নেইমারের চোটে বিরক্ত পিএসজি নেইমারেরই দায় দেখছে

নেইমারের চোটের কারণ তিনি নিজেই?ছবি : এএফপি

‘আর কাঁহাতক সহ্য করা যায়?’

পিএসজি হয়তো এমনটাই ভাবছে। আর ভাববে নাই–বা কেন? ২০১৭ সালে ২২ কোটি ২০ লাখ ইউরোর আকাশছোঁয়া ট্রান্সফার ফি দিয়ে, হাজারো নাটক করে নেইমারকে বার্সেলোনা থেকে দলে টানার পেছনে মূল লক্ষ্যই তো ছিল পিএসজিকে মহাদেশীয়ভাবে সফল ক্লাব বানানো।

গত মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে দলকে নিয়ে গেছেন নেইমার, শেষ পর্যন্ত যদিও শিরোপা জেতা হয়নি। কিন্তু এর বাইরে প্রতিবারই চ্যাম্পিয়নস লিগের নকআউট পর্ব এলেই নেইমার পড়েন চোটে। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি। সব মিলিয়ে তাই নেইমারের ওপরই কিছুটা বিরক্ত হয়েছে পিএসজি, এমনটাই জানাচ্ছে স্প্যানিশ দৈনিক স্পোর্ত। চোটের পেছনে নেইমারের জীবনযাপনের ধরনের দায় দেখছে ফরাসি ক্লাবটি।

পিএসজির ঘরোয়া ট্রফি জেতার বাকি নেই কিছু। অধরা আছে ওই এক চ্যাম্পিয়নস লিগ ট্রফিটাই, যেটার জন্য নেইমারকে আনা।

নেইমারও চেয়েছিলেন মেসির ছায়া থেকে বেরিয়ে এসে নিজের আলাদা একটা ঠিকানা বানানো, নতুন সে ক্লাবকে বিশ্বসেরা বানানো। কিন্তু চার বছর পর পিএসজি যখন নিজেদের ওই সিদ্ধান্তের দিকে পেছন ফিরে চায়, সফলতা কতটুকু দেখতে পায়?

এই চোটই এবার কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে নেইমারের জন্য।
ছবি : এএফপি

সাফল্যের খাতায় বড়সড় একটা শূন্যই দেখা যায়। গতবার তাও ফাইনালে উঠেছিল পিএসজি, শেষমেশ হেরেছিল সর্বজয়ী বায়ার্নের কাছে। এবার আরও নতুন উদ্যমে পিএসজিকে চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা জেতার জন্য চেষ্টা করবেন কী, নেইমার আবারও পড়েছেন চোটে।

যে চোট সমস্যা গত চার বছর ধরেই বিভিন্ন সময়ে ভোগাচ্ছে তাঁকে। আর চোটটাও এমন সময় এসেছে, যখন চ্যাম্পিয়নস লিগে বার্সেলোনার বিপক্ষে মহাগুরুত্বপূর্ণ দ্বিতীয় রাউন্ডের ম্যাচ খেলার জন্য ক্ষণ গুনছে পিএসজি। সাবেক ক্লাবের বিপক্ষে মাঠে নামতে এবার নেইমারকে বাধা দিচ্ছে বাঁ পায়ের মাংসপেশির চোট।

ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড মাঠের বাইরে চলে গেছেন চার সপ্তাহের জন্য। আগামী মঙ্গলবারের ম্যাচ তো নয়ই, ১০ মার্চ পিএসজির মাঠে শেষ ষোলোর দ্বিতীয় লেগেও তাঁর খেলার সম্ভাবনা ক্ষীণ।

স্বাভাবিকভাবেই নেইমারের চোটের খবরে বিরক্তই হয়েছে পিএসজি। বিখ্যাত ফরাসি সংবাদমাধ্যম লে’কিপকে উদ্ধৃত করে বার্সেলোনাভিত্তিক দৈনিক স্পোর্ত জানিয়েছে, বারবার নেইমারের চোটে পড়া নিয়ে বিরক্ত পিএসজি। তারা মনে করছে, নেইমারের লাগামছাড়া উদ্দাম জীবনযাত্রাই এসব চোটের কারণ।

