দশরথে দ্বিতীয় অভিষেক বিপ্লবের

দশরথ স্টেডিয়ামে বিপ্লবছবি: সংগৃহীত

কাঠমান্ডুর দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে পা রাখতেই গতকাল যেন দুই যুগ আগে ফিরে গেলেন বিপ্লব ভট্টাচার্য। নেপালের এই স্টেডিয়ামজুড়ে অনেক স্মৃতিই বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক গোলরক্ষকের। কোনোটা মধুর, কোনোটা কষ্টের। এই স্টেডিয়ামেই আন্তর্জাতিক অভিষেক হয়েছিল তাঁর।

১৯৯৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে মালদ্বীপের বিপক্ষে জাতীয় দলের অভিষেক হয় বিপ্লবের। সেই মাঠেই ২৪ বছর পর অভিষেক হলো কোচ বিপ্লবের।

দশরথ স্টেডিয়ামে নতুন ভূমিকায় বিপ্লব
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দল এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে এখন নেপালে আছে। সেই দলেরই গোলরক্ষক কোচ হিসেবে নেপাল গেছেন বিপ্লব। গতকাল নারী দলের ডাগআউটে দাঁড়ানোর অনুভূতি জানাতে গিয়ে কাঠমান্ডু থেকে মুঠোফোনে বিপ্লব বলছিলেন, ‘মাঠে যাওয়ার আগে থেকেই আমি প্রচণ্ড রোমাঞ্চিত ছিলাম।’

মাঠে দেখা হয় পুরোনো বন্ধু নেপাল জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার হরি খাড়কার সঙ্গে। দুই বন্ধু মেতে ওঠেন আড্ডায়, ‘মাঠে নেপাল ফুটবল ফেডারেশনের সহসভাপতি উপেন্দ্র মান সিং আর হরি খাড়কার সঙ্গে দেখা হতেই দুজন আমাকে জড়িয়ে ধরে। দুজনই আমার পুরোনো বন্ধু। ওরা আমাকে দেখে খুব খুশি। ওদের সঙ্গে আমি ফুটবল খেলেছি। দুজনই ১৯৯৯ সাফ গেমসের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছিল বারবার।’

কাল মেয়েদের দলের কোচ হিসেবেও দশরথে ছিলেন বিপ্লব
ছবি: সংগৃহীত

কাঠমান্ডুতে ১৯৯৭ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে অভিষেক হলেও সেবার টুর্নামেন্টটা তেমন ভালো কাটেনি বিপ্লবের। গ্রুপ পর্বে প্রথম ম্যাচে মালদ্বীপের সঙ্গে ১–১ গোলে ড্র বাংলাদেশের। পরের ম্যাচে ভারতের কাছে ৩–০ গোলে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে পড়েন বিপ্লবরা।

এরপর ১৯৯৯ সালের দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামেই বিপ্লবের নৈপুণ্যে মুগ্ধ হয়েছিল সবাই। ফাইনালে নেপালকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ। একমাত্র গোলটি করেন আলফাজ আহমেদ। তবে ওই ম্যাচে বিপ্লব গোলপোস্টের নিচে ছিলেন বিশ্বস্ত। নেপালকে গোলই করতে দেননি।

বিপ্লব ভট্টাচার্য
ফাইল ছবি: প্রথম আলো।

ওই ম্যাচের স্মৃতি আজও নাড়া দেয় বিপ্লবকে, ‘এই মাঠে ঢুকে সেদিনের অসাধারণ মুহূর্তগুলো চোখের সামনে ভেসে উঠছিল। মনে পড়ছিল ফাইনালের পরদিনের কথা। আমরা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর মার্কেটে শপিং করতে যাচ্ছিলাম। ট্যাক্সি ড্রাইভারকে বলতেই হাসিমুখে আমাকে নিয়ে গেল। কিন্তু তখনো আমি বুঝতে পারিনি যে ড্রাইভার আমাকে মার্কেটে নামিয়ে ভাড়া নেবে না। বলছিল, তোমার জন্যই হেরেছে নেপাল। তুমি একাই নেপালকে হারিয়ে দিয়েছ। কিন্তু তোমার কথা ভুলতে পারব না। তোমার খেলা দেখে আমি মুগ্ধ। অনেক জোরাজুরি করেও সেদিন ভাড়া দিতে পারিনি। আমার জীবনে সেটা ছিল অমূল্য মুহূর্ত।’

প্রায় আড়াই বছর পর আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিরে গতকাল নেপালের কাছে বাংলাদেশের মেয়েরা হেরেছে ২–১ গোলে। তবে গোলকিপার কোচ বিপ্লবের মুখে প্রশংসাই ঝরল মেয়েদের, ‘প্রায় আড়াই বছর পর মাঠে নেমে ভালোই খেলেছে মেয়েরা। আস্তে আস্তে আরও উন্নতি করবে এবং ভালো খেলবে আশা করি।’