ফুটবলারকে খুনের পাঁচ বছর পর ক্ষমা চাইল পুলিশ বিভাগ
ডালিয়ান অ্যাটকিনসন তেমন পরিচিত কোনো নাম নয় ফুটবলে। শেফিল্ড ওয়েডনেসডে, অ্যাস্টন ভিলা ও ফেনারবাচের হয়ে খেলার পাশাপাশি ম্যানচেস্টার সিটিতে এক মৌসুম ধারেও খেলেছেন অ্যাটকিনসন।
১৯৯৩–৯৪ মৌসুমে অ্যাস্টন ভিলার হয়ে লিগ কাপ জয় ছাড়া আর বড় কোনো সাফল্য নেই অ্যাটকিনসনের। প্রয়াত এই ফুটবলারই নতুন করে এলেন আলোচনায়।
২০১৬ সালেন ১৫ আগস্ট একবার আলোচনায় এসেছিলেন পুলিশের হাতে নিহত হয়ে, আজ এলেন সেই ‘হত্যা’র জন্য পুলিশের আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়ার কারণে।
ঘটনাটা মর্মান্তিক। ব্রিটেনে টেলফোর্ডে শ্রোপশায়ারে সেদিন নিজের বাবার বাসার সামনে রাস্তায় কোনো একটা ঝামেলায় জড়িয়েছিলেন অ্যাটকিনসন। মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। এ ছাড়াও তাঁর কিডনি ও হৃদ্যন্ত্রের সমস্যাও ছিল।
ওয়েস্ট মার্সিয়া অঞ্চলের পুলিশ আসে ঘটনাস্থলে। অ্যাটকিনসনকে থামাতে ‘ইলেকট্রিক স্টানগান’ ব্যবহার করেন পুলিশ কর্মকর্তা বেনজামিন মঙ্ক। সাধারণত পুলিশের কাজে কেউ বাধা দিলে তাঁকে নিবৃত্ত করতেই বিদ্যুৎ পরিবাহী ‘হ্যান্ডগান’ ব্যবহার করা যায়। শরীরে বিদ্যুৎ প্রবাহের কারণে অপরাধী শারীরিকভাবে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। কিন্তু সেদিন অ্যাটকিনসনের ওপর মাত্রাটা বেশি হয়ে গিয়েছিল। অ্যাটকিনসন মারা যান।
এই ঘটনার বিচার শুরু হওয়ার পর গত জুনে আদালতে দোষী সাব্যস্ত হয়ে কারাদণ্ড পান মঙ্ক। তাঁর বিরুদ্ধে অনাকাঙ্ক্ষিত খুনের অভিযোগ আনা হয়। সরাসরি খুনের চেয়ে এই অভিযোগে শাস্তি একটু কম হয়ে থাকে।
তবে আদালতে শুনানিতে জানা যায়, মঙ্ক সেদিন অ্যাটকিনসনের শরীরে ৩৩ সেকেন্ড ইলেকট্রিক স্টানগান ধরে রেখেছিলেন—যা স্বাভাবিক মাত্রার তুলনায় ছয় গুণ বেশি। শুধু তাই নয়, অ্যাটকিনসনের মাথায় লাথিও কষেন এই পুলিশ কর্মকর্তা
অ্যাটকিনসনের কপালে তাঁর বুটের দাগ ও বুটের ফিতায় রক্তের দাগও পাওয়া যায়।
গত সেপ্টেম্বরে অ্যান্থনি ব্যাংহামের জায়গায় ওয়েস্ট মার্সিয়ার নতুন পুলিশ কনস্টেবল প্রধান হয়ে এসেছেন পিপ্পা মিলস। দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চেয়ে চিঠি পাঠান অ্যাটকিনসনের পরিবারের কাছে। এই চিঠি ইংল্যান্ডের সংবাদ সংস্থা পিএ এজেন্সির গোচরীভূত হয়।
চিঠিতে পিপা মিলস লিখেছেন, ‘কোনো কর্মকর্তা অনৈতিক কোনো কাজ কিংবা ক্ষমতার অপব্যবহার করলে পুলিশের পোশাকের কারণে তিনি রেহাই পেতে পারেন না। বেন মঙ্কের কাজটি পুলিশি দায়িত্বের পুরোপুরি বিরোধী, এতে জনতার আস্থা হারানোর ব্যাপারটিও বোঝা যায়।’
চিঠিতে পিপ্পা মিলস আরও লেখেন, ‘বিচারকার্যে যত দেরি হয়েছে, তাতে (অ্যাটকিনসনের পরিবারের প্রতি) আপনাদের শোকের বোঝা আরও বেড়েছে। কতটা যন্ত্রণার ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে, তা আমি কল্পনাও করতে পারি না। গত পাঁচ বছর আপনারা সংহতি ও ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে যাচ্ছেন।’
তবে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান জানিয়েছে, মঙ্কের পুলিশ বিভাগে থাকা উচিত ছিল কি না, সে বিষয়ে চিঠিতে কোনো আলোকপাত করা হয়নি। আদালত তাঁর রায় দেওয়ার সময় জানা যায়, ২০১০ সালের পুলিশের শৃঙ্খলাবিষয়ক ধারায় মঙ্ককে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। কিন্তু পুলিশ বিভাগ থেকে তখন তাঁকে বের করে দেওয়া হয়নি। ৮ বছর সাজা পাওয়ার পর বরখাস্ত হন মঙ্ক।
অ্যাটকিনসনের পরিবারের পক্ষ থেকে আইনজীবি কেট মেইনার্ড বিবৃতিতে বলেন, ‘পুলিশ কর্মকর্তার হাতে ডালিয়ান অ্যাটকিনসনের সেই মর্মান্তিক মৃত্যুর পাঁচ বছরেরও বেশি সময় পর এই আনুষ্ঠানিক ক্ষমাপ্রার্থনা দেরিতে এলেও মেনে নিয়েছে তার পরিবার।’