তখন বলেছিলেন যুদ্ধ, এখন বলছেন যুদ্ধ নয়

১৯৮৬ সালের মেক্সিকো বিশ্বকাপ অমরত্ব দিয়েছে ডিয়েগো ম্যারাডোনাকে। বিশেষ করে সেই কোয়ার্টার ফাইনাল, আর কোয়ার্টার ফাইনালের সেই দুই গোল। ফুটবল–ইতিহাসের সবচেয়ে আলোচিত দুটি গোলের জন্ম একই ম্যাচে। মাত্র কয়েক মিনিটের ব্যবধানে। সেবার শেষ আটে ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হয়েছিল আর্জেন্টিনা। ম্যারাডোনা প্রথমে হাত দিয়ে সেই গোলটি করেন। এরপর করেন শতাব্দীর সেরা গোলটি।
ম্যাচটি ২-১ গোলে জেতার পর ম্যারাডোনা বলেছিলেন, হাত দিয়ে তিনি গোল করেননি। সেটি আসলে ছিল ‘ঈশ্বরের হাত’। ফকল্যান্ড যুদ্ধে ব্রিটিশ সেনারা আর্জেন্টিনার সঙ্গে যে ‘অন্যায়’ করেছে, এটা তারই প্রতিশোধ। কিন্তু বহুল আলোচিত সেই ম্যাচের ৩০ বছর পূর্তিতে আর্জেন্টিনা কিংবদন্তি ঠিক অন্য সুরে কথা বললেন। বললেন, ‘ফুটবল ফুটবলই, এর সঙ্গে যুদ্ধের কোনো সম্পর্ক নেই।’
গতকাল নিজের ফেসবুক পেজে ম্যারাডোনা সেই ম্যাচটি নিয়ে একটি স্মৃতিচারণামূলক আবেগময় ভিডিও পোস্ট করেছেন। যেখানে সেই ম্যাচের টুকরো টুকরো স্মৃতি উঠে এসেছে। ভিডিওর শেষে ম্যারাডোনা বলেছেন, ‘সবাই আশা করছিল যেন একটা যুদ্ধ হয়। কিন্তু ঈশ্বরের কৃপায় সেদিন শুধু ফুটবলই হয়েছে।’
ম্যারাডোনার বিদ্রোহী সত্তা যেন বয়সের সঙ্গে সঙ্গে মিইয়ে আসছে। কয়েক বছর আগে এক ইংলিশ ট্যাবলয়েড তাঁর দীর্ঘ সাক্ষাৎকার ছাপিয়েছিল। সেখানে প্রথম প্রকাশিত হয়, ৮৬ বিশ্বকাপের সেই হাত দিয়ে করা গোলের জন্য ইংল্যান্ড দল ও গোলরক্ষক পিটার শিলটনের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন ম্যারাডোনা।
এই খবর প্রকাশের পর সারা বিশ্বে আলোড়ন পড়ে যায়। ম্যারাডোনা তীব্র প্রতিবাদ করে বলেন, তাঁর স্প্যানিশ ইংরেজিতে ভুল অনুবাদ হয়েছে। ইংল্যান্ডের কাছে ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই আসে না। কারণ, তিনি অন্যায় কিছু করেছেন বলে মনে করেন না।
ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার বছর পূর্তির মুখে সেবার মুখোমুখি হয়েছিল ইংল্যান্ড-আর্জেন্টিনা। ছোট্ট একটা দ্বীপ দখল নিয়ে মুখোমুখি হওয়া যুদ্ধে দুই দেশের নয় শতাধিক সেনা মারা যায়। এ নিয়ে আর্জেন্টিনার মনে দীর্ঘদিন একটা ক্ষত ছিলই। কোয়ার্টার ফাইনালের আগে বিষয়টি নিয়ে একটা উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে। সেদিন ম্যারাডোনার অতিমানবীয় ফুটবল ইংল্যান্ডকে দেশে ফেরত পাঠায়। আর ম্যাচ শেষে ম্যারাডোনা বলেন, ‘ম্যাচের আগেও বলেছি ফুটবলের সঙ্গে মালভিনাস যুদ্ধের কোনো সম্পর্ক নেই। যদিও আমরা জানি, ওরা কত শত আর্জেন্টিনার সেনাকে মেরেছে, মেরেছে ছোট্ট পাখিকে যেভাবে মারা হয়। আর আজকের এই ম্যাচ ছিল তারই প্রতিশোধ।’