ইউনাইটেডে নয়, ম্যান সিটিতেই যেতে চেয়েছিলেন রোনালদো

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে ফিরেছেন রোনালদোছবি: টুইটার

ম্যানচেস্টার সিটির ভক্তদের মধ্যে যাঁরা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে দলে পাওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন, তাঁরা এখন চাইলে বার্সেলোনাকে শাপশাপান্ত করতে পারেন। স্প্যানিশ সাংবাদিক গিয়েম বালাগের প্রতিবেদনের পর তো এমনটাই মনে হচ্ছে যে বার্সার আর্থিক দুরবস্থার কারণেই ম্যান সিটিতে যাওয়া হয়নি রোনালদোর!

শুধু এটিই নয়, স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম কোপে-তে বালাগ বলেছেন, ম্যান ইউনাইটেড নয়, রোনালদো প্রথমে ইউনাইটেডেরই নগরপ্রতিদ্বন্দ্বী ম্যানচেস্টার সিটিতে ফিরতে চেয়েছিলেন। ম্যান সিটিই নাকি ছিল জুভেন্টাস ছাড়তে চাওয়া রোনালদোর গন্তব্য হিসেবে ‘প্রথম পছন্দ।’

দলবদলের বাজারের শেষ দিকে এসে দারুণ নাটকের পর পুরোনো ক্লাব ম্যান ইউনাইটেডেই ফিরেছেন রোনালদো। আগামীকাল ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে নিজেদের মাঠে ওল্ড ট্রাফোর্ডে নিউক্যাসলের বিপক্ষে নামবে ম্যান ইউনাইটেড, এই ম্যাচ দিয়েই ইউনাইটেডের জার্সিতে পুনরাভিষেক হওয়ার কথা রোনালদোর!

কিন্তু দলবদলটার এত সময় পেরিয়ে গেলেও এখনো রোনালদোর নাটকীয় দলবদলের পেছনের গল্প নিয়ে আলোচনা শেষ হচ্ছে না!

নাটকও তো অবশ্য কম হয়নি! রোনালদোর দলবদলের আগের দিন, অর্থাৎ ২৬ আগস্ট ইংলিশ সংবাদমাধ্যম পুরোপুরি নিশ্চিত করে জানিয়ে দিল, ম্যান সিটির সঙ্গে রোনালদোর ব্যক্তিগত চুক্তি নিয়ে সব বোঝাপড়া হয়ে গেছে। জুভেন্টাস আর ম্যান সিটির মধ্যে সমঝোতা হলেই রোনালদো হয়ে যেতেন ম্যান সিটির। কিন্তু ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই নাটকের ভিন্ন পরিণতি!

২৭ আগস্ট বাংলাদেশ সময় বিকেলে সিটি জানিয়ে দিল, তারা রোনালদোকে কেনার দৌড়ে আর নেই। তার কয়েক ঘণ্টা পর ইউনাইটেড জানিয়ে দিল, রোনালদো ‘ঘরে’ ফিরছেন! অথচ ২৪ ঘণ্টা আগেও রোনালদোর দলবদলে রিয়াল মাদ্রিদ, পিএসজি, ম্যানচেস্টার সিটির নাম যতটা শোনা গিয়েছিল, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের নাম অতটা শোনা যায়নি।

যদিও অনেকে বলেছেন, এসবই আসলে রোনালদোর মুখপাত্র ও বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ‘প্লেয়ার এজেন্ট’ জর্জ মেন্দেসের চাল! সিটির আগ্রহকে পুঁজি করে সেটিকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখিয়েছেন সংবাদমাধ্যমে, যাতে ম্যান ইউনাইটেডের অহমে লাগে। নগরপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাবে নিজেদের ক্লাবের কিংবদন্তির যাওয়ার গুঞ্জনে বিচলিত ইউনাইটেড যাতে রোনালদোকে পেতে ঝাঁপিয়ে পড়ে, সেটি নিশ্চিত করতেই মেন্দেস চালটা চেলেছেন বলে অনেকের বিশ্লেষণ।

