চোখে লেগে থাকা ৬ গোলের রোমাঞ্চ, শেষ হাসি আবাহনীর

আবাহনী আর মোহামেডানের ম্যাচে দর্শককে গোল নিয়ে আফসোস করতে হয়নিছবি: প্রথম আলো

গ্যালারির দিকে তাকিয়ে মনেই হচ্ছিল না এটি আবাহনী–মোহামেডান ম্যাচ। কুমিল্লা শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামের গ্যালারির এক কোনায় কিছু দর্শক বাদে বাকি প্রায় খালি। তবে মাঠের লড়াইয়ে সেই চিরন্তন উত্তাপ ছিল ঠিকই। শুধু উত্তাপ বললে ভুল হবে। রীতিমতো গোলবন্যা বয়ে গেছে এই ম্যাচে। প্রথমার্ধেই হয়ে গেছে কি না ছয়–ছয়টি গোল!

আবাহনী–মোহামেডান মুখোমুখি লড়াইয়ের ইতিহাসে প্রথমার্ধে ৬ গোল হয়েছে কি না আগে, তা বিরাট গবেষণার বিষয়। দ্বিতীয়ার্ধে গোলে ধারাটা অব্যাহত থাকলে এই ম্যাচের স্কোরলাইন কোথায় গিয়ে দাঁড়াত বলা মুশকিল।

দ্বিতীয়ার্ধে আর কোনো গোল না হওয়ার কারণ, মোহামেডান গোলকিপার সুজনকে তুলে এই অর্ধের শুরু থেকেই নামানো হয় বিপুকে। মোহামেডান সমর্থকেরা একটা ধন্যবাদ দিতেই পারেন তরুণ এই গোলকিপারকে, যিনি অন্তত কিছুটা প্রতিরোধ গড়েছিলেন দ্বিতীয়ার্ধে। শেষ পর্যন্ত ঢাকার দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর আজকের প্রিমিয়ার লিগ লড়াইয়ে আবাহনীর জয় ৪–২ গোলে।

১৬ ম্যাচ শেষে শীর্ষে থাকা বসুন্ধরা কিংসের পয়েন্ট ৪১। আবাহনী ৩৫ পয়েন্ট নিয়ে দুই নম্বরে। ২২ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের পাঁচে মোহামেডান।

আবাহনীর জয়ের নায়ক দানিয়েল কলিনদ্রেস ও দরিয়েলতন গোমেজ। কলিনদ্রেস কর্নার থেকে সরাসরি বল জালে পাঠিয়ে করেছেন ‘অলিম্পিক গোল।’ সেই যে দলের গোল খাতা খুলেছেন তিনি, শেষটা হয়েছে ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার দরিয়েলতন গোমেজের পায়ে। দরিয়েলতন করেছেন জোড়া গোল। তাঁর দুটি গোলেই থাকল ব্যক্তিগত নৈপুণ্যের ঝলক। সঙ্গে কলিনদ্রেসের নৈপুণ্য। নিজে গোল করেছেন, করিয়েছেন। কলিনদ্রেস আর দরিয়েলতনের কাছেই হেরে গেল মোহামেডান।

১০ মিনিটের মধ্যে ২–০ গোলে পিছিয়ে পড়া মোহামেডান অবশ্য ম্যাচে ফেরার আভাষ দিয়েছিল। ১৮ মিনিটে আলমগীর মোল্লার ক্রস থেকে বল বাতাসে রেখেই আবাহনীর জালে পাঠান মোহামেডান অধিনায়ক সোলেমান দিয়াবাতে, যে গোলে কিছুটা দায় আছে আবাহনী গোলকিপার শহিদুল আলমের।

তবে দ্রুতই আবাহনী ৩–১ করেছে। কলিনদ্রেসের ক্রস ফিস্ট করেন মোহামেডান গোলকিপার সুজন। সেই বল পড়ে বক্সের ভেতর ইমন বাবুর পায়ে, যিনি মাত্রই মাঠে এসেছেন চোট নিয়ে রাফায়েল আগুস্তোর বদলি হিসেবে। এসেই পেলেন গোল। তবে গোলের অনেকটা কৃতিত্ব কলিনদ্রেসের।

