বসুন্ধরার ৬ গোলের দাপট দেখল বারিধারা

বারিধারার রক্ষণে বসুন্ধরার একটি আক্রমণের মুহূর্ত।ছবি: বাফুফে

প্রায় দুই মাসের বিরতি কাটিয়ে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ফুটবল ফিরল আজ। প্রিমিয়ার লিগে দ্বিতীয় পর্বের ম্যাচ দিয়ে ফুটবল মাঠে গড়ালেও গ্যালারিতে ছিল না কোনো দর্শক।

সাম্প্রতিক সময়ে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন ফাঁকা গ্যালারিতেই ম্যাচ আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মাঠে দর্শক না থাকলেও সেই পুরোনো চেহারাতেই দেখা গেল বসুন্ধরা কিংসকে।

গত মার্চে যেখানে লিগ শেষ করেছিল, সেখান থেকেই শুরু করেছে প্রিমিয়ার লিগের চ্যাম্পিয়নরা। আজ উত্তর বারিধারাকে উড়িয়ে দিয়েছে ৬-০ গোলে। দুটি করে গোল করেছেন ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার জোনাথন ফার্নান্দেজ, আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার রাউল বেসেরা ও ব্রাজিলিয়ান রবসন।

এর আগে লিগের প্রথম পর্বে বসুন্ধরার বড় জয় ছিল আরেকটি, সেবার ৬-১ ব্যবধানে আরামবাগকে হারিয়েছিল তারা।

আগের ১২ ম্যাচে নিখুঁত ফুটবল খেলেছে অস্কার ব্রুজোনের বসুন্ধরা কিংস। রক্ষণে ইরানি খালিদ শাফি আর মাঝমাঠে জোনাথন ফার্নান্দেজ। ফরোয়ার্ড লাইনে ভয়ংকর রাউল বেসেরা ও রবসন রবিনহো তো আছেনই।

স্থানীয় ব্যক্তিদের মধ্যে রক্ষণে তপু বর্মণ, মাঝমাঠে মাসুক মিয়া, মাহবুবুর রহমান, মোহাম্মদ ইব্রাহিম—সব মিলিয়ে এই বসুন্ধরাকে আটকানোর সাধ্য ছিল না উত্তর বারিধারার।

গোলের পর বসুন্ধরার ব্রাজিলিয়ান তারকা রবসন।
ছবি: বাফুফে

নেপালে গত মাসের তিন জাতি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে চোট পাওয়ার কারণে মাঠে নামতে পারেননি ডিফেন্ডার বিশ্বনাথ ঘোষ। তাঁর জায়গায় শুরু থেকে ফিনল্যান্ডপ্রবাসী তারিক কাজীকে খেলিয়েছেন ব্রুজোন।

প্রথম থেকে সুযোগ পেয়ে তারিক কাজী এই ম্যাচে খেলেছেনও অসাধারণ। বিশেষ করে তাঁর বাড়ানো ক্রসগুলো ছিল দুর্দান্ত। দুর্ভাগ্য তারিক কাজীর, একটা শট ক্রসবারে লেগে ফিরেছে! নেপালের টুর্নামেন্টে চোট পাওয়া রিমন হোসেনও আজ একাদশে ছিলেন না। লেফট ব্যাকে তাঁর জায়গায় খেলেছেন মোহাম্মদ ইব্রাহিম।

উত্তর বারিধারা দ্বিতীয় পর্বে নতুন ফুটবলার দলে নিয়েছে। রক্ষণে মিসরের সৈয়দ আবদুর রহিমকে বাদ দিয়ে নেওয়া হয়েছে আইভরি কোস্টের ইউসুফ বামবাকে। কিন্তু ঢাকার ফুটবলে অভিষেক মোটেও সুখকর হলো না দিদিয়ের দ্রগবার দেশের এই ফুটবলারের। বারিধারার নড়বড়ে রক্ষণে যে কবার বল নিয়ে ঢুকেছেন বসুন্ধরার ফরোয়ার্ডরা, খালি হাতে ফিরেছেন খুব কম সময়ই।

শুরু থেকেই আক্রমণে ওঠা বসুন্ধরা গোল পেয়েছে ৩ মিনিটে। খালেদ শাফির থ্রো–ইন থেকে হেডে রাউল বেসেরা প্রথমে দলকে এগিয়ে নেন। ১১ মিনিটে বক্সের মধ্যে রাউল বেসেরা বল বাড়িয়ে দেন জোনাথনকে। একেবারে অরক্ষিত জোনাথন প্লেসিংয়ে করেন ২-০। প্রতি আক্রমণ থেকে ৩৪ মিনিটে ম্যাচের তৃতীয় গোলটি করেন রবসন।

বারিধারার গোলরক্ষক আজাদ হোসেন জায়গা ছেড়ে বেরিয়ে এলে তাঁকে কাটিয়ে ঠান্ডা মাথায় রবসন করেন ৩-০। বিরতিতে যাওয়ার ৬ মিনিট আগে বারিধারা কোচ মাহবুব আলী গোলকিপার আজাদকে তুলে নিয়ে মাঠে নামান জসীম উদ্দিনকে। কিন্তু গোলরক্ষক বদলিয়েও ম্যাচের ভাগ্য বদল করতে পারেনি বারিধারা। জসীম মাঠে নামার পর বারিধারা আরও দুটি গোল হজম করেছে!

পুরো ম্যাচে বলার মতো একটি ভালো সুযোগ পেয়েছিল বারিধারা। মাহবুবুর রহমানের মিস পাস থেকে বল নিয়ে বক্সে ঢোকেন বারিধারার স্ট্রাইকার সুজন বিশ্বাস। সামনের দিকে অনেকখানি এগিয়ে আসা বসুন্ধরা কিংসের গোলরক্ষক আনিসুর রহমানকে কাটিয়ে ফাঁকা পোস্টের দেখা পেয়ে যান সুজন।

কিন্তু বলে শট নিতে এতটাই দেরি করলেন যে ততক্ষণে তারিক কাজী ও তপু বর্মণ এসে বল ক্লিয়ারের চেষ্টা করে ফেলেন। অবশেষে তপুর গায়ে লেগে মাঠের বাইরে যায় বল। ম্যাচের ৫৫ মিনিটে জোনাথন ফার্নান্দেজ বক্সের বাইরে থেকে জোরালো শটে করেন ৪-০। ৬৩ মিনিটে রাউল বেসেরার গোলের জোগানদাতা ছিলেন ইব্রাহিম।

বসুন্ধরার আক্রমণের সামনে দাঁড়াতে পারেনি বারিধারা।
ছবি: বাফুফে

ইব্রাহিম আগুয়ান গোলকিপার জসীমকে কাটিয়ে বক্সে ঢোকেন। কিন্তু নিজে গোল না করে বল বাড়িয়ে দেন বেসেরাকে। ডান পায়ের অসাধারণ ফিনিশিংয়ে বেসেরা করলেন ম্যাচের পঞ্চম ও নিজের দ্বিতীয় গোল। এরপর ম্যাচের ৯০ মিনিটে পেনাল্টি থেকে রবসন করেন ৬-০।

১৩ ম্যাচে ৩৭ পয়েন্ট নিয়ে যথারীতি শীর্ষে বসুন্ধরা। আর সমান ম্যাচে ৯ পয়েন্ট নিয়ে বারিধারা আছে ১১তম স্থানে।