বার্সেলোনার আর্থিক সংকটে দায় লা লিগা সভাপতির

লা লিগা সভাপতি হাভিয়ের তেবাসছবি: টুইটার

বার্সেলোনা ও আর্থিক সংকট যেন সমার্থক হয়ে উঠেছে। গত মৌসুমে আর্থিক সীমাবদ্ধতায় ক্লাব ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড় লিওনেল মেসিকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে বার্সা। দলবদলের বাজারে  মুফতে বা ধারেই খেলোয়াড় কিনে কাজ সেরে নিতে হয়েছে। ক্লাবের অধিনায়কদের বেতন কমিয়ে নতুন খেলোয়াড়দের নিবন্ধিত করতে হয়েছে। কিন্তু এতেও খুব একটা অবস্থার পরিবর্তন হয়নি বলেই মনে হচ্ছে। ৩০ জুনের মধ্যে আর্থিক অবস্থার উন্নতি না হলে এই মৌসুমেও দলবদল নিয়ে নতুন ঝামেলায় পড়বে বার্সা।

এ অবস্থায় ক্লাবের আর্থিক বিভাগের সহসভাপতি এদুয়ার্দ রোমেউ শীর্ষ তারকাদের বেতন কমানোর চিন্তাভাবনা করছেন। আর ক্লাবের এ অবস্থার জন্য লা লিগা সভাপতি হাভিয়ের তেবাসেরও দায় দেখছেন রোমেউ।

বার্সেলোনার আর্থিক বিভাগের সহসভাপতি এদুয়ার্দ রোমেউ
ছবি: টুইটার

গত মৌসুমে মেসিকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে বার্সেলোনা। উচ্চ বেতনভোগীদের মধ্যে আঁতোয়ান গ্রিজমান ও ফিলিপে কুতিনিওকে ধারে পাঠিয়েছিল। এবার তাঁদের মধ্যে কুতিনিওকে এরই মধ্যে ২ কোটি ইউরোতে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে, গ্রিজমানকেও ৪ কোটি ইউরোতে আতলেতিকো মাদ্রিদের কাছে বিক্রি করে দেওয়া প্রায় নিশ্চিত।

দুজনের বেতনের হাত থেকে মুক্তি মিলছে, সঙ্গে দলবদলের বাড়তি অঙ্কটাও যোগ হচ্ছে। কিন্তু এতেও নাকি খুব একটা লাভ হয়নি বার্সেলোনার। আরএসি-ওয়ান রেডিওতে কথা বলতে এসে রোমেউ জানিয়েছেন ক্লাবের আর্থিক দুর্দশার কথা, ‘বেতন বিল এখন ৫৬ কোটি ইউরো। বায়ার্নের (মিউনিখ) সেটা ৩০ কোটি, রিয়াল মাদ্রিদের ৪০ কোটির কাছাকাছি।’

এ অবস্থায় বেতনের খরচ কমানোতেই যে ক্লাবের সব মনোযোগ সেটাও বলেছেন রোমেউ, ‘চুক্তিসংক্রান্ত আলোচনা সব খেলোয়াড়ের ক্ষেত্রে আলাদাভাবে করা হবে এবং টেকনিক্যাল দিক থেকে ক্লাবের আগ্রহ বিবেচনা করেই করা হবে।’

বার্সার আর্থিক এই অবস্থার দায় সবাই ক্লাবটির সাবেক সভাপতি জোসেপ মারিয়া বার্তোমেউকে দেন। দলবদলে অহেতুক খরচ, আর্থিক অবস্থার কথা চিন্তা না করে খেলোয়াড়দের বড় বড় চুক্তি প্রদানই বার্সেলোনার এ হাল করেছে। রোমেউ অবশ্য আরও একজনের দায়ও দেখছেন, ‘তেবাসকে আর সহ্য করা সম্ভব নয়। এটা হতে পারে না। আমরা বার্সেলোনা। ক্লাবের এই অবস্থার জন্য এই লোকও দায়ী। সেই এটা করতে দিয়েছে। বার্সেলোনার ক্ষতি হয়, এমন সবকিছুতে সে সায় দিয়েছে।’

