দুই বছর পরপর বিশ্বকাপ হলে ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টায় প্রাণ হারাবেন না কেউ

ফিফা সভাপতি ইনফান্তিনোফাইল ছবি : এএফপি

উন্নত জীবনের আশায় শুরু হয়েছিল যাত্রা, শেষ হলো ঠান্ডায় মৃত্যুতে। ২৫ জানুয়ারি সাতজন বাংলাদেশির মৃত্যুর খবর এসেছে। অবৈধভাবে নৌকাযোগে লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগরে অবস্থিত ইতালির লাম্পেদুসা দ্বীপের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন। যাত্রাপথে শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত কমে যাওয়ায় তাঁরা প্রাণ হারিয়েছেন। উন্নত জীবনের আশায় সে নৌকায় ছিলেন মোট ২৮০ অভিবাসনপ্রত্যাশী। তাঁদের মধ্যে বাংলাদেশি যেমন ছিলেন, ছিলেন মিসরের বাসিন্দারাও।

গতকাল এমনই আরও ১৮ অভিবাসনপ্রত্যাশীর মৃত্যুর খবর জানিয়েছে স্পেন। এ ক্ষেত্রে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের লক্ষ্য ছিল স্পেনের মূল ভূখণ্ড থেকে অনেক দূরের ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জ। আটলান্টিক মহাসাগরে অবস্থিত আফ্রিকার নিকটবর্তী এই দ্বীপপুঞ্জে যাওয়ার চেষ্টারত তিন শতাধিক মানুষকে বিভিন্ন নৌকা থেকে উদ্ধার করেছে স্প্যানিশ কর্তৃপক্ষ। তাঁরা যাত্রা শুরু করেছিলেন উত্তর আফ্রিকা থেকে। কিছুদিন পরপরই খোলা সাগরের জন্য অনুপযুক্ত নৌকায় চরে আফ্রিকা থেকে ইউরোপে পাড়ি জমানোর আশায় মৃত্যুর খবর ধাক্কা দেয় সবাইকে।

ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো বলছেন, দুই বছর পরপর বিশ্বকাপ হলে এভাবে ইউরোপে যাওয়ার পথে প্রাণ হারানোর ঘটনা ঘটবে না!

উয়েফা সভাপতি আলেক্সান্দার সেফেরিন দুই বছর পরপর বিশ্বকাপের বিরোধী
ফাইল ছবি

২০১৬ সালে ফিফার সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই আর্থিক দিকে নজর দিয়েছেন ইনফান্তিনো। সে সঙ্গে ইউরোপিয়ান ফুটবল ফেডারেশনের (উয়েফা) ক্ষমতা খর্ব করে পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন এই সুইস ফিফা কর্মকর্তা। দুই লক্ষ্য একসঙ্গে অর্জনের উদ্দেশ্যে ৩২ দলের ফুটবল বিশ্বকাপকে ৪৮ দলের করা হয়েছে।

এবার চেষ্টা চালাচ্ছেন দুই বছর পরপর বিশ্বকাপ আয়োজনের। এতে ফিফার অপেক্ষাকৃত দুর্বল সদস্য দেশগুলো যেন আগ্রহী হয়ে পক্ষে ভোট দেয় সেটা নিশ্চিত করতে, বড় অঙ্কের প্রলোভন দেওয়া হয়েছে। জানানো হয়েছে, এই প্রস্তাবের ফলে ৪ বছরে অন্তত ২ কোটি ৫০ লাখ ডলার (২১৪ কোটি ২৮ লাখ টাকা) পাবে সব ফেডারেশন!

কিন্তু ফুটবলের সবচেয়ে সফল দুটি অঞ্চল—ইউরোপ ও দক্ষিণ আমেরিকা এই প্রস্তাবে রাজি নয়। এরই মধ্যে বিশ্বকাপ বয়কটের হুমকি দিয়ে রেখেছে দুই ফেডারেশন। তারকা ফুটবলাররা বাড়তি টুর্নামেন্টের ফলে নানা সম্ভাব্য ক্ষতির কথা তুলে ধরছেন সুযোগ পেলেই।

আফ্রিকান ও আরব দেশগুলোকে নিজের পক্ষে ব্যবহার করতে চানফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো
ফাইল ছবি: রয়টার্স

এ অবস্থায় গতকাল ফ্রান্সের স্ত্রাসবুরে ইউরোপীয় কাউন্সিলের সংসদীয় পরিষদের সামনে নিজের নতুন যুক্তি তুলে ধরেছেন ইনফান্তিনো। ইউরোপিয়ান আইনপ্রণেতাদের সামনে বলেছেন কতিপয় মানুষ ফুটবল নিয়ন্ত্রণ করছে, তারাই সব পাচ্ছে। ফুটবলকে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দিতে চাচ্ছেন ইনফান্তিনো। এভাবে সবকিছু ছড়িয়ে দিতে পারলেই অভিবাসন সমস্যা দূর হবে বলে মনে করেন ফিফা সভাপতি, ‘পুরো বিশ্বকে সঙ্গী করার উপায় খুঁজতে হবে আমাদের। আফ্রিকানদের আশা জোগাতে হবে, যেন তারা ভালো জীবনের আশায় ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে মৃত্যুবরণ না করে।’

ফিফার বিশ্ব ফুটবলের উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক আর্সেন ওয়েঙ্গারকে সঙ্গী করে অধিবেশনে যোগ দিয়েছিলেন ইনফান্তিনো। সভাপতির দাবি, অভিবাসন সমস্যার সমাধান দান নয়, সম্পদের সমান বণ্টনে, ‘আমাদের উচিত সুযোগ দেওয়া, সম্মান দেওয়া, দান নয়। পুরো বিশ্বকে অংশগ্রহণ করার সুযোগ দিতে হবে।’

মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের পক্ষে কথা বলা ইউরোপীয় কাউন্সিলের আইনপ্রণেতাদের ইনফান্তিনো আরও বলেন, ‘ইউরোপে আর নতুন সম্ভাবনা ও অনুষ্ঠানের দরকার নেই।’

বিশ্বের সেরা সব খেলোয়াড় এখন ইউরোপের ক্লাব ফুটবলে খেলেন। দক্ষিণ আমেরিকা অর্থাৎ ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, উরুগুয়ে বা কলম্বিয়ার কিশোর-তরুণেরাও আলো ছড়ানো শুরু করতেই ইউরোপে চলে আসেন। তাই সবচেয়ে আকর্ষণীয় ফুটবলের জন্য সবাই ইউরোপিয়ান ফুটবল অনুসরণ করেন। ইনফান্তিনো এর অবসান চান, ‘ফুটবলের উচিত না সারা বিশ্বকে বলা, “তোমরা সব টাকা আর সেরা খেলোয়াড়দের আমাদের দিয়ে দাও, আর খেলা টিভিতে দেখ।”’

সারা বিশ্বেই ফুটবলের অর্থ ছড়িয়ে দিতে চান ইনফান্তিনো, ‘আমাদের উচিত ফুটবলকে বৈশ্বিক করা, আমাদের উচিত ইউরোপে যে মান সৃষ্টি করা হয়েছে, সেটা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া।’ এমন অনুপ্রেরণাদায়ী বক্তব্যের শেষটায় অবশ্য হতাশার কথাও জানিয়েছেন ফিফা সভাপতি। বলেছেন, ‘হয়তো দুই বছর পরপর বিশ্বকাপ আয়োজন এসব সমস্যার উত্তর নয়!’