তুর্কিদের খালি হাতে ফিরিয়ে শেষ ষোলোর অপেক্ষায় সুইসরা

দারুণ খেলে জোড়া গোল করেন সুইস তারকা জেরদান শাকিরি।ছবি: রয়টার্স

ইউরোয় 'এ' গ্রুপ থেকে শেষ ষোলো আগেই নিশ্চিত করেছে শীর্ষস্থানীয় ইতালি। দ্বিতীয় দল হিসেবে উঠছে কোন দল, সেই হিসেবটা মিলে গেল আজ গ্রুপের শেষ রাউন্ডের লড়াইয়ে।

ওয়েলস দ্বিতীয় দল হিসেবে শেষ ষোলোয় ইতালির সঙ্গী হয়েছে। আর বাকুতে তুরষ্ককে ৩-১ গোলে হারিয়ে তৃতীয় স্থান নিশ্চিত করেছে সুইজারল্যান্ড। ছয়টি গ্রুপে তৃতীয় হওয়া ছয় দলের মধ্যে শীর্ষ চারে থেকে শেষ ষোলোয় ওঠার আশা ধরে রাখল সুইসরা

গ্রুপপর্বের খেলা শেষে তুরষ্ককে ফিরতে হচ্ছে শুন্য হাতে। ৩ ম্যাচের সবকটিতেই হার, কোনো পয়েন্ট পায়নি তারা। প্রাপ্তির মধ্যে শুধু একটি গোল, সুইসদের বিপক্ষে হারের ব্যবধান কমানোর স্বান্ত্বনাসূচক সেই গোলে তুরষ্কের আক্ষেপ মোটেও কমবে না। ৩ ম্যাচ থেকে কোনো পয়েন্ট না পেয়ে গ্রুপের তলানির দল হিসেবে বাড়ি ফিরতে কার ভালো লাগে!

৩ ম্যাচের সবগুলো জিতে ৯ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষ দল হিসেবে শেষ ষোলোয় উঠল ইতালি। ওয়েলসকে নিজেদের শেষ ম্যাচে ১-০ গোলে হারিয়েছে তারা। ওয়েলস ও সুইজারল্যান্ড সমান ৪ পয়েন্ট পেলেও গোলব্যবধানে এগিয়ে গ্রুপের দ্বিতীয় দল হিসেবে শেষ ষোলোয় উঠেছে ওয়েলস।

সুইজারল্যান্ডকে প্রথম গোলটি এনে দেন সেফারোভিচ। সতীর্থদের সঙ্গে তাঁর উদযাপন।
ছবি: রয়টার্স

আজ তুরষ্কের বিপক্ষে এই গোলব্যবধান কমানোর চেষ্টায় কোনো ঘাটতি না রেখেও শেষ পর্যন্ত সুইসদের ভাগ্যে শিকে ছেড়েনি। ৩ ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় সুইসরা।

শেষ ষোলোয় ওঠার আশা ধরে রাখতে তুরষ্কের বিপক্ষে জয়ের বিকল্প ছিল না সুইসদের। এমন কঠিন ম্যাচে তাদের আশার বাতিঘর হয়ে জ্বলে ওঠেন 'আলপাইন মেসি'খ্যাত বাঁ পায়ের উইঙ্গার জেরদান শাকিরি। জোড়া গোল করেন লিভারপুল তারকা। তবে সুইসদের হয়ে গোলের শুরুটা করেন বেনফিকা স্ট্রাইকার হারিস সেফারোভিচ।

গতি ও আক্রমণ ও দুরপাল্লার শটের প্রদর্শনির এ ম্যাচে তিনটি গোল হয় বক্সের বাইরে থেকে। তিনটি শটের মধ্যে কোনোটাই কোনোটির চেয়ে কম নয়! ম্যাচের প্রথম পাঁচ মিনিটের মধ্যে সুইজারল্যান্ডের রক্ষণে চারটি আক্রমণ করে নিজেদের মেজাজ বুঝিয়ে দিয়েছিল তুরষ্ক।

কিন্তু ৬ মিনিটের মাথায় দলে ফেরা স্টেফান জুবেরের পাস থেকে তুরস্ককে উল্টো গোল হজম করান সেফারোভিচ। বক্সের বাইরে পাওয়া পাস থেকে বাঁ পায়ের কোনাকুনি মাটি কামড়ানো জোরাল শটে গোল করেন তিনি।

