আমরা ঢাকায় হারতে যাচ্ছি না

বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম তাঁর কাছে পয়মন্ত। এই মাঠে পেয়েছেন অনেক সাফল্য। ১৩ ও ১৭ নভেম্বর বাংলাদেশের সঙ্গে দুটি প্রীতি ম্যাচও খালি হাতে ফেরাবে না বলে তাঁর বিশ্বাস। করোনা অতিমারিতে নেপাল দলের সঙ্গে নেই সুইডিশ কোচ ইয়োহান কলিন। প্রীতি ম্যাচ দুটিতে নেপাল দলের প্রধান কোচের দায়িত্ব পড়েছে দেশটির ফুটবলের অনেক সাফল্যের নায়ক ও নেপাল নারী দলের কোচ বাল গোপাল মহারজনের কাঁধে। কাঠমান্ডু থেকে ফোনে প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নেপালের কোচ কথা বলেছেন বাংলাদেশে আসন্ন সফর ও অন্যান্য প্রসঙ্গে।

প্রশ্ন :

আপনার দলের প্রস্তুতি কেমন চলছে?

বাল গোপাল মহারজন: ভালো নয়। কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে সমস্যা অনেক। অন্য সময় হলে পুরোদমে প্রস্তুতি নিয়েই হয়তো ঢাকায় যেতাম। এখন প্রস্তুতিতে অনেক ঘাটতি।

নেপালের কোচ বাল গোপাল মহারজন।
ফাইল ছবি

প্রশ্ন :

ঘাটতিটা কী ধরনের?

বাল গোপাল: প্রস্তুতির সময় খুবই কম। কাঠমান্ডুতে এক সপ্তাহ অনুশীলন করে ভাড়া করা বিমানে ঢাকায় যাচ্ছি ৫ নভেম্বর (আজ)। সেখানে ৫ দিন সময় পাব অনুশীলনের জন্য। এই স্বল্প প্রস্তুতিতে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা কঠিন। এমনিতে কোভিডের কারণে আট-নয় মাস বসে থেকে ফুটবলারদের ফিটনেস নেই। যতটা সম্ভব চেষ্টা করছি তা ফিরিয়ে আনার। তার ওপর নিয়মিত পাঁচজন খেলোয়াড় করোনায় আক্রান্ত (কাল জানা গেছে নতুন করে আরও দুজন আক্রান্ত হয়েছেন)।

নেপাল-বাংলাদেশ ম্যাচে এখন আর ফেবারিট থাকে না। ম্যাচের দিন যারা ভালো খেলবে এবং সুযোগ কাজে লাগাতে পারবে যে দল, জয় তাদেরই। কাজেই সুযোগ তৈরি করে কাজে লাগানোই আসল। আমরা সে চেষ্টাই করব।

প্রশ্ন :

মূল একাদশের কয়জন কোভিডে আক্রান্ত?

বাল গোপাল: তিনজন। ওদের ভিন্ন একটি হোটেলে রাখা হয়েছে। মূল দলটিও কাঠমান্ডুর হোটেলে আছে।

প্রশ্ন :

কোভিডে আক্রান্ত বাদে বাকি সব নিয়মিত খেলোয়াড়দের তো পাচ্ছেন...

বাল গোপাল: না, সেখানেও সমস্যা। নেপালের বাইরে বিদেশি লিগে খেলা আমাদের ফুটবলার তিনজন। কিন্তু চোটের কারণে পাচ্ছি না ইন্দোনেশিয়ার লিগের দল পারসিজা জাকার্তায় খেলা রহিত চাঁদকে। ভারতের আই লিগে মিনার্ভা পাঞ্জাবের হয়ে খেলা গোলকিপার ও নিয়মিত অধিনায়ক কিরন চেমজং এবং কলকাতা মোহামেডানে খেলা অভিষেক রাইজালকে অবশ্য পাচ্ছি। ক্যাম্পে ৩০ জনকে ডেকেছি আমরা। ২৫ জনকে নিয়ে ঢাকায় আসব।

প্রশ্ন :

এই সফর থেকে কী আশা করছেন?

