নেইমারের পর এমবাপ্পেকেও হারাতে চাননি বলেই...

নেইমার চোটে, এমবাপ্পেও চোটের শঙ্কা জেগেছিল কাল।ছবি: এএফপি

পিএসজি-ভক্তদের তখন শঙ্কায় বুক দুরুদুরু। আবারও চোট হানা দিল নাকি পিএসজিতে!

নঁতের মাঠে কাল লিগের ম্যাচটির তখন ৭৪ মিনিট। কিলিয়ান এমবাপ্পেকে উঠিয়ে তাঁর বদলে একাডেমি থেকে উঠে আসা তরুণ বানদিউগু ফাদিগাকে নামালেন পিএসজি কোচ টমাস টুখেল। কিন্তু মাঠ ছাড়ার সময়ে এমবাপ্পে যেভাবে ঊরু চেপে ধরছিলেন, পিএসজি-ভক্তদের টেনশন না হয়ে পারে না। এমনিতেই নেইমার চোটে, তার মধ্যে এমবাপ্পেরও চোটের শঙ্কা!

তবে শঙ্কাটা কিছুটা কমবে ম্যাচ শেষে টুখেলের কথায়। নঁতের মাঠে কাল ৩-০ গোলে জয়ের পর পিএসজি কোচ জানালেন, এমবাপ্পে চোটে পড়েননি। তবে চোটে পড়তে পারেন এমন শঙ্কা থেকেই ফরাসি স্ট্রাইকারকে উঠিয়ে নিয়েছেন টুখেল।

মৌসুমের শুরু থেকে পিএসজিতে যেন জেঁকে বসেছে চোট। গত বুধবার চ্যাম্পিয়নস লিগে ইস্তাম্বুল বাশাকশেহিরের মাঠে নেইমারকে কেড়ে নিয়েছে পায়ের মাংসপেশির চোট। অন্তত এই মাসের মাঝামাঝি ২৮ বছর বয়সী ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডকে পাচ্ছে না পিএসজি, তা গতকালই নিশ্চিত করেছেন টুখেল। পিএসজি তো তাঁকে পাচ্ছেই না, ব্রাজিল জাতীয় দলও তাঁকে এই মাসের মাঝামাঝিতে হতে যাওয়া বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের দুটি ম্যাচে পাবে না। ১৩ নভেম্বর ভেনেজুয়েলা ও এর চার দিন পর উরুগুয়ের বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচ দুটি খেলবে ব্রাজিল।

কিন্তু পিএসজির চোটের ‘লিস্টি’ এখানেই শেষ নয়। চোট দলের বাইরে রেখেছে মিডফিল্ডার লিয়ান্দ্রো পারেদেস ও স্ট্রাইকার মাউরো ইকার্দিকেও। স্তাদ দো লা বঁজোয়াঁতে কাল এমবাপ্পেকেও এভাবে ঊরুতে হাত দিয়ে মাঠ ছাড়তে দেখে পিএসজির কোচ-সতীর্থ-ভক্তদের শিরদাঁড়ায় ঠান্ডা স্রোত বয়ে যাওয়ারই কথা। কিন্তু ম্যাচের পর টিভি চ্যানেল কানাল প্লুসে টুখেল সে শঙ্কা উড়িয়ে দিলেন, ‘এমবাপ্পের ক্ষেত্রে বলব, আমার মনে হয় না এটা (ঊরুতে হাত দিয়ে মাঠ ছাড়া) চোট ছিল, ক্লান্তির কারণেই এমন হয়েছে।’

নতেঁর মাঠে কাল গোল করার উচ্ছ্বাস এমবাপ্পের।
ছবি: রয়টার্স

ম্যাচে বিরতির পর স্ট্রাইকার মইজে কিনকেও উঠিয়ে নেন টুখেল। সে প্রসঙ্গ টেনে এনে বললেন, ‘কিনের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা একই। ও প্রতিপক্ষের অনেক আঘাতের শিকার হয়েছে, ব্যথা পেয়েছে। ও চালিয়ে যেতে চেয়েছিল, কিন্তু আমি ‘‘না’’বলেছি। এখন খুব বেশি ঝুঁকি নেওয়ার সময় নয়। খুব বেশি করেই চাই আমাদের আর কোনো খেলোয়াড় নতুন করে চোটে না পড়ুক।’ চোটে মাঠের বাইরে থাকা দুই আর্জেন্টাইনের সর্বশেষ অবস্থাও জানিয়েছেন টুখেল, ‘আশা করি লিয়ান্দ্রো পারেদেস সোমবার অনুশীলন শুরু করতে পারবে। তবে মাউরো ইকার্দি কবে ফিরতে পারবে, তা নিশ্চিত নই।’

চোটের এই মিছিলের মধ্যে লিগ আঁ-তে পিএসজির জয়রথ ঠিকই দুর্বার গতিতে চলছে। প্রথম দুই ম্যাচে লাঁস ও মার্শেইয়ের কাছে ১-০ গোলে হেরে লিগ শুরু করা পিএসজি সর্বশেষ সাত ম্যাচেই জিতেছে। এই সাত ম্যাচে গোল খেয়েছে মাত্র ১টি, করেছে ২৩টি! কালকের জয়ের পর লিগের পয়েন্ট তালিকায় নিজেদের ‘চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত’ করে রাখা জায়গাটা ফিরে পেয়েছে পিএসজি। ৯ ম্যাচে ২১ পয়েন্ট নিয়ে নেইমার-এমবাপ্পেরা পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে। দুইয়ে থাকা লিলের পয়েন্ট ১৮, তবে তারা ম্যাচ খেলেছে ৮টি। বাংলাদেশ সময় আজ রাত ২টায় লিওঁকে অন্তত ১০ গোলের ব্যবধানে হারালেই পিএসজিকে টপকে শীর্ষে উঠতে পারবে লিল।

নেইমার চোটে পড়ার পর কালই প্রথম মাঠে নেমে পিএসজি জিতেছে এমবাপ্পের ঝলকেই। গোলশূন্য প্রথমার্ধে নঁতে ভালোই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে, তাদের উইঙ্গার মোজেস সিমন দৃষ্টিকটু এক মিস না করলে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যেতে পারত নঁতে। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে পিএসজির জয়ের গল্প লেখেন এমবাপ্পে। ৪৭ মিনিটে তাঁর পাসেই পিএসজির প্রথম গোলটি করেন আন্দের এরেরা, মাঠ ছাড়ার আগে ৬৫ মিনিটে নিজেই আদায় করে নেওয়া পেনাল্টি থেকে পিএসজির দ্বিতীয় গোলটি করেন এমবাপ্পে। ৮৮ মিনিটে পিএসজির তৃতীয় গোলটি পাবলো সারাবিয়ার দুর্দান্ত চিপে! দ্বিতীয়ার্ধে নঁতের কাদের বাম্বার পেনাল্টি ঠেকিয়ে দেন পিএসজি গোলকিপার কেইলর নাভাস।
এই জয়ে টুখেলেরও একটা কীর্তি হলো। টুখেলের অধীন পিএসজি লিগ আঁ-তে প্রতিপক্ষের মাঠে এ নিয়ে ৭০ শতাংশ ম্যাচে জিতেছে। পিএসজির ইতিহাসে আর কোনো কোচের এত জয়ের রেকর্ড নেই!