হারের শোকে কাতর তুরষ্কের এক খেলোয়াড়কে টেনে তুলছেন সুইজারল্যান্ডের বেনিতো।
ছবি: রয়টার্স

প্রথমার্ধেই ২-০ গোলে এগিয়ে গিয়েছিল সুইজারল্যান্ড। ২৬ মিনিটে শাকিরি করা গোলটি স্রেফ চোখে লেগে থাকার মতো। আবারও জুবেরের পাস থেকে বক্সের বাইরে বল পান শাকিরি। প্রথম টাচে বলটা জায়গামতো নেন তিনি। এরপর ডান পায়ে বাতাসে ভাসানো বাঁকানো শটে করা তাঁর গোলটি ঠেকাতে তুর্কি গোলকিপার উরজান চাকিরের কিছুই করার ছিল না। বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে পড়েও তিনি কিছু করতে পারেননি।

তুরষ্ক প্রথমার্ধে একেবারে খারাপ খেলেনি। সুইসদের গোলপোস্ট তাক করে ১২টি শট নিলেও পোস্টে রাখতে পেরেছে ৪টি শট। প্রথমার্ধে ৫৫ শতাংশ সময় বল দখলে রেখেও সুইসদের রক্ষণে চিড় ধরাতে পারেননি বুরাক ইলমাজরা।

কিন্তু সুইসরা তুর্কি রক্ষণের ফোঁকর ঠিকই বের করে গোল করেছে। শাকিরির গোলের সময় যেমন, তাঁর চার পাশে তিন ডিফেন্ডার থাকলেও কেউ তাঁর শট আটকানোর চেষ্টা করেনি!

তুর্কি মিডফিল্ডার ইরফান কাহভেজির শট ঠেকাতে পারেননি সুইজারল্যান্ডের গোলরক্ষক সোমার।
ছবি: রয়টার্স

ম্যাচ শেষের পরিসংখ্যান বলছে দুই দল সমান ৫০ শতাংশ সময় ধরে বল দখলে রাখে। কিন্তু আক্রমণে সুইসরাই এগিয়ে ছিল। ৬৮ মিনিটে প্রতি আক্রমণ থেকে নিজের দ্বিতীয় গোল আদায় করে নেন শাকিরি।

সুইসদের গতির সঙ্গে এ সময় কুলিয়ে উঠতে পারেনি তুর্কি রক্ষণ। গত ৭ বছরের মধ্যে এই প্রথম জাতীয় দলের হয়ে কোনো ম্যাচে জোড়া গোল করলেন শাকিরি।

সুইসদের গোলপোস্টের মধ্যে মোট ৬টি শট রাখতে পেরেছে তুর্কি আক্রমণভাগ। বেশ ভালো কয়েকটি সেভ করেন সুইস গোলরক্ষক ইয়ান সোমার। কিন্তু ৬২ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে তুর্কি মিডফিল্ডার ইরফান কাহভেজির বাঁ পায়ের শটে করা গোলের কোনো জবাব ছিল না সোমারের কাছে।

জোড়া গোল পাওয়ার পর শাকিরির উদযাপন।
ছবি: রয়টার্স

তুরষ্কের গোলরক্ষক চাকিরেরও কঠিন পরীক্ষা নিয়েছে সুইসরা। গোলপোস্টের মধ্যে মোট ১০টি শট রাখতে পেরেছে সুইজারল্যান্ড। বেশ কিছু ভালো সেভ করেছেন চাকির। তবে গ্রানিত জাকার ফ্রি-কিক পোস্টে লেগে লক্ষ্যভ্রষ্ঠ না হলে জয়ের ব্যবধান বাড়াতে পারত সুইজারল্যান্ড।

দুই দল মিলে মোট ৪১টি আক্রমণ করেছে। স্কোরবোর্ডে তাই মাত্র চার গোল দিয়ে এই ম্যাচের পুরো চিত্র বোঝা যায় না। ১৯৮০ সালের পর ইউরোয় এটি ছিল দ্বিতীয় ম্যাচে যেখানে দুই দলই প্রথমার্ধে ন্যূনতম ১০টি করে শট নিয়েছে প্রতিপক্ষের গোলপোস্ট তাক করে।