ইউরো জিতেও ইতালির বিশ্বকাপে জায়গা না পাওয়া ‘পাগলামি’

বিশ্বকাপে জায়গা করে নিতে ব্যর্থ ইতালি গত পরশু আর্জেন্টিনার সামনেও ছিল অসহায়ছবি: রয়টার্স

মধ্যে কয়েক মাসে যা-ও একটু আলোচনার আড়ালে পড়ে গিয়েছিল, গত বুধবার আর্জেন্টিনার কাছে ‘লা ফিনালিসিমা’য় হারের পর আবার যেন ইতালির দুঃখটা জেগে উঠেছে। আবার যেন সবার মনে পড়েছে, ইতালি তো এবার কাতার বিশ্বকাপেও থাকছে না।

ইতালির কিংবদন্তি স্ট্রাইকার রবার্তো বাজ্জোরও যেন দুঃখটা ফিরে এসেছে। নতুন করে বিশ্বকাপে ইতালির জায়গা না পাওয়া নিয়ে কথা বলেছেন ১৯৯৪ বিশ্বকাপের ফাইনালে টাইব্রেকারে পেনাল্টি-ব্যর্থতায় ইতিহাসে অমর হয়ে থাকা বাজ্জো। তাঁর হিসাবে, ২০২১ ইউরো জেতার কারণেই ইতালির বিশ্বকাপে জায়গা নিশ্চিত হয়ে যাওয়া উচিত ছিল।

বিশ্বকাপে জায়গা না পেয়ে ভেঙে পড়াই ইতালির গত বুধবার আর্জেন্টিনার কাছে ওভাবে বিবশ হয়ে থাকার কারণ বলে মনে হচ্ছে বাজ্জোর।

১৯৯৪ বিশ্বকাপে রানার্সআপ ইতালি দলের স্ট্রাইকার বাজ্জো
ছবি: রয়টার্স

১১ মাসের মধ্যে মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ দুই পিঠই দেখে ফেলেছে রবার্তো মানচিনির ইতালি। বছরখানেকও হয়নি ইউরো জিতে উচ্ছ্বাসে মেতেছে ইতালি, বিশ্বকাপের স্বপ্নেও বুক বেঁধেছে। ইউরো জেতার পথে টানা ৩৭ ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ডও গড়েছিল।

তখনো বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব শেষ না হলেও ইতালির বিশ্বকাপে জায়গা করে নেওয়াকে ‘শতভাগ নিশ্চিত’ ধরে নিয়ে সবাই বলছিলেন, এই ইতালিকে কাতার বিশ্বকাপে সবচেয়ে বড় ফেবারিটদের তালিকায় রাখতে হবে।

কিন্তু হলো কী? ইউরোর উদ্‌যাপনে বুঝি একটু বেশিই উন্মাতাল হয়ে পড়েছিল ইতালি! ইউরোর পর বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের শেষ পাঁচটি ম্যাচ খেলেছে, তার চারটিতেই ড্র করে রবার্তো মানচিনির দল। এর মধ্যে গ্রুপপর্বে যে সুইজারল্যান্ড শেষ পর্যন্ত ইতালিকে টপকে গ্রুপসেরা হয়ে সরাসরি জায়গা করে নিয়েছে বিশ্বকাপে, সেই সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ম্যাচেই পেনাল্টিতে ব্যর্থ হয়েছেন জর্জিনিও।

বারেল্লাদের নিয়ে ইতালিকে আবার পুনর্গঠনের কাজে নামতে হবে মানচিনিকে
ছবি: রয়টার্স

শেষ পর্যন্ত গ্রুপে দ্বিতীয় হয়ে প্লে-অফে খেলতে হয় ইতালিকে, সেখানেও আবার পর্তুগালের সঙ্গে একই গ্রুপে পড়েছিল ইতালি। দুই দলই প্লে-অফের ফাইনালে মুখোমুখি হবে, সেখানে ইতালি না পর্তুগাল—কোন দল শেষ পর্যন্ত ফাইনালে উঠবে, সে নিয়ে যখন আলোচনা, ইতালি প্লে-অফের সেমিফাইনালেই বাদ পড়ে গেল। কার কাছে হেরে? উত্তর মেসিডোনিয়া! অজস্র সুযোগ হারানো ম্যাচের যোগ করা সময়ে গোলটা খেয়ে যাওয়ায় সেটি আর ফেরত দেওয়ার সুযোগ ছিল না মানচিনির দলের।

বাজ্জোর হিসাবে, ইতালিকে এত উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে যাওয়ারই দরকার ছিল না। ইউরোজয়ী ইতালিকে সরাসরি বিশ্বকাপে জায়গা করে দেওয়া উচিত ছিল বলেই মনে হচ্ছে বাজ্জোর, ‘ইতালি ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছে। সেটার জন্য যে ওদের সরাসরি বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ দেওয়া হয়নি, সেটাই আমার চোখে হতাশাজনক। পাগলামি।’

বাছাইপর্বের অনিশ্চয়তাকে কারণ দেখিয়ে বাজ্জোর যুক্তি, ‘একটা দিন যে কারোই খারাপ যেতে পারে, সেদিন যেকোনো দলের কাছেই তারা হারতে পারে। তবে এই ছেলেদের যা অর্জন, সেটির জন্য কিছু পুরস্কার প্রাপ্য ছিল তাদের। তাই না? আমি যদি এই দলে থাকতাম, আমি এটা মেনে নিতেই পারতাম না।’

নতুন পালাবদলে কিয়েলিনিকে পাবে না ইতালি
ছবি: রয়টার্স

বিশ্বকাপে জায়গা না পাওয়া ইতালির যে পালাবদল আসছে, তা নিশ্চিত। আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ফিনালিসিমার পর সেটির শুরু হবে বলে ধরে নেওয়া যায়। ফিনালিসিমা দিয়েই আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শেষ টেনেছেন ইতালির রক্ষণের প্রহরী জর্জো কিয়েলিনি। বোনুচ্চির দিনও ফুরিয়ে আসছে বলে গুঞ্জন। তরুণ তারকাদের নিয়েই আবার পথচলা শুরু করবেন মানচিনি, এমনই ভাবা হচ্ছে।

তবে বিশ্বকাপে জায়গা না পাওয়ার ধাক্কা তো এখনো কাটেনি, আর সেটির কারণেই আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ম্যাচে ইতালি ধুঁকেছে বলে মনে হচ্ছে বাজ্জোর, ‘আমার মনে হয় বিশ্বকাপ থেকে বাদ পড়ায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে ইতালি। বোঝাই যাচ্ছিল এখানে সমস্যাটা মানসিক। আমরা যা দেখলাম, আর্জেন্টিনার শান্ত-আত্মবিশ্বাসী ফুটবলের সঙ্গে ইতালির বর্তমান মানসিক অবস্থার তুলনাই চলে না।’