বাল গোপাল: এই পরিস্থিতিতে ভাঙাচোরা দল নিয়ে ভালো করা কঠিন। তবু জিততেই যাচ্ছি ঢাকায়। লিখতে পারেন, হারতে যাচ্ছি না আমি (হাসি)। প্রীতি হলেও ম্যাচ দুটির গুরুত্ব আছে। জিতলে ফিফা র্যাংকিং বাড়বে। আমরা (১৭০) বাংলাদেশের চেয়ে ১৭ ধাপ এগিয়ে।

আমরা যখন খেলতাম, বাংলাদেশ তখন অনেক শক্তশালী ছিল। এখন আর আগের মতো নেই। তারপরও প্রতিপক্ষ হিসেবে বাংলাদেশ সহজ নয়।

প্রশ্ন :

বাংলাদেশ ঘরের মাঠে খেলবে। ফেবারিট মানবেন না স্বাগতিক দলকে?

বাল গোপাল: নিশ্চয়ই ঘরের মাঠের সুবিধা পাবে বাংলাদেশ দল। তবে নেপাল-বাংলাদেশ ম্যাচে এখন আর ফেবারিট থাকে না। ম্যাচের দিন যারা ভালো খেলবে এবং সুযোগ কাজে লাগাতে পারবে যে দল, জয় তাদেরই। কাজেই সুযোগ তৈরি করে কাজে লাগানোই আসল। আমরা সে চেষ্টাই করব।

প্রশ্ন :

বাংলাদেশ দলের কোনো খেলোয়াড়কে আপনার দলের জন্য বাধা মনে করেন?

বাল গোপাল: বেশ কয়েকজন আছেন। নাম মনে করতে পারছি না। অধিনায়ক (জামাল ভূঁইয়া) ভালো খেলোয়াড়।

প্রশ্ন :

নেপালের ঘরোয়া ফুটবলের কী অবস্থা?

বাল গোপাল: কোভিড-১৯ সংক্রমণের পর থেকে খেলা বন্ধ। অল নেপাল ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন বা আনফা ভাবছে কীভাবে আবার ঘরোয়া খেলা শুরু করা যায়।

প্রশ্ন :

বাংলাদেশ দলকে এখন কেমন দেখেন?

বাল গোপাল: আমরা যখন খেলতাম, বাংলাদেশ তখন অনেক শক্তশালী ছিল। এখন আর আগের মতো নেই। তারপরও প্রতিপক্ষ হিসেবে বাংলাদেশ সহজ নয়।

প্রশ্ন :

১৯৯৩ সালে ঢাকা সাফ গেমস ফুটবলে সোনাজয়ী নেপাল দলের গর্বিত খেলোয়াড় ছিলেন আপনি। ভাবলে কেমন লাগে?

বাল গোপাল: অনেক ভালো। মধুর এক স্মৃতি। ১৯৯৩ সাফ গেমসের ফাইনালে ঢাকা স্টেডিয়ামে আমরা ভারতকে হারাই। ২-২-এর পর টাইব্রেকারে জয়। পুরো স্টেডিয়াম আমাদের সমর্থন দিয়েছিল। ২০১৬ সালে আমার কোচিংয়েই বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের শিরোপা জেতে নেপাল। ২০১৮ সালে ঢাকা সাফে আমরা বাংলাদেশকে হারাই। সেই দলেরও কোচ আমি। গত ডিসেম্বেরে এসএ গেমসে বাংলাদেশকে হারানো নেপালের কোচের দায়িত্বেও ছিলাম। গেমসে নেপাল অপরাজিত থেকে সোনা জেতে। খেলোয়াড় ও কোচ হিসেবে অনেকবার যাওয়া হয়েছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশকে দ্বিতীয় বাড়ি মনে করি।

প্রশ্ন :

২০০১-২০০৩ পর্যন্ত খেলেছেন ঢাকার ক্লাব ব্রাদার্স ইউনিয়নে। ক্লাবটির কোচও ছিলেন ২০১৬ সালে। কোনো স্মৃতি মনে পড়ে?

বাল গোপাল: সবার আতিথেয়তার কথাই বেশ মনে পড়ে। এসব স্মৃতি কখনো ভুলব না। কোচ হিসেবে ব্রাদার্সে পাঁচ-ছয়টি ম্যাচে ছিলাম। সম্ভবত চারটি ড্র ছিল। একটি হার।