বন্যায় আটকা পড়েছেন সিলেটের ফুটবলাররা, খবর নেই অনেকের

অনুশীলনে ব্যস্ত থাকার কথা ছিল, তাঁরা এখন নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজ করছেনফাইল ছবি

বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের কর্মকর্তারা যখন মাদারীপুরে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপের উদ্বোধন অনুষ্ঠান নিয়ে ব্যস্ত, তখন একটুখানি শুকনা জায়গা আর নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য হাহাকার করছেন সিলেট জেলা দলের ফুটবলাররা।

মাদারীপুর আচমত আলী খান স্টেডিয়ামে আজ শুরু হয়েছে জাতীয় ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের চূড়ান্ত পর্ব। এই প্রতিযোগিতায় বাছাইপর্ব পেরিয়ে চূড়ান্ত পর্বে খেলার টিকিট মিলেছে সিলেট জেলা ফুটবল দলের। ‘ক’ গ্রুপে সিলেটের সঙ্গী চট্টগ্রাম, কুষ্টিয়া, কুমিল্লা ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

আগামী পরশু দুপুর দেড়টায় গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে কুমিল্লা জেলা ফুটবল দলের মুখোমুখি হওয়ার কথা সিলেটের। কিন্তু ম্যাচ খেলা তো দূরের কথা, প্রবল বন্যায় টিকে থাকাই মুশকিল হয়ে গেছে সিলেট জেলা দলের খেলোয়াড়দের। যোগাযোগবিচ্ছিন্ন অনেকে কেমন আছেন, সেটি জানারও উপায় নেই।

আরও পড়ুন
মাদারীপুরে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপের উদ্বোধন অনুষ্ঠান নিয়ে ব্যস্ত বাফুফে
ছবি: সংগৃহীত

গত দুই দিন ধরে সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতি হচ্ছে। সিলেট নগরের বিভিন্ন এলাকায় প্রবল বেগে পানি ঢুকছে। এতে অনেক উঁচু এলাকাও প্লাবিত হয়ে পড়ছে। আজ বেলা সাড়ে ১১টা থেকে ১টার মধ্যে নতুন করে অন্তত ২৫টি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। নগরীর কোথাও বিদ্যুৎ নেই। সব মিলিয়ে ভীতিকর পরিস্থিতি সিলেটে।

এই অবস্থায় ফুটবল খেলার মতো মানসিক অবস্থা নেই ফুটবলারদের। সিলেটের এই দলে রয়েছে বিয়ানীবাজার ও দক্ষিণ সুরমা এলাকার দুজন করে ফুটবলার। এ ছাড়া গোয়াইনঘাট এলাকার একজন, টুকেরবাজারের চারজন, ওসমানীনগরের তিনজন ও সিলেট শহরের রয়েছেন সাতজন ফুটবলার। প্রত্যেক ফুটবলারের বাড়িতেই ঢুকে পড়েছে পানি।

সিলেট জেলা ফুটবল দলের ম্যানেজার রুবেল আহমেদ বন্যা পরিস্থিতির ভয়ংকর অবস্থার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘আমাদের শহর এলাকার সর্বত্র পানি। কোনো গাড়ি শহরে ঢুকছে না, শহর থেকে বেরও হচ্ছে না। শহরের বাইরে যেসব ফুটবলার আছে ওরাও সিলেটে আসতে পারছে না। আমরা কোথাও যাতায়াত করতে পারছি না। যে যেখানে ছিলাম সেখানেই আটকা পড়ে আছি। সম্ভবত আমাদের এই প্রতিযোগিতায় খেলা হচ্ছে না।’

আরও পড়ুন
আচমত আলী খান স্টেডিয়ামে আজ শুরু হয়েছে জাতীয় ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের চূড়ান্ত পর্ব
ছবি: সংগৃহীত

দেশের এই দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ কিছুদিনের জন্য স্থগিত করার অনুরোধ করলেন তিনি, ‘বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত আমরা কিছুই করতে পারব না। এ অবস্থায় খেলা স্থগিত করলেই ভালো হয়। এরই মধ্যে ফুটবল ফেডারেশনকে আমরা বর্তমান পরিস্থিতির কথা জানিয়েছি।’

সিলেটের সঙ্গে সারা দেশের যাতায়াত ব্যবস্থা তো ভেঙে পড়েছেই, পাশাপাশি বিদ্যুৎ না থাকায় মুঠোফোনও বন্ধ হওয়ার উপক্রম। বন্যার ভয়াবহতা নিয়ে রুবেল বলছিলেন, ‘আমি লামাবাজারে থাকি। আমার বাসার নিচতলায় পানি ঢুকেছে। আমরা দোতলায় বসে আছি। যেকোনো সময় দোতলাও ডুবে যেতে পারে। এদিকে মোবাইলের চার্জ ফুরিয়ে আসছে। ফুটবলারদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না। হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়েছে। কিন্তু অনেকের বাড়িতে বুকসমান পানি। অনেকের মোবাইল ফোন বন্ধ পাচ্ছি।’

সিলেট জেলা দল
ছবি: সংগৃহীত

গোয়াইনঘাট এলাকার দুই ফুটবলারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারায় চিন্তিত রুবেল , তিনি বলেন ‘আমার দলের গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলারের একজন গোলকিপার হেলাল। আরেকজন খাসিয়া রানীর ছেলে নাতালিয়ান। এই দুজনের সঙ্গে কোনোভাবেই যোগাযোগ করতে পারছি না। ভীষণ দুশ্চিন্তায় আছি।’

গত ডিসেম্বরে সারা দেশের ৬৫টি ভেন্যুতে শুরু হয় জাতীয় ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ। এরপর আট বিভাগের চ্যাম্পিয়ন এবং বিশ্ববিদ্যালয়, সার্ভিসেস সংস্থা নিয়ে গড়া সেবা অঞ্চল থেকে দুটি চ্যাম্পিয়ন দল খেলার সুযোগ পায় চূড়ান্ত পর্বে।

গ্রুপ পর্বের সব ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে মাদারীপুর আচমত আলী খান স্টেডিয়ামে। দুই গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন ও রানার্স আপ দলগুলো নিয়ে হবে সেমিফাইনাল। সেমিফাইনাল ও ফাইনাল হবে কমলাপুর স্টেডিয়ামে। আগামী ৪ জুলাই হবে ফাইনাল।