তবু স্বপ্ন দেখেন ইলিয়াস

সত্তর দশকের শেষ দিকে শহরের ব্যাংকপাড়ার সঙ্গে মধ্যপাড়ার দ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছাত মাঝেমধ্যেই। নেপথ্যে ফুটবল। দ্য জুবিলেন রেঞ্জার্সের সঙ্গে ফুটবলের লড়াইটা চলত ফ্রেন্ডস ক্লাবের। ১৯৭৭ সালে সেই লড়াই সুতীব্র হয়ে ওঠে গোপালগঞ্জ প্রথম বিভাগের শিরোপা নিষ্পত্তির ম্যাচে। ওই ম্যাচে বদলি হিসেবে খেলেন ইলিয়াস হোসেন। ব্যাংকপাড়ার তরুণ মিডফিল্ডারের পায়ের নিখুঁত কারুকাজ দেখে আবাহনীর কর্মকর্তারা তাঁকে নিয়ে যান ঢাকায়। যে ম্যাচে খেলতে গোপালগঞ্জে এসেছিলেন কাজী সালাউদ্দিনসহ ঢাকার অনেক তারকা ফুটবলার।
ফ্রেন্ডসের কাছে সেদিন ২-১ গোলে হেরেছিল জুবিলেন রেঞ্জার্স। কিন্তু ইলিয়াসকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি। আবাহনী দিয়ে তাঁর ঢাকার ক্যারিয়ার শুরু। এরপর আজাদ, ওয়ান্ডারার্স, মোহামেডান হয়ে জাতীয় দলে। ১৯৮৩ সালে মালয়েশিয়ায় মারদেকা কাপে প্রথম জাতীয় দলের জার্সি পরে খেলেন। টানা ছয় বছর খেলেছিলেন বাংলাদেশ দলে। অধিনায়কের বাহুবন্ধনীও উঠেছিল ইলিয়াসের হাতে। ১৯৯২ সালে বুটজোড়া তুলে রাখেন ইলিয়াস। সেই শেষ। এর আগে ও পরে গোপালগঞ্জ থেকে জাতীয় দলে খেলেননি কেউই!
ঢাকায় বিভিন্ন ক্লাব ও বয়সভিত্তিক দলে খেলেছেন বিজেএমসির বর্তমান কোচ জাকারিয়া বাবু, বাফুফের তালিকাভুক্ত কোচ আবদুর রাজ্জাক। ক্লাবে খেলেছেন আবদুল মান্নান, আবদুস সামাদ ভূঁইয়া, সোহরাব হোসেনরা।
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে যেন থমকে দাঁড়ায় গোপালগঞ্জের ফুটবল। ধীরে ধীরে কমে ফুটবলচর্চা। অন্যান্য জেলার মতো এখানেও ডিএফএ (জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন) তৈরির পর বিবর্ণ ফুটবল। শুধু একজন ইলিয়াস উঠে এসেছিলেন গোপালগঞ্জ থেকে। সেই ইলিয়াসেই থমকে আছে এই জেলার ফুটবল।
অথচ এখানে রয়েছে ফুটবল স্টেডিয়াম। ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে তোলা একটি একাডেমিও রয়েছে। বিকেল গড়াতেই শেখ ফজলুল হক মণি স্টেডিয়ামে কিশোর ফুটবলারদের ভিড়। বিপিএলের মতো বড় আসর বসলে দর্শক উপচে পড়ে গ্যালারিতে। কিন্তু তারপরও কেন ফুটবলার উঠে আসছে না গোপালগঞ্জে?
স্থানীয় ডিএফএর সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নান বললেন, ‘তরুণদের বেশির ভাগই ক্রিকেটমুখী। আর বাফুফে থেকেও সেভাবে অনুদান পাই না। শেরেবাংলা, সোহরাওয়ার্দী কাপ, কমিশনার গোল্ডকাপের আয়োজন করে না ফেডারেশন। তৃণমূল পর্যায়ে ফুটবলচর্চা বন্ধ হয়ে গেছে। এ জন্যই ফুটবলার উঠে আসে না।’
যদিও তাঁর দাবি গত কয়েক বছর নিয়মিত লিগ আয়োজন করছে ডিএফএ। কিন্তু এই ফুটবলারদের গন্তব্য জেলা লিগেই।
এত কিছুর পরও স্বপ্ন দেখেন বাফুফের কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য ইলিয়াস হোসেন, ‘ফুটবল যাতে শেষ না হয় এ জন্যই আমাদের এত আয়োজন। বিপিএলের ভেন্যু আবারও গোপালগঞ্জে এনেছি। আমার জন্ম এখানে। এই মাঠে ফুটবল শুরু। এর প্রতি ভালোবাসা আছে, দায়বদ্ধতাও আছে। নিয়মিত লিগ আর টুর্নামেন্ট করেই একাধিক ইলিয়াসকে বের করে আনব।’