তুর্কমেনিস্তানের সঙ্গে সেই ম্যাচ ভোলেননি গোলকিপার বিপ্লব

সেই সময়ের বাংলাদেশ দলের সঙ্গে গোলকিপার বিপ্লব ভট্টাচার্যছবি: সংগৃহীত

রেকর্ডপত্র ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে, তুর্কমেনিস্তানের সঙ্গে একটি মাত্র ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। সেটিও আজ থেকে ২০ বছর আগে। ২০০২ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে অনুষ্ঠিত এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশ মুখোমুখি হয় তুর্কমেনিস্তানের। সেই ম্যাচের গোলকিপার বিপ্লব ভট্টাচার্য এখন বাংলাদেশ ফুটবল দলের গোলকিপিং কোচ।

২০ বছর পর আজ কুয়ালালামপুরে যখন দ্বিতীয়বারের মতো তুর্কমেনিস্তানের মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ, বিপ্লব স্মৃতির দরজা খুলে ঢুকে পড়ছেন বুসান এশিয়ান গেমসের সেই দিনটিতে। কুয়ালালামপুরে টিম হোটেলে বসে বললেন, ‘সেবার এশিয়ান গেমসে আমরা তিনটি ম্যাচ খেলেছিলাম। ভারত, চীন আর তুর্কমেনিস্তানের কাছে হেরেছিলাম। তিনটি ম্যাচেই আমি ছিলাম গোলকিপার। চোট থাকায় আমিনুল সেই সফরে যেতে পারেনি।’

সফরটা বিপ্লবের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। কারণ, বারের নিচে তাঁর নৈপুণ্য চোখ কেড়েছিল। তিনটা ম্যাচেই হারলেও বাংলাদেশকে নির্ভরতা দিয়েছিলেন তিনি। সেবার চীন মাত্র বিশ্বকাপ খেলে এসে এশিয়ান গেমসে নামে। চীনের বিশ্বকাপ দলের ৩ জন ছিলেন বুসানে খেলা সেই দলটিতে। তিন ম্যাচে ১ গোল করে ৯ গোল খেয়েছিল বাংলাদেশ।

আরও পড়ুন
বিপ্লব ভট্টাচার্য এখন বাংলাদেশ দলের গোলকিপিং কোচ
ছবি: সংগৃহীত

২৭ সেপ্টেম্বর ২০০২, ভারতের কাছে ৩-০ গোলে হার। ৩০ সেপ্টেম্বর একই ব্যবধানে হার চীনের কাছে এবং ৩ অক্টোবর তুর্কমেনিস্তানের কাছে ৩-১ গোলে হার।
২১ মিনিটে উরাজভের গোলে তুর্কমেনিস্তান ১-০ করেছিল। ৩৫ মিনিটে ডিফেন্ডার মোহাম্মদ সুজনের গোলে ১-১। এরপর ৩৮ ও ৪২ মিনিটে আরও দুটি গোল খেয়েছে বাংলাদেশ। উরাজভ করেছিলেন জোড়া গোল। ম্যাচের ৪টি গোলই হয়েছিল প্রথমার্ধে। বোঝাই যাচ্ছে, কয়েক মিনিটের ঝড়েই শেষ বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানোর যাবতীয় আশা।

সেই সময়ে ফিরে গিয়ে তুর্কমেনিস্তান ম্যাচটা নিয়ে বিপ্লব বলেন, ‘সেদিন আমরা প্রথম গোল খেয়ে ম্যাচে ফিরে এলেও বেশি আক্রমণাত্মক খেলতে গিয়ে বিপদ হয়েছিল। ওরা সুযোগ কাজে লাগিয়ে আরও দুটি গোল করে ম্যাচ জিতে নেয়। তবে আমি বেশ কয়েকটি ভালো সেভ করেছিলাম। প্রথমার্ধের কয়েক মিনিটের ঝড়টা আমরা সামলাতে পারি। সম্ভবত দ্বিতীয় গোলটা কারও শরীরে লেগে দিক বদলায়, আমি বলটা ঠিকমতো দেখিনি।’

