কানাডার মতো না হোক বাংলাদেশ, এটাই চান রুমি

সপরিবার রিজভি করিম রুমি। সংগৃহীত ছবি
সপরিবার রিজভি করিম রুমি। সংগৃহীত ছবি
>

দেশের ফুটবলের অন্যতম সেরা তারকা রিজভি করিম রুমি। অনেক দিন ধরেই প্রবাসজীবন তাঁর কানাডায়। করোনাভাইরাসের এই দুঃসময়ে কেমন কাটছে তাঁর দিনকাল

ফোনের অপর প্রান্ত থেকে রিজভি করিম রুমির প্রথম কথা—আশা করি কানাডার মতো হবে না বাংলাদেশের পরিস্থিতি। কানাডায় এখনো পর্যন্ত করোনাভাইরাসের আক্রান্ত হয়েছেন ২৪ হাজারের বেশি মানুষ। মারা গেছেন ৭১৭ জন। জনবহুল বাংলাদেশে করোনাআক্রান্তের সংখ্যা সে অনুপাতে হলে বিপদ কতটা সেটি চিন্তা করেই জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়কের এমন উপলব্ধি।

অনেক দিন ধরেই কানাডা প্রবাসী দেশের ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই তারকা। আনুষ্ঠানিকভাবে কখনোই মাঠ থেকে বিদায় নেননি। ১৯৯৮ পর্যন্ত খেলে ঠিকানা গড়েছেন কানাডায়। সেখানেই স্ত্রী ও এক ছেলেকে নিয়ে তাঁর সংসার। করোনাভাইরাসের হামলায় পুরোপুরি ঘরবন্দী হয়ে পড়েছেন বেশ অনেক দিন ধরেই, ‘কাজে যাচ্ছি না। করোনা-আতঙ্কে দিন কাটছে। ঘরে শুয়ে-বসে আছি। টরন্টোর যে এলাকায় আমি থাকি, তার খুব কাছেই থাকে আমার খেলোয়াড়ি জীবনের দুই সতীর্থ মামুন জোয়ারদার আর মিজান। এমনিতে সব সময়ই দেখা হয়। কিন্তু এখন দেখা-সাক্ষাৎ বন্ধ। এভাবে আর কত দিন থাকতে হবে, বুঝতে পারছি না।’

রুমি চিন্তিত বাংলাদেশকে নিয়ে। নিজে কানাডায় থাকলেও তাঁর পুরো পরিবারই বাংলাদেশে। অসুস্থ বাবাকে নিয়েই তাঁর যত চিন্তা, ‘গত বছর দেশে গিয়েছিলাম। তিনি খুব অসুস্থ। এখন দুশ্চিন্তাটা তাঁকে নিয়েই বেশি। দেশের সঙ্গে মানসিকভাবে সব সময়ই আছি। বাড়িতে সব সময়ই বাংলাদেশি টেলিভিশন চ্যানেল চলছে। অনলাইনে দেশের পত্রিকা পড়ি। আমাদের দেশের মানুষের সচেতনতার অভাবটা খুব পীড়া দিচ্ছে আমাকে। জানি, মানুষের অনেক সমস্যা। বিশেষ করে খেটে খাওয়া মানুষের। কিন্তু সরকারি নির্দেশাবলি তো মানতে হবে। করোনাভাইরাস থেকে বাঁচার একমাত্র ও সহজ উপায় ঘরে থাকা। এই বুঝ তো মানুষের থাকা উচিত।’

টরন্টোয় ঘরের বাইরে বের হলে মানুষকে জরিমানা করা হচ্ছে বলে জানালেন রুমি, ‘করোনার এই সময় সবাইকে ঘরে থাকতে হবে, এটা সরকারি নির্দেশ। একেবারে যে বাইরে যাওয়া যাচ্ছে না, সেটি নয়। বাজার করার জন্য একই পরিবারের সর্বোচ্চ দুজন বাড়ির বাইরে যেতে পারছে। বাইরে নিজেদের মধ্যে কমপক্ষে ৬ ফুট দূরত্ব রেখে চলতে হচ্ছে। নিয়মের ব্যতিক্রম হলেই মোটা অঙ্কের জরিমানা। সেটি ৮ হাজার কানাডীয় ডলার পর্যন্ত। এই বিপুল অঙ্কের জরিমানা গোনার আতঙ্কেই কেউ নিয়ম ভাঙে না।’

যখন খেলতেন। সংগৃহীত ছবি
যখন খেলতেন। সংগৃহীত ছবি

প্রবাস জীবনেও দেশের ফুটবলের খোঁজখবর রাখেন নিয়মিতই। জাতীয় দলের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স তাঁকে কিছুটা হলেও আনন্দিত করেছে বলেই জানালেন, ‘বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে কাতার আর ভারতের বিপক্ষে দুটি ম্যাচ টেলিভিশনে সরাসরিই দেখেছি। খুব ভালো খেলেছে দল। ইংলিশ কোচ দারুণ ট্যাকটিক্যাল গেম খেলিয়েছেন। কাতারের বিপক্ষে ম্যাচটি ড্র হলে ভালো লাগত। ভারতের বিপক্ষে জেতা ম্যাচটা ড্র হলো দুর্ভাগ্যক্রমে। গোলের সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারলে দুটি ম্যাচেই ফল অন্যরকম হতে পারত। তারপরেও জাতীয় দল ভালো খেলেছে। এটা ধরে রাখতে হবে।’

ছেলে রিয়াসাত রাইয়ান করিমের খুব আগ্রহ বাংলাদেশের হয়ে খেলার। কানাডায় সেমি প্রফেশনাল ফুটবল খেলছে সে। বাবারও যে আগ্রহে কমতি নেই সেটি বোঝা যায়। কিন্তু ছেলেকে দেশে পাঠানোর আগে আরও একটু ভাবতে চান তিনি, ‘আমার ছেলে সব সময়ই চায় বাংলাদেশের জার্সি পরে খেলবে। আমি চাই না সেটি নয়। কিন্তু একটু সময় নিতে চাই। কানাডায় অন্য পরিবেশে বড় হয়েছে সে, দেশে গিয়ে কতটা কী করতে পারবে জানি না। দেখা যাক, সময়ই বলে দেবে সবকিছু।’

সবকিছুর আগে পৃথিবীর এই দুঃসময়টা কেটে যাক, সেটিই চান রুমি। মানুষ করোনাভাইরাসকে পরাজিত করবে, মৃত্যুর মিছিল থামবে, সবকিছু আবার আগের মতো হবে, স্বাভাবিক কর্মচাঞ্চল্য ফিরবে এই প্রত্যাশায় আপাতত কষ্টের মুহূর্তগুলো মেনে নিতে আপত্তি নেই তাঁর, ‘ইনশা আল্লাহ সবকিছুই ঠিক হয়ে যাবে। আমরা যদি একটু নিয়ম মেনে চলি, তাহলে করোনাকে হারানো সম্ভব। আমরা সবাই সচেতন হই। সামনে ভালো দিন আসবে। এখন আপাতত কষ্ট করে হলেও এ বন্দিদশা মেনে নিই।’