বার্সায় নেইমারের ১০০

একেবারেই সাধারণ একটা গোল। পাকো আলকাসারের পাসটা যখন নেইমারের কাছে পৌঁছাল, গোলটা তখন থালায় সাজিয়ে দেওয়া খাবার। শুধু পা লাগিয়ে করা সেই গোল দিয়েই বার্সেলোনার ইতিহাসে পাকাপাকি জায়গা করে নিলেন নেইমার। বার্সেলোনার জার্সি গায়ে এর আগে ১০০ গোল করেছিলেন ১৭ জন। নেইমার সংখ্যাটা ১৮-তে নিয়ে গেলেন। গত পরশু ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডের মাইলফলক ছোঁয়ার দিনে গ্রানাডাকে ৪-১ গোলে হারিয়েছে বার্সেলোনা। রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে পয়েন্ট ব্যবধানটা আবারও দুইয়ে নামিয়ে এনেছে কাতালানরা।
ম্যাচের যোগ করা সময়ে গোল। এর আগেই দল এগিয়ে ছিল ৩-১ ব্যবধানে, এসব বিবেচনায় এই গোল কোনো গুরুত্বই পেত না নেইমারের কাছে। কারণ এই ফরোয়ার্ডের কাছে দলই যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পায়। এ দিনও ম্যাচ শেষে বললেন, ‘দল জিতেছে, এটাই আমার কাছে বড় কথা।’ তবে যতই নির্মোহ থাকার চেষ্টা করুন, এটাও তো ঠিক, এমন অর্জন গুরুত্ব পাওয়ার মতোই। কাতালান ইতিহাসের অংশ হয়ে যাওয়া রোনালদিনহোও থেমে গিয়েছেন ৯৪ গোলে। বার্সা টিভিতে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় তাই খানিকটা উচ্ছ্বাস খুঁজে পাওয়া গেল নেইমারের কণ্ঠে, ‘১০০ গোল করতে পেরে অবশ্যই খুশি। এটা আমি সতীর্থদের উৎসর্গ করছি।’
কোচ লুইস এনরিকে অবশ্য নেইমার-স্তুতিতে কোনো রাখঢাক রাখেননি, ‘তাঁর সংখ্যাই (গোল) বলছে, সে কতটা ভয়ংকর। প্রতিপক্ষের রক্ষণকে এলোমেলো করে দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশ্বসেরাদের একজন। তাঁকে বার্সেলোনায় নেওয়ার সিদ্ধান্তটা অসাধারণ সিদ্ধান্ত ছিল। নেইমারের জন্য যেমন, তেমনি ক্লাবের জন্য। আমি আশা করি, সে আরও ৯০০ গোল করবে। যাতে বার্সেলোনার হয়ে ওকে আরও অনেক দিন দেখতে পারি।’
এনরিকের এমন বল্গাহীন স্তুতির কারণ আছে। লিওনেল মেসির মতো ক্ষণজন্মা এক ফুটবলার দলে আছেন বলে নেইমার-সুয়ারেজদের গুরুত্বটা সব সময় বোঝা যায় না। কিন্তু পরশু নিষেধাজ্ঞার কারণে মেসি না থাকায় নিজেদের আরও মেলে ধরার সুযোগ এসেছিল নেইমারদের সামনে। লিগের ১৯ নম্বর দলের বিপক্ষে শুরু থেকে প্রাধান্য বিস্তার করেও ভাগ্যের অসহযোগিতায় গোল পাচ্ছিল না বার্সেলোনা। মেসির অনুপস্থিতিতে গত কিছুদিনের সাফল্য এনে দেওয়া ৩-৪-৩ ফর্মেশন থেকে সরে আসাটাই প্রভাব ফেলছিল কিছুটা। কিন্তু নিজে গোল করে, আলকাসার ও রাকিটিচদের দিয়ে গোল করিয়ে লুইস সুয়ারেজ নিশ্চিত করেছেন দলের জয়। শেষ দিকে নেইমারের মাইলফলক ছোঁয়া গোলটা ছিল বার্সার জন্য ম্যাচের সম্ভাব্য সেরা সমাপ্তি।
এ গোল দিয়েই ‘এমএসএন’ ত্রয়ীর তৃতীয় জনেরও গোলের ‘সেঞ্চুরি’ হয়ে গেল। বার্সেলোনায় যোগ দেওয়ার চতুর্থ মৌসুমেই ১০০ গোল হয়ে গেছে নেইমারের, ১৭৭তম ম্যাচে। তবে এক মৌসুম পরে এসে নেইমারকে গোলের দৌড়ে বহু আগে পেছনে ফেলেছেন সুয়ারেজ। মাত্র ১২০ ম্যাচেই ১০০ গোল করেছেন উরুগুইয়ান স্ট্রাইকার। তবে যাঁর উত্তরসূরি হিসেবে ভাবা হচ্ছে তাঁকে, সেই মেসির চেয়ে ১১ ম্যাচ কম খেলেছেন নেইমার। এএফপি, রয়টার্স, গোল।