দরিয়েলতন (৯) করেছেন জোড়া গোল
ছবি: প্রথম আলো

পরপরই আবাহনীর দুই ডিফেন্ডারকে ঘোল খাইয়ে বক্সের ভেতর ঢুকে দারুণ শটে ৩-২ করেন মোহামেডানের শাহরিয়ার ইমন। ডান প্রান্তে ভেসে আসা পাস নিয়ন্ত্রণে নিতে গিয়ে প্রথম স্পর্শেই দারুণভাবে বোকা বানান এক ডিফেন্ডারকে, তারপর ইমনের শট নেওয়ার ভঙ্গিতে হতবুদ্ধি আবাহনীর ইরানি ডিফেন্ডার মিলাদ শেখ। শট নেওয়ার জায়গা পেয়ে যান ইমন, এরপরের কাজটা তো সহজই! কিন্তু সেটা পছন্দ হয়নি দরিয়েলতনের। বিরতির আগে তাঁর দ্বিতীয় ও দলের চতুর্থ গোল আবাহনী সমর্থকদের দিয়েছে স্বস্তি।

ম্যাচ শেষ হওয়ার ১০ মিনিট আগে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে ডিফেন্ডার রেজাউল মাঠ ছাড়লে আবাহনী শিবির কিছুটা ভাবনায় পড়ে। অন্তিম সময়ে আবাহনীর জালে মোহামেডান বলও পাঠায়। কিন্তু অফসাইডের কারণে সেটি গোল দেননি। এ নিয়ে মোহামেডান ছিল কিছুটা ক্ষুদ্ধ।

ঘরোয়া ফুটবলে গত মৌসুমে কুমিল্লা স্টেডিয়াম ছিল বসুন্ধরা কিংস ও মোহামেডানের ‘হোম।’ কিংসের এখন নিজস্ব স্টেডিয়াম আছে, কুমিল্লা স্টেডিয়ামের স্বাগতিক এবার চট্টগ্রাম আবাহনী ও ঢাকা মোহামেডান। পুরো স্টেডিয়ামের গ্যালারির রং করা হয়েছে সাদাকালো। ফলে মোহামেডানময় একটা আবহ পাওয়া যাচ্ছিল আজকের ম্যাচে। কিন্তু ম্যাচের প্রথম ১৫ মিনিটেই আবহটা বদলে হয়ে ওঠে আবাহনীময়।

কুমিল্লা স্টেডিয়ামের এক অংশেই যা দর্শক হয়েছে
ছবি: প্রথম আলো

তবে জয়–পরাজয় একপাশে রেখে বলতেই হয়, দারুণ এক লড়াই–ই উপহার দিয়েছে দুদল। দুদলই খেলেছে আক্রমণাত্মক ফুটবল। কিন্তু আবাহনীর চাপের মুখে মোহামেডানের রক্ষণ হয়ে পড়ে বালির বাঁধের মতো। যে কারণে তাদের প্রথম ৪৫ মিনিটেই হজম করতে হয়েছে চারটি গোল।

গত বছর এই কুমিল্লা স্টেডিয়ামেই দুদলের লিগ লড়াইটা ছিল ২–২। সেদিন মোহামেডান দারুণ লড়াই করেছিল। আজ লড়াইয়ের আভাষ দিয়েও শেষ পর্যন্ত পারল না। মোহামেডানের কোচ হিসেবে শফিকুল ইসলাম মানিকের ফেরাটা হলো হার দিয়েই।

চলতি প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা দৌড়ে টিকে থাকতে এই ম্যাচে জয়ের বিকল্প ছিল না আবাহনীর। হারলে শীর্ষে থাকা বসুন্ধরা কিংসের চেয়ে ৬ ম্যাচ হাতে রেখে ৯ পয়েন্ট পিছিয়ে পড়ত। সেই অবস্থা থেকে আপাতত তারা রক্ষা পেয়েছে। শীর্ষে থাকা বসুন্ধরা কিংসের সঙ্গে আবাহনীর পয়েন্টের ব্যবধান থাকল ৬–ই। ১৬ ম্যাচে কিংসের পয়েন্ট ৪১। আবাহনী ৩৫। ২২ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের পাঁচে মোহামেডান।