কিন্তু এখন বালাগ বলছেন, সিটি আসলেই রোনালদোকে পেতে চেয়েছিল। কিন্তু ৩৬ বছর বয়সী পর্তুগিজ ফরোয়ার্ডকে সিটির না পাওয়ার একটা কারণ হিসেবে জুভেন্টাসের সঙ্গে তাদের দামে বনাবনি না হওয়ার কারণ তো জানাই, এর সঙ্গে বালাগ যোগ করছেন, সিটি আসলে আক্রমণভাগের একজন খেলোয়াড়কে সরাতে চেয়েও পারেনি। যে কারণে রোনালদোকে পাওয়া হয়নি তাদের।

এ ব্যাপারে জুভেন্টাসের পরিচালক ফেডেরিকো চেরুবিনি তুত্তোস্পোর্তকে বলেছেন, সিটি নাকি রোনালদোর জন্য কোনো দলবদল ফি দিতে চায়নি। ওদিকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ঐতিহ্যবাহী ক্লাবের মতো আচরণ করেছে এবং রোনালদোকে নেওয়ার সময় জুভেন্টাসকে দলবদলের জন্য সব মিলিয়ে ২ কোটি ৩০ লাখ ইউরো দিতে রাজি হয়েছে।

ইউনাইটেড কোচ সুলশারের সঙ্গে রোনালদো
ছবি: টুইটার

সিটির আক্রমণভাগে ফিল ফোডেন, রাহিম স্টার্লিং, রিয়াদ মাহরেজ, ফেরান তোরেস, জ্যাক গ্রিলিশ, বের্নার্দো সিলভা, গাব্রিয়েল জেসুস...প্রতিভাবান খেলোয়াড়ের অভাব নেই। তারপরও এবার একজন গোলশিকারি চাইছিলেন সিটি কোচ পেপ গার্দিওলা। সে জন্য টটেনহামের ইংলিশ স্ট্রাইকার হ্যারি কেইনকে পেতে অনেক চেষ্টাও করেছিল, কিন্তু পায়নি। এরপরই রোনালদোর দিকে নজর যায় সিটির।

কিন্তু বালাগ জানাচ্ছেন, রোনালদোকে পাওয়ার আগে আক্রমণভাগের কোনো একজন খেলোয়াড়কে বিক্রি করতে চাইছিল সিটি। আর এখানেই সমীকরণে জড়িয়ে যায় বার্সেলোনা। সিটির সিলভা, জেসুস ও মাহরেজের মধ্যে যেকোনো একজনকে নিতে চেয়েছিল লাপোর্তার বার্সা। কিন্তু ক্লাবের আর্থিক অবস্থা এতটাই করুণ যে কাতালান ক্লাবটি লিওনেল মেসির চুক্তিই নবায়ন করতে পারেনি, সেখানে বাড়তি অর্থ খরচ করে এঁদের কাউকে কেনা আর সম্ভব হয়নি। সে কারণে রোনালদোরও সিটিতে যাওয়া হয়নি।

ব্যাপারটা টুইটারে বিশাল ‘থ্রেড’-এ আবার ব্যাখ্যা করেছেন বালাগ। তাঁর মতে, রোনালদোর দলবদলের গল্পটা কী রকম ছিল, সেটি জানিয়েছেন। ‘রোনালদো, সিটি আর ইউনাইটেডের মধ্যে কী হয়েছিল, সেটা নিয়ে আপনাদের একটা ধারণা দিই। ক্রিস্টিয়ানো ও মেন্দেস সিটির সঙ্গে চুক্তি নিয়ে আলোচনা করেছিল, কারণ দুই ক্লাবের মধ্যে (সিটি ও ইউনাইটেড) সিটিই তাঁদের পছন্দের গন্তব্য ছিল। পেপ (গার্দিওলা) হিসাব করেছেন, তাঁর সিটি যত সুযোগ তৈরি করে, সেখানে রোনালদো ৪০-এর বেশি গোল করতে পারবে’—টুইটারে এভাবেই লেখাটা শুরু করেছেন বালাগ।