বার্সার পক্ষে দ্রুততম ১০০ গোল
ম্যাচ ফুটবলার সময়কাল
৯৯ মারিয়ানো মার্টিন ১৯৩৯-৪৮
১০৩ লাসলো কুবালা ১৯৫১-৬১
১২০ লুইস সুয়ারেজ ২০১৪-বর্তমান
১৩৬ ইউলোজিও মার্টিনেজ ১৯৫৬-৬২
১৫৭ স্যামুয়েল ইতো ২০০৪-০৯

চেনেন মারিয়ানো মার্টিনকে?
বার্সেলোনার জার্সিতে নেইমারের গোলের ‘সেঞ্চুরি’টাই কৌতূহলী করে তুলল সবাইকে। ১৭৭তম ম্যাচে এসে তিন অঙ্ক ছুঁয়েছেন ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড। নেইমারের আগে বার্সেলোনার হয়ে এক শ গোল করা সর্বশেষ কোনো ব্রাজিলিয়ান রিভালদো। ১০০ গোল করতে বিশ্বকাপজয়ী ফরোয়ার্ডের লেগেছিল ১৭৩ ম্যাচ। তবে কাতালান ক্লাবটির পক্ষে সবচেয়ে দ্রুত এক শ গোলের রেকর্ডের ধারেকাছে নেই এই দুই ব্রাজিলিয়ান। রেকর্ডটি মারিয়ানো মার্টিনের, মাত্র ৯৯ ম্যাচেই যিনি করেছিলেন এক শ গোল।
১৯৯৮ সালে অন্যলোকে পাড়ি দেওয়া এই স্প্যানিশ স্ট্রাইকার বার্সেলোনায় যোগ দিয়েছিলেন ১৯৩৯ সালে। নয় মৌসুমে ১৫০ ম্যাচে করেছেন ১২৮ গোল। মাত্র ২৫ বছর বয়সেই পাওয়া হাঁটুর চোটটাই ক্যারিয়ারটা লম্বা করতে দেয়নি তাঁকে। দ্রুততম ‘সেঞ্চুরি’তে মার্টিনের পরে আছেন লাসলো কুবালা। ১৯৯৯ সালে সমর্থকদের ভোটে ক্লাব ইতিহাসের সেরা নির্বাচিত হওয়া কুবালা বার্সেলোনার হয়ে এক শ গোলের দেখা পেয়েছেন ১০৩তম ম্যাচে। এ দুজনের পরেই আছেন নেইমার-সতীর্থ লুইস সুয়ারেজ। চার ও পাঁচে আছেন ন্যু ক্যাম্পে প্রথম গোল করা ইউলোজিও মার্টিনেজ ও বার্সার প্রথম ট্রেবলজয়ী দলের ক্যামেরুনিয়ান সদস্য স্যামুয়েল ইতো। সূত্র: মেট্রোডটকম।