হাত দিয়ে বল ঠেকানো যায়, ভুলে গিয়েছিলেন এই গোলকিপার

দুই হাত পেছনে নিয়ে গোল ঠেকানোর প্রস্তুতি নেন কমোরসের গোলকিপার শাকের আলহাদুরছবি: টুইটার

সে এক অদ্ভুত দৃশ্য। ক্যামেরুন স্ট্রাইকার ভিনসেন্ট আবুবকরের পায়ে বল। সামনেই কমোরোসের গোলকিপার। ফুটবলের ভাষায় ‘ওয়ান-ওয়ান’ পরিস্থিতি। মানে, মুখোমুখি গোলকিপার ও স্ট্রাইকার।

এমন পরিস্থিতিতে গোলকিপাররা সাধারণত দুই হাত দুই পাশে ছড়িয়ে প্রস্তুতি নেন যেকোনো একদিকে ডাইভ দেওয়ার। কিন্তু কাল আফ্রিকান নেশনস কাপে কমোরসের গোলকিপার শাকের আলহাদুর যা দেখালেন, প্রতিদিন তা দেখা যায় না।

আবুবকর বল পায়ে যতই এগিয়ে আসছিলেন, আলহাদুরও তাঁকে ঠেকানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন দুহাত পেছনে রেখে, যেন বল হাতে লাগলেই পেনাল্টি! আলহাদুর যে গোলকিপার তা বুঝি ভুলেই গিয়েছিলেন!

ক্যামেরুন সে যাত্রায় (৭০ মিনিট) জয়সূচক গোল (২-১) পেলেও আলহাদুরকে আসলে দোষ দেওয়া যায় না। তিনি তো গোলকিপার নন! কালকের ম্যাচে তিনি কমোরোসের গোলপোস্টের নিচে দাঁড়িয়েছিলেন ঠিকই, তবে সেটা বাধ্য হয়ে।

কোভিড পজিটিভ হওয়া এবং চোটের কারণে এ ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়েন কমোরোসের ১২ খেলোয়াড়। তিন গোলকিপারও আছেন তাঁদের মধ্যে। দুজন কোভিড পজিটিভ এবং অন্য গোলকিপার চোট পেয়েছেন।

এমন জরাজীর্ণ অবস্থা নিয়েই নিজেদের ফুটবল ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচটা (শেষ ষোলো) খেলতে নেমেছিল কমোরোস।

গোলকিপার না থাকায় লেফটব্যাক শাকের আলহাদুরকে গোলপোস্টে দাঁড় করায় কমোরোস টিম ম্যানেজমেন্ট। ম্যাচের ওই মুহূর্তে হাত দিয়ে বল ঠেকানোর কথা আলহাদুর ভুলে গেলেও দারুণ কিছু সেভ করেন তিনি।

ফুটবল-পরিসংখ্যান নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান ‘অপটা’ জানিয়েছে, ক্যামেরুনের নেওয়া ছয়টি শটের মধ্যে চারটি সেভ করেছেন আলহাদুর। এর মধ্যে তিনটিই বক্সের ভেতর—ডানে, বাঁয়ে ডাইভ দিয়ে গোল বাঁচান আলহাদুর।

একটি সেভ তো চোখ কপালে তোলার মতো—আবুবকর আবারও একা পেয়েছিলেন আলহাদুরকে। এ যাত্রায়ও দুটি হাত পেছনে রাখলেও গোল ঠেকান পা দিয়ে।

আলহাদুর যেহেতু একজন ডিফেন্ডার, বক্সের মধ্যে প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়কে চ্যালেঞ্জ জানানোর সময় হাত পেছনে রাখাটা তাঁর অভ্যাসই হয়ে যাওয়ার কথা। বক্সের মধ্যে হাতে বল লাগলেই যে পেনাল্টি! গ্লাভস হাতে গোলকিপার বনে গেলেও এত দিনের অভ্যাসটা তিনি ছাড়বেন কী করে!

৭ মিনিটের মাথায় কমোরোস অধিনায়ক ও মিডফিল্ডার নাদিম আবু লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়ার পর বিপদে পড়ে কমোরোস। মাঝমাঠে তেমন কোনো বাধা ছাড়াই কমোরোস বক্সে ঢুকে আলহাদুরের পরীক্ষা নিয়েছে শক্তিশালী ক্যামেরুন।

জয়ের পর ক্যামেরুন গোলকিপার ওনানা গিয়ে জড়িয়ে ধরেন আলহাদুরকে। ফরাসি ক্লাব আজাক্সিওর লেফটব্যাক পোস্টের নিচে যে ভালোই দক্ষ, ওনানা নিজের অভিবাদনে সেটা বুঝিয়ে দেন। তবে ইয়াউন্দের কাছে পল বিয়া স্টেডিয়ামে এ ম্যাচ শুরুর আগে পদপিষ্ট হয়ে ৮ জনের মৃত্যুর খবর না জেনেই খেলতে নেমেছিল ক্যামেরুন-কমোরোস।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই শাকের আলহাদুরের প্রশংসা করেন। এক ফুটবলপ্রেমীর টুইট, ‘কমোরোসের গোলকিপার ম্যাচসেরা। দাঁড়ান, দাঁড়ান! সে তো গোলকিপারই না!’ তবে কমোরোস দলের গোলকিপারদের কোচ জ্যাঁ ড্যানিয়েল-পাদোভানি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, গোলকিপার নিয়ে সংকটে পড়লে বিকল্প কাউকে আগেই ভেবে রাখা হয়েছিল।

কাল কমোরোসের একাদশ দেখার পর বোঝা যায়, সেই বিকল্প তাহলে আলহাদুর। অনুশীলনে ভালো করায় পাদোভানি তখন বলেছিলেন, ‘একজন খেলোয়াড় আছে, অনুশীলনে সে ভালো গোলকিপিং করেছে।’