নানা বিতর্কে বার্সা সভাপতির পদ ছাড়েন বার্তোমেউ
ফাইল ছবি: এএফপি

গত মৌসুমে জেরার্দ পিকে, সের্হিও বুসকেতস, সামুয়েল উমতিতিদের মতো অনেকেই বেতন কমাতে রাজি হয়েছেন। আবার উসমান দেম্বেলের মতো অনেকেই তাতে রাজি হননি। এই মৌসুমেও অনেক খেলোয়াড়ই হয়তো বেতন কমাতে রাজি হবেন না। রোমেউ সেটা মেনেও নিয়েছেন, ‘এটা খেলোয়াড়দের সিদ্ধান্ত। তারা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে, আমরা এখন তাদের হাত পকেটে ঢোকাতে বলছি (আয় কমাতে)। আমরা আরও তীব্রভাবে দর-কষাকষিতে যাব।’

এরই মধ্যে চুক্তিসংক্রান্ত জটিলতা ক্লাবের ফুটবলীয় সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। প্রজন্মের অন্যতম সেরা মিডফিল্ডার ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ংকে বিক্রির চিন্তাভাবনা চলছে। মাত্র ১৭ বছরেই বার্সেলোনা ও স্পেনের মিডফিল্ডে জায়গা করে নেওয়া গাভির চুক্তি নবায়ন আটকে আছে বেতন নিয়ে বনিবনা না হওয়ায়।

বার্সেলোনার সমস্যার সমাধান হতে পারে বহুল আলোচিত সিভিসি চুক্তিতে স্বাক্ষর করলে। স্প্যানিশ ফুটবলের শীর্ষ দুই লিগের প্রায় সব ক্লাবের ছবি স্বত্বের একটি নির্দিষ্ট অংশের বিনিময়ে অর্থ বিনিয়োগের একটা প্রস্তাব এনেছে লা লিগা কর্তৃপক্ষ। গত মৌসুমে মাত্র চারটি ক্লাব এতে রাজি হয়নি। রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনা, অ্যাথলেটিক বিলবাওয়ের পাশাপাশি দ্বিতীয় স্তর লা লিগা দো-এর ক্লাব রিয়াল ওভিয়েদো এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি। বার্সেলোনা দাবি করে, সিভিসি চুক্তিতে রাজি না হওয়াতেই প্রথমে মেসির জন্য বেতন সীমা শিথিলের প্রতিশ্রুতি দিয়েও পরে সেটা আর পালন করেননি লা লিগা সভাপতি তেবাস।

গত সেপ্টেম্বরেই বার্সার দেনার পরিমাণ জানিয়েছেন সভাপতি হোয়ান লাপোর্তা
ছবি: টুইটার

এই মৌসুমে আবার আর্থিক সীমাবদ্ধতা ঘিরে ধরেছে বার্সেলোনাকে। কিন্তু লা লিগার সামনে নতজানু হতে রাজি নয় বার্সা, ‘মধ্যমানের ক্লাবের জন্য এটা ঠিক আছে (সিভিসি), আমাদের জন্য এটা ভালো কিছু নয়। এটা সর্বসাধারণের খাওয়ার জায়গা (বার্সেলোনার মতো সম্ভ্রান্তদের নয়)।’ তবে লা লিগার মাধ্যমে না হলেও সরাসরি সিভিসির সঙ্গেও চুক্তি করতে পারে বার্সেলোনা। সে ক্ষেত্রে সময়ের ব্যাপ্তি কমিয়ে অর্থ বাড়িয়ে নিতে পারে বার্সেলোনা, ‘আমরা (চুক্তির মেয়াদ) ৫০ থেকে ২৫ বছরে নামিয়ে আনতে চাই, সেটাও যদি ২৭ কোটি ইউরো দেওয়া হয় তবেই।’

সিভিসি চুক্তি না করাতেই যে বার্সেলোনাকে ঝামেলায় ফেলছেন লা লিগা সভাপতি সেটা কাল আবার বলেছেন রোমেউ, ‘ব্যাপারটা এমন যে যদি এটা স্বাক্ষর করো, তাহলে এটা-ওটা পাবে, না করলে পাবে না। আপনিই হুমকি শব্দটা উচ্চারণ করেছে। আপনি যদি অপরাধী এবং বিচারক—দুটিই হন, তাহলে তো সমস্যা। শীতকালীন (জানুয়ারির) দলবদলে আমরা এই ধাক্কা সামলে নিতে পেরেছি, আমরা এটা আবার করতে পারব।’ রোমেউ এটা বলেছেন, ক্লাবের আর্থিক দুর্দশা কাটাতে ক্লাবের ৭০ কোটি ইউরো আয়ের পথ বের করতে হবে।