ব নেন ২০১৬ সালে। সে বছরই তৎকালীন বিশ্ব রেকর্ড দলবদল ফিতে জুভেন্টাস থেকে ওল্ড ট্রাফোর্ডে ফেরেন ইউনাইটেডের একাডেমিতে বেড়ে ওঠা পগবা।
এরপর? শুরুতে সুন্দর, শেষটায় কুৎসিত একটা সম্পর্কের গল্প লেখা হলো। দলের মূল খেলোয়াড়দের এক-দুজনের সঙ্গে এমন দারুণ শুরু সম্পর্কে টানাপোড়েনের গল্প মরিনিওর কোচিং ক্যারিয়ারে অবশ্য নতুন কিছু নয়। রিয়াল মাদ্রিদে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো-ইকার ক্যাসিয়াস থেকে শুরু, এরপর চেলসিতে দ্বিতীয় দফায়ও একই রকম নাটক দেখা গেছে হ্যাজার্ড-ফ্র্যাব্রেগাসদের ঘিরে, ইউনাইটেডেও ব্যতিক্রম হলো না। পগবা, লুক শ, আন্থনি মার্শিয়াল...দিন যত বেড়েছে, তালিকা তত লম্বা হয়েছে।
এ নিয়ে এত দিন পর মুখ খুলেছেন পগবা, মরিনিওকে এক হাত নিয়েছেন। ফরাসি মিডফিল্ডারের চোখে, যে খেলোয়াড়ের সঙ্গে মরিনিওর ঝামেলা হয়, তাঁকে একদিক থেকে প্রায় ‘অস্তিত্বহীন’ই মনে করাতে থাকেন মরিনিও। পর্তুগিজ কোচ নাকি এমন ভাব করেন যেন দলে ওই খেলোয়াড় নেই বলেই মনে হয়!
ইউনাইটেডে দুজনের প্রথম মৌসুমে মরিনিও-পগবার সম্পর্কটা ছিল দারুণ। পর্তুগিজ কোচের সঙ্গে পগবার দারুণ রসায়নে ২০১৬–১৭ মৌসুমে কয়েকটি টুর্নামেন্টের শিরোপামঞ্চে ইউনাইটেডেরও ছিল সরব উপস্থিতি। জেতে লিগ কাপ ও ইউরোপা লিগ। কিন্তু পরের মৌসুম থেকেই সম্পর্কের অবনতি। এর মধ্যে ২০১৭-১৮ মৌসুমে ‘ঘুমপাড়ানি’ ফুটবল উপহার দিয়েও তবু লিগে দ্বিতীয় হয়েছিল ইউনাইটেড, কিন্তু তৃতীয় মৌসুমটা আর ওল্ড ট্রাফোর্ডে শেষ করতে পারেননি মরিনিও। দল ধুঁকতে থাকায় ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে তাঁকে বরখাস্ত করে ইউনাইটেড।
প্রথম মৌসুমে ভালো করার পুরস্কার হিসেবেই হয়তো ২০১৭–১৮ মৌসুমের শুরুতেই পগবাকে ইউনাইটেডের অধিনায়ক করে দেন মরিনিও। শুরুটা ভালোই করেছিলেন পগবা। প্রথম কয়েক সপ্তাহে গোল করা আর গোল করানো, দুই ভূমিকাতেই দারুণ সফল ছিলেন ফরাসি মিডফিল্ডার। কিন্তু এরপরই খারাপ হতে থাকে তাঁর পারফরম্যান্স। মরিনিও হঠাৎ করেই কেড়ে নেন তাঁর নেতৃত্ব। দুজনের সম্পর্কেও শুরু হয়ে যায় টানাপোড়েন।
কোচ আর দলের সবচেয়ে বড় তারকার বিরোধের প্রভাব হয়তো পড়েছিল দলের পারফরম্যান্সে। সেবার কিছুই জিততে পারেনি মরিনিওর ইউনাইটেড। তাই তাঁর বরখাস্ত হওয়াটাই ছিল নিয়তি। বরখাস্ত হওয়ার আগে শুধু পগবার সঙ্গেই নয়, ২০১৭–১৮ মৌসুমে দলের আরও কয়েকজন সিনিয়র খেলোয়াড়ের সঙ্গেও সম্পর্কের অবনতি হয় মরিনিওর।
সম্প্রতি সেই সময়ের কথা মনে করে মরিনিওকে এক হাত নিয়েছেন পগবা। মরিনিও সব সময়ই খেলোয়াড়দের সঙ্গে এমন বিরোধিতামূলক আচরণ করেন বলে মনে করেন তিনি। স্কাই স্পোর্টসে মরিনিওর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নিয়ে পগবা বলেছেন, ‘একসময় মরিনিওর সঙ্গে আমার খুব ভালো সম্পর্ক ছিল। সবাই দেখেছে সেটা। কিন্তু সম্পর্কটা একদিন ভালো ছিল, তো পরের দিনই আপনি জানতেও পারবেন না কী থেকে কীভাবে কী হয়ে গেল!’