লে’কিপের খবর, নেইমার কেন নিয়মিত চোটে পড়েন, সেটা বের করার জন্য রীতিমতো গবেষণা করা শুরু করে দিয়েছে পিএসজি। তারা মনে করছে, নেইমার যেভাবে জীবন কাটান, কোনো পেশাদার ক্রীড়াতারকার জীবনযাত্রা অমন হতে পারে না।

নেইমারের খাদ্যতালিকা, ঘুমের ধরন ও রুটিন—সবকিছু বিশ্লেষণ করে তাদের এমনটা মনে হয়েছে। তাদের এটাও মনে হয়েছে, চোট থেকে তাড়াতাড়ি ফিরে আসার জন্য একজন পেশাদার ক্রীড়াবিদের আচরণ যেমন হওয়া উচিত, নেইমারের তেমন নেই। সব মিলিয়েই নেইমারের ওপর আশা হারিয়ে ফেলছে ফরাসি চ্যাম্পিয়নরা।

২০১৮ সালে এমন মেটাটারসালের চোটের কারণে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে নকআউট পর্বের ম্যাচ খেলতে পারেননি নেইমার। বাদ পড়েছিল পিএসজি। পরেরবারও তা-ই। একই মেটাটারসালে চোটের কারণে মাঠের বাইরে থাকা নেইমার হতাশাভরে দেখেছিলেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে দলের বাদ পড়ে যাওয়া।

মাঝে শুধু গত মৌসুমেই দীর্ঘমেয়াদি কোনো চোট ছাড়াই চ্যাম্পিয়নস লিগের নকআউট পর্বে খেলতে পেরেছিলেন নেইমার। করোনার কারণে গত মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগের ছকেও বদল এনেছিল ইউরোপের ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা উয়েফা। নকআউট পর্বে ফাইনালের আগপর্যন্ত প্রতিটি ধাপে সাধারণত দুটি করে ম্যাচ বা ‘লেগ’ থাকলেও গত মৌসুমে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে ফাইনাল পর্যন্ত এক লেগেরই রেখেছিল উয়েফা।

তবে এখানেও কথা আছে, করোনা যদি না আসত, যদি স্বাভাবিক নিয়মেই খেলা চলত, তাহলেও কিন্তু গত বছর নকআউট পর্বের সময়টায় চোটেই থাকতেন নেইমার। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতেও এমন চোটের কারণে চার ম্যাচ খেলতে পারেননি এই তারকা।

এবারও খেলতে পারবেন? ‘নেইমার জুনিয়র বুধবার সন্ধ্যার ম্যাচে তাঁর বাঁ পায়ের মাংসপেশিতে চোট পেয়েছেন। ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ইমেজিং টেস্টের বিশ্লেষণের পর বোঝা যাচ্ছে, তাঁর চোটের পুনর্বাসনের প্রক্রিয়া কেমন যায়, সেটির ভিত্তিতে চার সপ্তাহের মতো তাঁকে পাওয়া যাবে না’—এবারের বিবৃতিতে জানিয়েছে পিএসজি।

নেইমারকে ছাড়াই বার্সেলোনাকে হারানোর ছক কষতে হবে পচেত্তিনোকে।
ছবি : এএফপি

একেবারে ২৮ দিনের মাথায় নেইমার চোট কাটিয়ে ফিরবেন, এমনটাও যদি মনে করা হয়, তা-ও বার্সার বিপক্ষে দ্বিতীয় লেগে তাঁর খেলার সম্ভাবনা ক্ষীণ। ফেব্রুয়ারি মাসে আর বাকি আছে ১৭ দিন, আর ১০ মার্চ পিএসজির মাঠে দ্বিতীয় লেগে খেলতে নামবে বার্সা। অর্থাৎ, সে সময়েও নেইমারের চোটে পড়ে থাকার কথা।

বিরাট এই ‘যুদ্ধে’ তাই দলের সবচেয়ে দামি খেলোয়াড়টিকে ছাড়াই নামতে হবে পিএসজিকে।