তুর্কমেনিস্তান তখনো অনেক ভালো দল ছিল। শারীরিকভাবে এগিয়ে ছিল বাংলাদেশের চেয়ে। ২০ বছরে দলটি আরও উন্নতি করেছে। আজ তাই বাংলাদেশ সময় বেলা সোয়া তিনটায় তুর্কমেনিস্তানের মুখোমুখি হওয়া বাংলাদেশের জন্য বড় এক চ্যালেঞ্জ। ২০ বছর আগেও তাই ছিল। এখন তবু বাংলাদেশ অনেক ম্যাচ খেলে, প্রস্তুতিও ভালো। কিন্তু সেবার বুসান যাওয়ার আগে বাংলাদেশের তেমন প্রস্তুতি ছিল না।

আরও পড়ুন

সেসব স্মৃতি তুলে এনে বিপ্লব যোগ করেন, ‘মনে আছে, চীনের ম্যাচের অনেকগুলো সেভ করেছি। ম্যাচ শেষে চীনের ম্যানেজার আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘‘তুমি কোন দেশে খেলো’’? বলেছিলাম, বাংলাদেশে। তিনি বলেছিলেন, ‘‘তুমি তো অন্য দেশে খেলার সামর্থ্য রাখো’’। আমি বলি, আমাদের এজেন্ট নেই। সুযোগ থাকলেও ভালো এজেন্টের অভাবে দেশের বাইরে লিগ খেলা হয়ে ওঠে না আমাদের।’

এশিয়ান গেমসে আজকের মতো তখনো অনূর্ধ্ব-২৩ দল খেলত। নিয়ম অনুযায়ী, বাংলাদেশ দলে ৩ জন সিনিয়র খেলোয়াড় ছিলেন—আলফাজ আহমেদ, আরিফ খান জয় আর আরমান মিয়া। অধিনায়ক ছিলেন আলফাজ। দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন মতিউর মুন্না, মাহমুদুল হাসান, রজনী কান্ত বর্মণ, মনোয়ার মুন্নারা।

সেই দলের পরিচিত মুখ ডিফেন্ডার ফিরোজ মাহমুদ টিটু বলেন, ‘তুর্কমেনিস্তান টিমের সমন্বয় ছিল অনেক ভালো। ওদের স্পিড, স্ট্যামিনা অনেক ভালো ছিল আমাদের চেয়ে। ফলে আমরা পেরে উঠিনি। তবে আমরা ভালো লড়াই করেছিলাম সেদিন।’

আরও পড়ুন
আনিসুর রহমানদের নিয়ে ব্যস্ত বিপ্লব ভট্টাচার্য
ছবি: সংগৃহীত

সেই বুসান এশিয়ান গেমসে খেলার অভিজ্ঞতায় ফিরোজ মাহমুদের সংযোজন, ‘আসলে তখনকার সময়ে আন্তর্জাতিক ম্যাচের শুরুতে আমরা অনেক নার্ভাস থাকতাম, পরে আস্তে আস্তে সেট হতাম। এটা আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার অভাবে হতো। আমাদের সময় অনেক কম আন্তর্জাতিক ম্যাচ হতো। ফলে আমরা পিছিয়ে থাকতাম অনেক।’

তাঁর মতে, অন্যরা অনেক লম্বা সময় প্রস্তুতি নিতে পারলেও বাংলাদেশের প্রস্তুতি ভালো হতো না। তা ছাড়া ফুটবলের প্রাথমিক বিষয়গুলোতেই বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের সমস্যা হতো। ফলে চেষ্টা থাকলেও আন্তর্জাতিক মঞ্চে গিয়ে তেমন কিছু করতে পারতেন না তাঁরা।

বুসান এশিয়ান গেমসের আগে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২৩ দল অলিম্পিক বাছাইয়ে হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে দুটি ম্যাচ খেলেছিল মিয়ানমারের সঙ্গে। বুসান থেকে ফিরেই সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের প্রস্তুতি শুরু করেছিল বাংলাদেশ। তারপর তো ইতিহাস। কোচ জর্জ কোটানের অধীন দেশের মাটিতে সাফ শিরোপা ঘরে তোলেন আমিনুল, আলফাজ, বিপ্লবরা।

আরও পড়ুন