মরিনিও হঠাৎ করে এভাবে বদলে কেন গেলেন আর পগবার সঙ্গে ভালো সম্পর্কটা নষ্টই–বা কেন করলেন? এই প্রশ্নের উত্তর জানা নেই পগবারও, ‘মরিনিওর ক্ষেত্রে এই ব্যাপারটাই আমার অদ্ভুত লাগে। কেন এমনটা হয়েছিল, সেই ব্যাখ্যা আমি দিতে পারব না। কারণ, আমি নিজেই তো জানি না আসলে কী ঘটেছিল!’
পগবা এখনো ইউনাইটেডেই আছেন। মরিনিও যাওয়ার পর ইউনাইটেডের কোচ হয়ে এসেছেন উলে গুনার সুলশার। ইউনাইটেডের জার্সিতে কিংবদন্তিতুল্য অনেক কীর্তি গড়া সাবেক নরওয়েজিয়ান স্ট্রাইকারের অধীনেও অবশ্য শুরুর একাদশে খুব একটা নিয়মিত নন পগবা। তাই বলে সুলশারের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হয়ে যায়নি তাঁর।
সুলশার-মরিনিওর পার্থক্যটা পগবা তুলে ধরেছেন এভাবে, ‘উলের সঙ্গে এখন যেটা হচ্ছে, সেটা ভিন্ন ব্যাপার। কারণ, তিনি খেলোয়াড়দের বিরুদ্ধে চলে যান না। হতে পারে উলে কোনো খেলোয়াড়কে দলে নিচ্ছেন না। কিন্তু তাই বলে তিনি এমন পরিস্থিতি তৈরি করেন না যে ওই খেলোয়াড়ের মনে হবে সে আর ইউনাইটেডেই নেই। মরিনিও আর ওলের মধ্যে পার্থক্য এটাই।’
পগবা এমন সময়ে পুরোনো স্মৃতি সামনে নিয়ে এলেন, যখন ইউনাইটেডের কাছে প্রিমিয়ার লিগে সর্বশেষ ম্যাচে ৩–১ গোলে হেরে চাপে পড়ে গেছেন মরিনিও আর তাঁর বর্তমান দল টটেনহাম। লিগ শেষ হতে আর মাত্র ৭ ম্যাচ বাকি আছে। মরিনিওর টটেনহাম লিগের পয়েন্ট তালিকার ৪ নম্বরে থাকা ওয়েস্ট হামের চেয়ে ৬ পয়েন্ট পিছিয়ে আছে ৭ নম্বরে। সেরা চারে থেকে আগামী মৌসুমের চ্যাম্পিয়নস লিগে জায়গা করে নেওয়ার লড়াইয়ে টটেনহামকে বড় ধাক্কাই দিয়ে গেছে হারটা। ওই ম্যাচ শেষে ইউনাইটেড কোচ সুলশারের সঙ্গে কথার লড়াইয়েও নেমেছেন মরিনিও।
সেই ম্যাচে টটেনহামের দক্ষিণ কোরিয়ান ফরোয়ার্ড সন হিউং–মিনের বিরুদ্ধে ‘অভিনয়’ করার অভিযোগ তুলে সুলশার বলেছিলেন, তাঁর নিজের ছেলে এমন করলে তাকে তিনি খাবারই দিতেন না। এর উত্তর দিয়ে মরিনিও বলেছিলেন, তিনি খুবই হতাশ হয়েছেন যে সুলশার এমন একটি কথা বলেছেন। একই সঙ্গে তিনি সুলশারকে এই বলে খোঁচা দিয়েছেন যে সনের ভাগ্য ভালো যে তাঁর বাবা সুলশারের চেয়ে ভালো।
এ প্রসঙ্গে পগবা বলেছেন, ‘আমি নিশ্চিত যে মরিনিও এমন কিছু বলেছেন, যেটা নিয়ে মানুষ কথা বলতে বাধ্য হচ্ছে। তিনি এমন কাজই করেন। তিনি যেটা করতে চেয়েছেন, এখন তো সেটা হচ্ছেই। উলেও এটা জানেন। আমরা আসলে পুরো ব্যাপারটাতে মজাই পাচ্ছি। মরিনিও কেমন আর কী চান, সেটাও আমরা জানি।’