‘আমাকে ছুঁয়ো না’–ফুটবলে করোনা সতর্কতা

গোলের পর করোনা সতর্কতা হিসেবে এভাবেই সতীর্থদের কাছে আসতে নিষেধ করলেন লেস্টার সিটির ম্যাডিসন।ছবি: এএফপি

ঘরের মাঠে দল ৩৬ মিনিট পর্যন্ত গোলহীন। গোলের জন্য মরিয়া চেষ্টা করে যাচ্ছিল লেস্টার সিটি। ঠিক সেই মুহূর্তেই এল কাঙ্ক্ষিত সেই গোল। এর উদ্‌যাপনটা কেমন হতে পারে? অনুমান করতে কারোরই অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। বল জালে পাঠিয়ে গোলদাতা ভোঁ-দৌড় দেবেন। তাঁর পেছনে ছুটবে বলতে গেলে গোটা দল। খানিক পরে গোলদাতাকে জড়িয়ে ধরবেন সতীর্থদের অনেকে। তিনি হারিয়ে যাবেন সতীর্থদের আলিঙ্গনে। কিন্তু কাল ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে লেস্টার-সাউদাম্পটন ম্যাচে দেখা গেল অন্য দৃশ্য।

৩৭ মিনিটে দলকে এগিয়ে দেওয়া গোলের পর জেমস ম্যাডিসন আনন্দে ভোঁ-দৌড় দিলেন, সতীর্থরাও তাঁর পেছন পেছন ছুটলেন। কিন্তু ম্যাডিসন কাউকে তাঁর কাছে যেতে দিতে দিলেন না। হাত দিয়ে ইশারা করলেন, কেউ আমাকে ছুঁয়ো না, সবাই দূরে থাক! এরপর সতীর্থদের থেকে নিরাপদ সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই ইশারায় হাত মেলালেন ম্যাডিসন। দলকে এগিয়ে দেওয়া মহামূল্যবান একটি গোলের উদ্‌যাপনে কেন এমনভাবে করলেন ম্যাডিসন?

উদ্‌যাপনের নতুন ধারা আসছে ফুটবলে। কাল লেস্টার–সাউদাম্পাটন ম্যাচেও দেখা গেল সেটা।
ছবি: রয়টার্স

করোনাভাইরাস মহামারিই এর কারণ। গত মৌসুমে অতিমারির কারণে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগসহ সব দেশের ফুটবলই বন্ধ ছিল অনেক দিন। ফুটবল আবার মাঠে ফিরেছে ঠিক, কিন্তু নানা ধরনের নিয়মকানুন নিয়ে। যাতে করে করোনা আবার ফুটবলে হানা দিতে না পারে। কিন্তু সম্প্রতি আবার বেড়ে গেছে করোনার প্রকোপ। প্রিমিয়ার লিগে প্রায় প্রতিদিনই শোনা যাচ্ছে কোনো না কোনো খেলোয়াড়ের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর।

তবে এবার আর খেলা বন্ধ করতে চায় না প্রিমিয়ার লিগ কর্তৃপক্ষ। এ কারণে নিয়মকানুন আরেকটু শক্ত করার কথাও ভাবছে তারা। সম্প্রতি তারা অনুরোধ করেছে, খেলোয়াড়েরা যেন গোল উদ্‌যাপনে আরেকটু সতর্ক হন। একে অপরকে জড়িয়ে ধরা বা হাত মেলানো থেকে যেন বিরত থাকেন। বিষয়টি নিয়ে অবশ্য অনেকে সমালোচনাও করেছেন। এর মধ্যে আছেন ম্যানচেস্টার সিটির কোচ পেপ গার্দিওলা আর লিভারপুলের ইয়ুর্গেন ক্লপও।

অবস্থা যখন এ রকম, ম্যাডিসন তাঁর ‘অন্য রকম’ উদ্‌যাপন দিয়ে দেখিয়ে দিলেন যে ফুটবল চালু রাখতে এটাও সম্ভব! বিষয়টি যেন সবাই হালকাভাবে নেন, এর জন্যই কাল এমন উদ্‌যাপন করেছেন বলেও জানিয়েছেন লেস্টার সিটির মিডফিল্ডার। ম্যাচ শেষে ম্যাডিসন বলেছেন, ‘ছোট ছোট এই কাজগুলো করলে যদি ফুটবল চালু থাকে, তাহলে এগুলো আমাদের করা উচিত। আমাদের বলা হয়েছে এক জায়গায় বেশি খেলোয়াড় যেন জড়ো না হই। আমি বিষয়টিকে হালকাভাবে দেখানোর চেষ্টা করতেই এমন উদ্‌যাপন করেছি।’

ফুটবলবিহীন জীবন একদমই পছন্দ নয় ম্যাডিসনের। খেলা আবার বন্ধ হয়ে যাক তা তিনি চান না। এ কারণেই সবাইকে উদ্দেশ করে ম্যাডিসন বলেছেন, ‘আমার মনে হয় এটাকে (লিগ কর্তৃপক্ষের অনুরোধ) হালকাভাবেই নেওয়া উচিত। আমি মনে করি না আপনি দেশে এমন একটি মানুষ পাবেন, যে চায় না ফুটবল বন্ধ হোক।’ শুধু লিগ বা কাপের খেলাই নয়, ম্যাডিসন চাইছেন আন্তর্জাতিক ফুটবলও সমান তালে চলতে থাকুক।

ম্যাডিসনের এমন উদ্‌যাপনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন লেস্টারের কোচ ব্রেন্ডন রজার্সও। ম্যাডিসনের প্রশংসা করে তিনি বলেছেন, ‘এটাকে আমাদের ইতিবাচক হিসেবে নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। আমরা তো যেকোনো ক্ষেত্রে সৃজনশীলও হতে চাই। গোল উদ্‌যাপন করা যাবে না, বিষয়টিকে এভাবে না নিয়ে আমরা উদ্‌যাপনের নতুন ধারা বের করতে পারি।’