গোল নিয়ে যত গোলমাল

শেখ মোহাম্মদ আসলাম ও জাহিদ হাসান এমিলি। ফাইল ছবি
শেখ মোহাম্মদ আসলাম ও জাহিদ হাসান এমিলি। ফাইল ছবি
>জাতীয় দলের হয়ে কার কত গোল, সে হিসাব করতে গিয়ে বাফুফে জন্ম দিয়েছে নতুন বিতর্কের। অন্তত ৪৭টি গোলের গোলদাতার নাম নেই তাদের কাছে।

বাংলাদেশের ফুটবলে তথ্য, পরিসংখ্যান কখনোই সংরক্ষণ করা হয়নি। স্বাধীনতার প্রায় ৫০ বছর পর সেই উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। কিন্তু যথাযথ তথ্য-উপাত্তের অভাবেই সেটি নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। জাতীয় দলের জার্সিতে কার কত গোল, এ নিয়ে দেখা দিয়েছে বিভ্রান্তি।

১৯৭৩ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত জাতীয় দলের সব টুর্নামেন্টের ফল বিশ্লেষণ করে বাফুফে একটি খসড়া প্রতিবেদন তৈরি করেছে। সেটি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম এবং সাবেক ফুটবলারদের কাছে পাঠিয়ে বলা হয়েছে, কারও কাছে এ-সংক্রান্ত কোনো তথ্য থাকলে বাফুফেকে জানাতে। বাফুফের তৈরি করা খসড়ায় দেখা যায়, বাংলাদেশ জাতীয় দলের জার্সিতে জাহিদ হাসান (এমিলি) সর্বোচ্চ ১৭টি গোল করেছেন। জাহিদ হাসান সাম্প্রতিক সময়ের ফুটবলার হওয়ায় তাঁর গোলের রেকর্ডগুলো পাওয়া সহজ হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, জাহিদ হাসানই জাতীয় দলের হয়ে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ গোলদাতা কি না। এত দিন শেখ মোহাম্মদ আসলাম বলে এসেছেন জাতীয় দলের হয়ে তাঁর গোল ২৫-২৬টি।

জাতীয় দলের আরেক সাবেক ফুটবলার আশরাফ উদ্দিন আহমেদও (চুন্নু) দাবি করেন, তাঁর গোল ২৪-২৫টি হবে। কিন্তু বাফুফের খসড়া তালিকায় আসলামের গোল মাত্র ৭টি, চুন্নুর ৫টি। এ ছাড়া কাজী সালাউদ্দিন ১০, সালাম মুর্শেদী ১, বাদল রায় ১, আলফাজ আহমেদ ১১, শাখাওয়াত রনি ১০, এনামুল হক ৭, জাহিদ হোসেন ৬, মামুনুল ইসলাম ৪টি গোল করেছেন বলে খসড়ায় উল্লেখ আছে। বিভিন্ন সময় ক্লাবের বিপক্ষে জাতীয় দলের অনুশীলন ম্যাচের গোলও হিসাব করা হয়েছে খসড়ায়। এগুলো সব 'ফিফা টায়ার-১'-এর আওতাভুক্ত আন্তর্জাতিক গোল নয়। কিছু আছে 'টায়ার টু' পর্যায়ের। বাফুফের খসড়া তালিকায় নিজের নামের পাশে মাত্র ৭ গোল দেখে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন ঢাকার ফুটবলে ৫ বারের সর্বোচ্চ গোলদাতা শেখ মোহাম্মদ আসলাম। গতকাল তিনি প্রথম আলোকে বলেন, 'জাতীয় দলের হয়ে আমার গোল ৭টি, এটা কীভাবে হয়! কল্পনাপ্রসূত তথ্য দিয়ে দিলেই তো হলো না। উদ্দেশ্যমূলকভাবে এগুলো প্রচার করা হচ্ছে। আমার হিসাবে আমার গোল ২৫টি।'

ক্রীড়া সাংবাদিক নাজমুল আমিনের দেওয়া এক তথ্য অনুযায়ী, জাতীয় দলের হয়ে আসলামের গোল ২৪টি। তবে এই তালিকায় একটি গোল বাদ পড়েছে বলে দাবি আসলামের, '১৯৮৯ সালে ঢাকায় প্রেসিডেন্ট গোল্ডকাপের ফাইনালে কোরিয়ার বিপক্ষে আমার পেনাল্টি গোলটি ধরা হয়নি।' ঢাকা লিগে আসলামের নামের পাশে আছে রেকর্ড ১৭৭টি গোল। ১৯৭৮ সালে ঢাকায় এশিয়ান যুব ফুটবল দিয়ে শুরু। শেষ ১৯৯১ সালের সাফ গেমসে। ঢাকা মাঠে ১৯৮৬ সালের প্রেসিডেন্ট গোল্ডকাপে ফিনল্যান্ডের তুরিন পলিসেরার বিপক্ষে বাংলাদেশ লাল দলের হয়ে হ্যাটট্রিক আছে তাঁর। ২৪ গোলের ১০টিই দেশের বাইরে, যার ৫টি দিয়েছেন নেপালের জালে। আসলামের ৭ গোল তাই কোনোভাবেই সঠিক তথ্য হতে পারে না। চুন্নুও নিজের নামের পাশে ৫ গোল দেখে অবাক, 'এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। হিসাবে এক-দুটির গরমিল হতে পারে। এখন তো দেখছি আকাশ-পাতাল ব্যবধান! বাফুফের কাছে সব তথ্য আছে বলে মনে হয় না।' আসলেও নেই সব তথ্য।

বাফুফের হেড অব কম্পিটিশন হাসান মাহমুদের কথায়ও সেটি স্পষ্ট। এ নিয়ে কাজ করতে গিয়ে জাতীয় দলের হয়ে করা ৪৭টি গোলের গোলদাতার নামই নাকি তাঁরা খুঁজে পাননি! এই গোলগুলো হয়েছে ১৯৭৯-১৯৮৮ সাল পর্যন্ত। অর্থাৎ চুন্নু-আসলামদের আমলে। তবে ওই সময়ে বাংলাদেশ কী কী টুর্নামেন্ট খেলেছে, সেই খতিয়ান পাওয়া গেছে। হাসান মাহমুদ জানান, জাতীয় দলের গোলদাতা হিসেবে ৭৮ জনের নাম পাওয়া গেছে। এর বাইরে আরও ৪৭টি গোল থাকলেও সেগুলোর গোলদাতার নাম বাফুফে পায়নি। তবে খসড়া তালিকায় যে ৪৭টি গোলের হিসাব নেই, সেটি কোথাও উল্লেখ করেনি বাফুফে। বিভ্রান্তিটাও এখানেই। কিন্তু সব গোলের গোলদাতার নামই যখন পাওয়া গেল না, অসম্পূর্ণ এই পরিসংখ্যান কী কাজে দেবে?