বাংলাদেশের যে 'গোলরক্ষক' গোলও করতেন

১৯৮৫ সালে কলম্বোতে মালদ্বীপের ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষে আবাহনীর সেই ম্যাচ। গোলরক্ষকের পোশাক পাল্টে এ ম্যাচে গোল করেছিলেন মোতালেব (সবুজ জার্সি)। ছবি: সংগৃহীত
১৯৮৫ সালে কলম্বোতে মালদ্বীপের ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষে আবাহনীর সেই ম্যাচ। গোলরক্ষকের পোশাক পাল্টে এ ম্যাচে গোল করেছিলেন মোতালেব (সবুজ জার্সি)। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা গোলরক্ষকই বলা হয় আবদুল মোতালেবকে। গতকাল রোববার ভোরে তিনি চলে গেছেন না-ফেরার দেশে। শহীদুর রহমান শান্টুর সহযোদ্ধা আর মোহাম্মদ মহসিন, সাঈদ হাসান কানন, আতিকুর রহমানদের পূর্বসূরি এই গোলরক্ষক ফুটবল মাঠে ছিলেন দুর্দান্ত এক চরিত্রই। রেনে হিগুইতা, হোসে লুই চিলাভার্টদের মতোই মোতালেব কেবল গোলই ঠেকাতেন না, প্রতিপক্ষের জালে বলও ঠেলতে পারতেন।

আবাহনীর মোতালেব নামেই তাঁর খ্যাতি। তবে একটা দুর্ভাগ্যের শিকার তিনি হয়েছেন। সব যোগ্যতা থাকার পরেও ক্যারিয়ারের সেরা সময়টাতে জাতীয় দলের এক নম্বর গোলরক্ষক হয়ে খেলতে পারেননি। অথচ ১৯৭৩ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত জাতীয় দলের স্কোয়াডে নিয়মিতই ছিলেন তিনি। এক নম্বর হতে না পারার কারণ, দেশের ফুটবলের অবিসংবাদিত সেরা গোলরক্ষক শহীদুর রহমান শান্টু যে তখন দুর্দান্ত ফর্মে। জাতীয় ফুটবল দলের এক নম্বর গোলরক্ষক হিসেবে শান্টুকে স্থানচ্যুত করা যে একপ্রকার অন্যায়ই তখন। ১৯৮২ সালের দিল্লি এশিয়ান গেমসে জাতীয় দলের এক নম্বর গোলরক্ষক হলেন বটে, কিন্তু তত দিনে সেরা সময়টা পেরিয়ে এসেছেন। উত্থান হচ্ছে নতুন প্রজন্মের। প্রথম ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে খুব বাজে একটা গোল খাওয়ায় স্থান হারান তরুণ মহসিনের কাছে। জাতীয় দলেই এরপর আর খেলা হয়নি মোতালেবের।

গোলরক্ষক হয়েও মোতালেব বল নিয়ে সামনে উঠে পড়তেন। দলের হয়ে নিয়মিত পেনাল্টি ও ফ্রি কিক নিতেন। ১৯৮২ সালে ফেডারেশন কাপের ফাইনালে আবাহনীর হয়ে বিজেএমসির বিপক্ষে টাইব্রেকার থেকে একটি গোল করেছিলেন তিনি। ‘স্ট্রাইকার’ হিসেবে বিদেশের মাটিতেই সবচেয়ে দারুণ উদাহরণ গড়েছিলেন মোতালেব। ১৯৮৫ সালে কলম্বোতে এশিয়ান ক্লাব চ্যাম্পিয়নশিপে মালদ্বীপের ভ্যালেন্সিয়া ক্লাবের বিপক্ষে আবাহনীর হয়ে একটি গোল আছে তাঁর। সে ম্যাচে প্রথমার্ধে গোলরক্ষক হিসেবেই খেলেছেন তিনি। দ্বিতীয়ার্ধে আবাহনী-অধিনায়ক ইমতিয়াজ সুলতান জনি আহত হয় মাঠ ত্যাগ করলে বদলি গোলকিপার কার্জন চৌধুরীকে গোলে দাঁড় করিয়ে মোতালেবই তাঁর জায়গায় খেলেছিলেন। সে ম্যাচে গোল করে সবাইকে অবাক করে দিয়েছিলেন। আবাহনী জিতেছিল ৭-২ গোলের বিশাল ব্যবধানে।

সে ম্যাচে নাকি আবাহনীর মূল স্ট্রাইকার শেখ মোহাম্মদ আসলাম রসিকতা করে বলেছিলেন, ‘মোতালেব ভাই, আপনি আর গোল কইরেন না। নইলে আমি তো সর্বোচ্চ গোলদাতা হতে পারব না।’

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ঠিক আগে দিয়ে মালয়েশিয়ায় মারদেকা কাপ খেলতে গিয়েছিল বাংলাদেশ। কুয়ালালামপুর রওনা হওয়ার আগে গণভবনে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিল গোটা দল। বঙ্গবন্ধু সেদিন মোতালেবকে বলেছিলেন, ‘বাবা, দেশের পতাকার সম্মান তোমার হাতে।’

বঙ্গবন্ধুর প্রত্যাশা মোতালেব রেখেছিলেন। সে টুর্নামেন্টে সিঙ্গাপুরকে ১-০ গোলে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। নওশেরুজ্জামানের গোলে জিতলেও মোতালেব সিঙ্গাপুরের একটি পেনাল্টি ঠেকিয়ে জয়ের রাস্তা পরিষ্কার করেছিলেন। বিদেশের মাটিতে সেটিই ছিল বাংলাদেশের প্রথম জয়।

খেলা ছাড়ার পর কোচ হয়েছিলেন। গোলরক্ষক কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন আবাহনী ও জাতীয় দলে। ব্রাজিলে একটি কোচিং কোর্সও করেছিলেন। ৬৮ বছর বয়স পূর্ণ হওয়ার আগেই চলে যেতে হলো দেশের ফুটবলের এই বর্ণাঢ্য চরিত্রকে।