ফুটবলের অভিশাপ, অভিশাপের ফুটবল

া গুটমান: তাঁর অভিশাপই এখনো বয়ে বেড়াচ্ছে বেনফিকা!
া গুটমান: তাঁর অভিশাপই এখনো বয়ে বেড়াচ্ছে বেনফিকা!

‘আমি অভিশাপ দিয়ে গেলাম, আগামী ১০০ বছরেও তোমরা কোনো ইউরোপীয় কাপ জিততে পারবে না’—বেলা গুটমানের এই অভিশাপের রাহু এখনো বয়ে বেড়াচ্ছে বেনফিকা। ষাটের দশকে পর্তুগিজ ক্লাবকে টানা দুবার ইউরোপিয়ান কাপ জিতিয়েছিলেন গুটমান। কিন্তু বেতন-ভাতা নিয়ে মনোমালিন্য হওয়ায় হাঙ্গেরিয়ান কোচ ক্ষিপ্ত হয়ে ওই অভিশাপ দিয়ে যান। বিশ্বাস করুন আর না-ই করুন, এরপর আটবার ইউরোপীয় প্রতিযোগিতার ফাইনালে উঠেও শিরোপা জিততে পারেনি বেনফিকা। গত মৌসুমেই সেভিয়ার কাছে টাইব্রেকারে হেরে তারা জানিয়ে দিল, গুটমানের ভূত এখনো জেঁকে বসে আছে মাথার ওপর।
সংস্কার, বাতিকগ্রস্ততা—এসব ফুটবলের অংশই। অন্ধবিশ্বাসের কানাগলি দিয়ে কখনো চুপিচুপি ঢুকে পড়ে অভিশাপের ছায়া। আর কিছু অভিশাপ এমনভাবেই ফলে যায়, মনে হয় সেগুলো বুঝি আর কখনোই কাটবে না। গুটমানের অভিশাপটাই দেখুন, তাঁর কথা ঠিক হলে বেনফিকাকে আরও ৪৭ বছর অপেক্ষা করতে হবে। অথচ বেনফিকা কদিন আগে নিজেদের স্টেডিয়ামের সামনে গুটমানের মূর্তি উন্মোচন করেছে। কাজ হয়নি তাতে, অন্যলোকে বসে সেদিকে তাকিয়ে হয়তো মুচকি হসেছেন গুটমান!
তবে বেনজামিন উরিয়া অতটা ‘পাষাণ হৃদয়’ ছিলেন না। ১৯৪৮ সালে কলম্বিয়ান ক্লাব আমেরিকা ডি কালি সিদ্ধান্ত নিল, তারা পেশাদার হবে। কিন্তু সে সময় বোর্ডের সদস্য উরিয়া বেঁকে বসলেন, ‘আপনারা আমেরিকাকে নিয়ে যা ইচ্ছা তা করতে পারেন, কিন্তু আমি ঈশ্বরের কাছে শপথ করে বলছি, দলটি কখনো চ্যাম্পিয়ন হবে না।’ শুরুতে কথাটাকে ‘প্রলাপ’ বলেই সবাই উড়িয়ে দিয়েছিল। কিন্তু পরের তিন দশকেও যখন আমেরিকা কোনো ট্রফি জিততে পারল না, বোঝা গেল অভিশাপটা লেগে গেছে।
তবে উরিয়া সত্যি সত্যিই আমেরিকাকে ভালোবাসতেন। ১৯৭৮ সালে জাগযজ্ঞ করে শাপমোচনের ব্যবস্থা করলেন। ব্যাপারটা কাকতাল বা অন্য কিছু বলতে পারেন, পরের বছরই শিরোপা জিতল আমেরিকা।
বার্মিংহাম সিটির অভিশাপটা আবার একটু অন্য রকম। ১৯০৬ সালে ইংলিশ ক্লাবটি মুন্টজ স্ট্রিট থেকে তাদের স্টেডিয়াম সেন্ট অ্যান্ড্রুজে নিয়ে যায়। তাতে স্থানীয় বেশ কয়েকটি জিপসি পরিবারকে উচ্ছেদ করতে হয় বার্মিংহামকে। যাযাবর জিপসিরা ঠিক কী তুকতাক করেছিল তা কারও জানা নেই, কিন্তু বার্মিংহাম যেন এরপর ট্রফি জেতা ভুলেই গেল। ১৯৬৩ ও ২০১১ সালে লিগ কাপ ছাড়া সেই অর্থে তেমন কোনো বড় শিরোপা জিততে পারেনি।
শাপমোচনের জন্য কি কম চেষ্টা করেছে বার্মিংহাম? ক্লাবের সাবেক দুই কোচ রন সন্ডার্স স্টেডিয়ামে পবিত্র ক্রুস ঝুলিয়ে চেষ্টা করেছিলেন রাহুমুক্ত করার। লাভ হয়নি। ১০ বছর পর ব্যারি ফ্রাই যা করলেন সেটা অবশ্য সব পাগলামিরও বাড়াবাড়ি। মাঠের চার কোণে মূত্রত্যাগ করে শাপমোচনের চেষ্টা করলেন! কিন্তু কাজ হয়নি তাতেও, শেষ পর্যন্ত চাকরি হারাতে হলো ব্যারিকে। আর বার্মিংহামও এখন প্রিমিয়ার লিগ থেকে অবনমিত হয়ে খেলছে দ্বিতীয় বিভাগে।
একই রকম সমস্যায় পড়েছিল ডার্বি কাউন্টিও। নতুন স্টেডিয়াম থেকে রোমান যাযাবরদের উচ্ছেদের পর অভিশাপ পড়েছিল তাদের ওপর। পরের ছয় বছরে তিনবার এফএ কাপের ফাইনালে উঠেও হেরে যায় তারা। শেষ পর্যন্ত ১৯৪৬ সালে ক্লাব অধিনায়ক জ্যাক নিকলসন ক্ষমা চেয়ে আসেন যাযাবরদের কাছে। ফলটা আসে হাতেনাতেই, ওই বছরই চার্লটনকে হারিয়ে জেতে এফএ কাপ।
অস্ট্রেলিয়ার কাহিনিটা আরও মজার। ১৯৭০ বিশ্বকাপে খেলার জন্য সকারুরা এতই মরিয়া ছিল যে, কালো জাদু বা ভুডুর আশ্রয় নেয়। বাছাইপর্বে জিতল একটা ম্যাচও। এরপর ওঝা দাবি করে বসল টাকা। কিন্তু সেটা না পাওয়ায় ওঝা অভিশাপ দিলেন অস্ট্রেলিয়াকে। সেবার বিশ্বকাপের মূল পর্বে ওঠা হলো না অস্ট্রেলিয়ার। পরের বিশ্বকাপে খেললেও আবার দীর্ঘ বিরতি। শেষ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার এক তথ্যচিত্র নির্মাতা সেই অভিশাপ খণ্ডানোর জন্য আফ্রিকায় যান। ২০০৬ বিশ্বকাপে আবার বিশ্বকাপে খেলতে পারে অস্ট্রেলিয়া। ফিফাডটকম।