এই কি তবে নেইমারের ‘জানবাজি’ রাখার নমুনা

নকআউট রাউন্ডে নেইমারের এই ব্যর্থতা পিএসজি-ভক্তদের বুকে জ্বালা ধরিয়ে দেবেই।ছবি : রয়টার্স

প্রথম লেগে নেইমাররা সিটির কাছে হেরে বসেছিলেন ২-১ গোলে। হারের পর বড় মুখ করে বলেছিলেন, দলকে ফাইনালে তোলার জন্য যদি মরারও দরকার হয়, মরতে রাজি নেইমার। দ্বিতীয় লেগে জেতার জন্য অন্ততপক্ষে দুটি গোল করতে হতো পিএসজিকে। প্রথম লেগে তাও কোনো রকমে একটা গোল এসেছিল, দ্বিতীয় লেগে একটা গোলও করতে পারলেন না নেইমাররা। প্রশ্ন তাই উঠেই যায়, এই তবে নেইমারের ‘জানবাজি’ রাখার নমুনা?

গত রাতে কিলিয়ান এমবাপ্পে খেলেননি। চোটে পড়া এমবাপ্পেকে নিয়ে যে এই লেগে তেমন ভরসা করা যাবে না, সেটা কোচ মরিসিও পচেত্তিনোর বিভিন্ন কথাতেই বোঝা গিয়েছিল ম্যাচের আগে। মঞ্চ তাই প্রস্তুতই ছিল নেইমারের জন্য, বলা চলে। যে আশায় বার্সেলোনা থেকে চলে এসেছিলেন ফ্রান্সে, যে আশায় মেসির ছায়া থেকে বের হয়ে কিছু একটা করে দেখাতে চেয়েছিলেন, যে আশায় একটা ক্লাবের একচ্ছত্র অধিপতি হয়ে ইউরোপসেরা হতে চেয়েছিলেন, সেই আশার পালে আরও জোরে বাতাস লাগানোর জন্য নেইমারের আরেকটা বড় সুযোগ এসেছিল গত রাতে। পাদপ্রদীপের আলো কেড়ে নেওয়ার জন্য এমবাপ্পে ছিলেন না। পিএসজিকে ফাইনালে তুলতে পারলে নেইমারের নামে পার্ক দে প্রিন্সেসের সামনে একটা ভাস্কর্য গড়ে উঠত না, বলা যায় না!

আরও পড়ুন

কিন্তু কিসের কী! নেইমার নিষ্প্রভই থাকলেন। হতাশ দৃষ্টিতে আশপাশে চেয়ে দেখলেন এমবাপ্পে আছেন কি না, মিস করলেন নিজের আক্রমণসঙ্গীকে। গোলহীন নেইমার অপ্রত্যাশিত একটা রেকর্ডও করে বসলেন এই ম্যাচের মাধ্যমে। পিএসজির হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগের নকআউট রাউন্ডের টানা সাত ম্যাচ গোল না করে কাটিয়ে দিলেন এই ব্রাজিলিয়ান তারকা।

প্রথম লেগে তাও কোনো রকমে একটা গোল এসেছিল, দ্বিতীয় লেগে একটা গোলও করতে পারলেন না নেইমাররা।
ছবি : রয়টার্স

নেইমার আসার পর প্রথম বছরে চ্যাম্পিয়নস লিগের দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে বিদায় নিয়েছিল পিএসজি, রিয়াল মাদ্রিদের কাছে দুই লেগ মিলিয়ে ৫-২ গোলে হেরে। আদ্রিয়াঁ রাবিও ও এদিনসন কাভানি গোল করতে পারলেও প্রথম লেগে গোলহীন নেইমার দ্বিতীয় লেগে খেলেন–ইনি। পরের বছর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে নকআউট পর্বে তো খেলতেই পারলেন না চোটের কারণে। বাইরে থেকে দেখলেন দলের আত্মসমর্পণ। টানা চার ম্যাচ গোলহীন থেকে অবশ্য পরের বছরেই গোলের ধারায় ফিরেছিলেন। পরের বছর দ্বিতীয় রাউন্ডে বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে দুই লেগেই গোল পেলেন। বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার আর্লিং হরলান্ডকে দেখালেন, প্রয়োজনের সময় কীভাবে গোল করতে হয়।

ব্যস, এরপর থেকেই শুরু হলো নেইমারের নকআউট–খরা। গত বছর আতালান্তা, লাইপজিগ ও বায়ার্নের বিপক্ষে তিন ম্যাচ, এ বছর কোয়ার্টারে বায়ার্নের বিপক্ষে দুটি ও সেমিতে সিটির বিপক্ষে দুটি—মোট এই সাত ম্যাচে নেইমার থাকলেন গোলহীন। অনেকে অবশ্য ম্যাচ শেষে ঠাট্টা করে জানিয়েছেন, নিজের পরের নকআউট গোলটা মেসির পাশে থেকে করবেন দেখেই সেদিনের জন্য গোল জমিয়ে রাখছেন নেইমার। ইঙ্গিতটা স্পষ্ট, প্রতি দলবদলের বাজারেই নেইমার বার্সায় ফিরবেন, এমন গুঞ্জন শোনা যায়, এবারও তা–ই হচ্ছে। এবার আবার আরেকটা বিষয় শোনা যাচ্ছে যে নেইমার নন, মেসি নিজেই বার্সা ছেড়ে নাম লেখাতে পারেন পিএসজিতে। দুই গুঞ্জনের যেকোনো একটা অবশেষে সত্যি হলেই আগামী বছর মেসির পাশে চ্যাম্পিয়নস লিগের নকআউট পর্ব খেলবেন নেইমার!

সাত ম্যাচে নেইমার থাকলেন গোলহীন
ছবি : রয়টার্স

পরে কী হয়, সেটা ভবিষ্যতের জন্যই তোলা থাক। আপাতত নকআউট রাউন্ডে নেইমারের এই ব্যর্থতা পিএসজি-ভক্তদের বুকে জ্বালা ধরিয়ে দেবেই। ২২ কোটি ২০ লাখ দিয়ে কেনা রত্নটা পিএসজিকে ইউরোপসেরা করতে পারছেন না, বর্তমান বাস্তবতায় এখন এটাই সত্য। ফলে প্রশ্নটা উঠছেই। এই কি তবে নেইমারের ‘জান’ দিয়ে লড়ার নমুনা!