ঢাকার ফুটবলে ম্যাচ পাতানোর বিস্ফোরক অভিযোগ তুলে কোচের পদত্যাগ

চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে আজমপুর ফুটবল ক্লাব উত্তরার কোচের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন সাইফুর রহমানছবি: সংগৃহীত

‘বিসিএল দেশের ফুটবলকে ধ্বংস করছে।’

বিসিএল মানে পেশাদার ফুটবল লিগের দ্বিতীয় স্তর বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগ। আর এই লিগ নিয়ে ওপরের কথাটি  খুব হতাশা নিয়ে বললেন জাতীয় দলের সাবেক স্ট্রাইকার সাইফুর রহমান (মনি)।

চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে আজমপুর ফুটবল ক্লাব উত্তরার কোচের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। কিন্তু দলের মধ্যে অনৈতিক কার্যকলাপের অভিযোগ তুলে গত ২৭ মার্চ কোচের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেছেন সাইফুর। ক্লাবটির ম্যানেজার জালাল আহমেদও একই অভিযোগ তুলে সরে দাঁড়িয়েছেন।

এই মৌসুমে আজমপুরকে সরাসরি চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে খেলার সুযোগ দিয়েছে বাফুফে। আজমপুরের কোচ ও এক কর্মকর্তা তাঁদের পদত্যাগের বিষয়টি বাফুফেকে অলাদা চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন। তবে চিঠির ভাষা একই।

কোচ সাইফুরের চিঠিতে লেখা হয়েছে, ‘চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে আমাদের (আজমপুর ক্লাব) ৭ ও ৮ নম্বর ম্যাচ বিধিসম্মতভাবে খেলা হয়েছে কি না, তা নিয়ে আমি অত্যন্ত সন্দিহান। তাই নিয়ম পরিপন্থী কোনো কাজের সঙ্গে নিজেকে জড়িত রাখতে চাই না।’

পরে বিষয়টি প্রথম আলোর কাছে খোলাসা করেন সাইফুর রহমান। তিনি বলেন, ‘ফরাশগঞ্জের বিপক্ষে লিগের ৮ নম্বর ম্যাচে মনে হয়েছে প্রতিপক্ষ দলের খেলোয়াড়েরা আমার খেলোয়াড়দের ছেড়ে দিচ্ছে। বিরতিতে এক খেলোয়াড় আমাকে বলছিল। প্রতিপক্ষ দলের এক খেলোয়াড় আমার দলের ওই খেলোয়াড়কে বলে, আমরা যেন দ্রুত গোল করি। এত মিনিটের মধ্যে এতগুলো গোল করতে হবে। এমনটাও বলে সে। আমার কাছে মনে হয়েছে এটা ম্যাচ ফিক্সিং (ম্যাচটিতে ৩-১ গোলে জিতেছিল আজমপুর।’

আজমপুর ফুটবল ক্লাবের খেলোয়াড় ও কমর্কতারা
ছবি: সংগৃহীত

সাত নম্বর ম্যাচটি আজমপুর খেলেছে উত্তরা ফুটবল ক্লাবের বিপক্ষে। ২-১ গোলে হারা সে ম্যাচ প্রসঙ্গে সাইফুর রহমানের অভিযোগ, ‘উত্তরার বিপক্ষে আমার এক ডিফেন্ডার ইচ্ছে করে বারবার বল ছেড়ে দেয়। আমি বিষয়টি বুঝতে বুঝতে যখন সে খেলোয়াড়কে পরিবর্তন করব, তার আগেই এক গোল খাইয়ে দেয় সে। মাঠে আমার দলের আরেক ডিফেন্ডারের গতিবিধিও রহস্যজনক মনে হয়েছে। উত্তরার এক খেলোয়াড় সহজে আমার দলের বিরুদ্ধে গোল করেছে, যেটা গোল হওয়ার কথা নয়। আমি বুঝেশুনে তো আর এই দলে থাকতে পারি না।’

খেলোয়াড়েরাও বুঝতে পারছেন আজমপুর দলের অনৈতিকতা ঢুকে গিয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক খেলোয়াড় বলেন, ‘ফরাশগঞ্জের বিপক্ষে আমাদের ম্যাচটি স্পষ্ট ফিক্সিং। ওদের ডিফেন্ডাররা ছেড়ে দিয়ে আমাদের বলছিল গোল করো।’

অভিযোগের তির প্রিমিয়ার লিগের দল মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রের খেলোয়াড় সালাউদ্দিন রুবেলের দিকে। তিনি মুক্তিযোদ্ধার খেলোয়াড় হলেও বেশির ভাগ সময় থাকেন আজমপুর ক্লাবের সঙ্গে। আজমপুর ক্লাবের একাধিক খেলোয়াড় প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের ক্লাবের সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন রুবেল। তাঁর কার্ড না থাকলেও তিনি ড্রেসিংরুমে আসেন, মাঠে ঢোকেন।’

আরও পড়ুন

অভিযোগের ব্যাপারে সালাউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘যে কেউ কোনো কিছু বললেই তো হলো না। আমি এগুলোর সঙ্গে যুক্ত নই। লিগে আমাদের দল (আজমপুর) এখন চার নম্বরে আছে।’

আপনি মুক্তিযোদ্ধার খেলোয়াড় হওয়া সত্ত্বেও আজমপুর আপনার দল হয় কীভাবে? এ প্রশ্নে সালাউদ্দিনের উত্তর, ‘এটা আমার বড় ভাই সাইদুর রহমান (মানিক) ভাইয়ের দল। উনি আমার এলাকার বড় ভাই। তাই এই দলটা আমি দেখাশোনা করি।’

এর আগে চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে চারটি ক্লাব সন্দেহের তালিকায় আছে বলেও জানিয়েছে বাফুফে। একই অভিযোগে গত বছর শাস্তি পেয়েছে প্রিমিয়ার লিগে ক্লাব আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ ক্লাব ও ক্লাবটির কিছু খেলোয়াড়।