এশিয়ার মাসসেরা হয়েছিলেন বাংলাদেশের যে ফুটবলার

স্মৃতিকাতর আলফাজ। ছবি: ফেসবুক
স্মৃতিকাতর আলফাজ। ছবি: ফেসবুক

‘ইংল্যান্ডে প্রথম অধিনায়কত্ব।’

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে জাতীয় দলের লাল জার্সি পরা ছবি দিয়ে এ কথাটিই লিখেছেন আলফাজ আহমেদ। প্রায় বিশ বছর আগে জাতীয় দলকে প্রথম নেতৃত্ব দেওয়ার স্মৃতিটা এভাবেই আরেকবার স্মরণ করে নিলেন সাবেক স্ট্রাইকার।

বাংলাদেশের ফুটবলে যাঁদের খেলা দেখতে দর্শক মাঠে ছুটতেন, সেই সৌভাগ্যবানদের শেষ প্রজন্মের সদস্য আলফাজ। দর্শক যে এমনিতেই মাঠে ছুটতেন না তার কারণও আছে। বর্তমান সময়ের ফুটবল প্রেমীরা শুনলে অবাক হতে পারেন, বাংলাদেশেরই এক স্ট্রাইকার এশিয়ার মাসসেরা ফুটবলার নির্বাচিত হয়েছিলেন । তিনি সেই আলফাজ। যে দেশে একজন ভালো মানের স্ট্রাইকারের জন্য মাথা কুটতে হয়, সে দেশের এক ছোটখাটো গড়নের স্ট্রাইকারের মাথায় উঠেছিল ১৯৯৬ সালের আগস্ট মাসে ‘এশিয়ান ফুটবলার অব দ্য মান্থ’ মুকুট। বিভিন্ন সূত্রমতে জাতীয় দলের হয়ে ১০৫ টি ম্যাচ খেলে ১৬টি গোল আছে তাঁর। তবে পরিসংখ্যান দিয়ে কি আর আলফাজকে বিচার করা যাবে!

ঘরোয়া ফুটবলে প্রায় বিশ বছরের ক্যারিয়ার আলফাজের।১৯৯১-৯২ মৌসুমে রহমতগঞ্জের হয়ে ঘরোয়া ফুটবলে অভিষেক। পরবর্তী সময়ে আবাহনী লিমিটেড, মোহামেডান, ব্রাদার্স ইউনিয়ন, শেখ রাসেলের হয়ে খেলেছেন। সবচেয়ে বেশি খেলেছেন মোহামেডানের জার্সিতে। ২০১৩ সালে সাদা- কালো জার্সিতেই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনীর বিপক্ষে খেলে বুট জোড়া তুলে রাখেন দেশের ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার।

জাতীয় দলের জার্সিতে ছিল বর্ণিল ক্যারিয়ার। ১৯৯৫ সালে কলম্বোয় অনুষ্ঠিত সার্ক গোল্ডকাপ দিয়ে জাতীয় দলে অভিষেক। আবির্ভাবেই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন দেশের ফুটবলে অনেক দিন রাজত্ব করতেই তাঁর আসা। মোনেম মুন্নার নেতৃত্বে মিয়ানমারের চার জাতি টুর্নামেন্টের মাধ্যমে প্রথম আন্তর্জাতিক শিরোপা জিতে বাংলাদেশ। সে দলের সদস্য ছিলেন। দেশের ফুটবল ইতিহাসে এখন পর্যন্ত মোট চারটি আন্তর্জাতিক শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে প্রথম বড় তিনটিতেই আছে আলফাজের নাম।

১৯৯৯ সালে কাঠমান্ডু সাফের ফাইনালে তাঁর গোলেই নেপালকে হারিয়ে সোনার হরিণের দেখা পেয়েছিল বাংলাদেশ। চার বছর পর ঢাকায় অনুষ্ঠিত সাফ ফুটবলের প্রথম ও শেষ শিরোপাতেও ছিল আলফাজের জাদুকরী ছোঁয়া।

১৯৯৫ থেকে ২০০৮ , জাতীয় দলের জার্সিতে মোট ১৩ বছরের ক্যারিয়ারে আলফাজ ছিলেন দুর্দান্ত এক স্ট্রাইকার। লম্বা ক্যারিয়ারে অধিনায়কত্ব করার সুযোগ বেশি দিন হয়নি, মাত্র তিন বছর (২০০০ থেকে ২০০৩)। ইংল্যান্ডে ভারতের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে প্রথম অধিনায়কত্ব পাওয়া। যদিও সে ম্যাচে ১-০ গোলে হেরেছিল বাংলাদেশ।

২০ বছর পরে এসে সেই স্মৃতি মনে করিয়ে দেওয়া কেন ? বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছেলের ইচ্ছেতেই ছবিটি ফেসবুকে পোস্ট করেছেন আলফাজ ,‘ছেলে বললেন ছবিটা ফেসবুকে দাও। আমারও মনে হলো সবার সঙ্গে গর্বের একটি মুহূর্ত ভাগাভাগি করি। তাই দেওয়া। আমার জন্য অনেক গর্বের একটি ছবি। জাতীয় দলের অধিনায়কত্ব করার সুযোগ তো আর সবাই পান না।’

বর্তমানে প্রিমিয়ার লিগের দল উত্তর বারিধারার প্রধান কোচের দায়িত্ব পালন করছেন সাবেক এই তারকা। কোচিং করার সুবাদে সার্বক্ষণিক ফুটবলের সঙ্গেই থাকা হয় তাঁর। বর্তমান অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়াকে কেমন দেখছেন আলফাজ ? উত্তরসূরির একটি ঘাটতিতে একটু আফসোস সাবেক অধিনায়কের, ‘ফুটবলে অধিনায়কের তেমন ভূমিকা নেই। তবে দলটাকে এক করে রাখতে হয় তাঁকে। জামাল যেহেতু বাংলা ভাষায় দক্ষতা কম, সে জায়গাটায় ঘাটতি আছে বলে মনে হয়।’