‘জুভেন্টাসও তাঁর বিদায়ের দরজা খোলাই রেখেছিল, তারা আসলে দুই মৌসুম ধরে রোনালদোর জন্য ক্রেতা খুঁজছিল। যদিও সংবাদমাধ্যমে সেটা স্বীকার করেনি তারা (জুভেন্টাস)। এই বিষয়টা নিয়ে ইউরোপের ক্লাবগুলোর ক্রীড়া পরিচালকদের মধ্যে অনেক কথা হয়েছে, এমনকি ক্লাবগুলোর সভাপতিদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপেও এটা আলোচনায় এসেছে’—বালাগের ব্যাখ্যা।

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ক্যারিংটন অনুশীলন মাঠে এসেই কাজে নেমে পড়লেন রোনালদো
ছবি : ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড

কিন্তু সিটিতে রোনালদোর যাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা কী ছিল? ‘রোনালদোর সিটিতে যেতে হলে, সিটিকে আক্রমণভাগের একজন খেলোয়াড়কে বিক্রি করতে হতো।...এখানে বলতে হচ্ছে, লাপোর্তা সভাপতি হওয়ার পর বার্সেলোনা স্টার্লিং, জেসুস বা বের্নার্দো সিলভার একজনকে নিতে চেয়েছিল। কিন্তু দ্রুতই সে চিন্তা থেকে সরে এসেছে তারা। সিটি বিভিন্ন ক্লাবের সঙ্গে তখন যোগাযোগ করা শুরু করে। তারা জানত, তাদের হাতে সময় কম, পাশাপাশি সিলভা, জেসুস বা মাহরেজের জন্য ক্রেতাও তেমন পাওয়া যাবে না।’

ম্যান ইউনাইটেড আসলে রোনালদোর ‘প্ল্যান বি’ ছিল বলেই জানাচ্ছেন বালাগ, ‘জর্জ মেন্দেস ও রোনালদো সবার আগে সিটিতে যাওয়ার কথাই ভেবেছিল। কিন্তু এমন একটা সময় এল যখন তাদের প্ল্যান বি তৈরি করতে হতো। ইউনাইটেড প্রথমে সিআরসেভেনকে নেওয়ার কথা ভাবেনি, কিন্তু যখন তারা দেখল যে ওকে কেনার সুযোগ আছে, তাদের মনে হয়েছে ইউনাইটেড দলবদলটা করতে পারে (করা উচিত)।’

বালাগের মতে, সিটির চেয়ে ইউনাইটেডে রোনালদোর আর্থিক লাভটা বেশিই হচ্ছে, ‘ইউনাইটেড সিটির চেয়ে বেশি বেতনের প্রস্তাব দিয়েছে (তবে জুভেতে যে বেতন পেতেন তার চেয়ে কম)। পাশাপাশি জুভেন্টাস দলবদলের জন্য যে দাম চেয়েছিল, ১৫ মিলিয়নের পাশাপাশি আরও শর্তসাপেক্ষ ৮ মিলিয়নের সেই দামে ইউনাইটেড খুশিই ছিল। সিআরসেভেন ওল্ড ট্রাফোর্ডে ফেরার ব্যাপারে একেবারে নিঃসংশয় ছিল না, কিন্তু সে জুভেন্টাস ছাড়তে ব্যাকুল ছিল।’

শেষ পর্যন্ত ইউনাইটেড আর রোনালদোর গল্পটা দারুণই হলো জানিয়ে বালাগ লিখেছেন, ‘যখন এটা পরিষ্কার হলো যে সিটি তাদের আক্রমণভাগের অন্তত একজন খেলোয়াড়কে বিক্রি করতে পারছে না, তখন মেন্দেস সিটিকে বলল, তারা ইউনাইটেডের প্রস্তাব মেনে নিচ্ছে। ম্যান ইউনাইটেডই এই গল্পটাতে জিতে গেল: তাদের ঘরের ছেলে ঘরে ফিরছে, ফার্গুসনের ফোনের কথা প্রকাশ্যে এল, সিআরসেভেন জানাল ঘরে ফিরে সে খুশি...।’