বার্সেলোনা মুখে মিষ্টি কথা বলে লাথি মেরে বের করে দিয়েছে ব্রাজিলিয়ানকে

বার্সেলোনা ক্যারিয়ারটা দীর্ঘ হলো না এমারসনেরছবি: রয়টার্স

এবারের দলবদলের শেষ দিকে যেন ‘ক্লিয়ারআউট সেল’-এ নেমেছিল বার্সেলোনা। দলে যাঁকেই প্রয়োজন মনে হচ্ছিল না তাঁকেই বিক্রি করে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। যখন বিক্রি করা যায়নি, তখন ধারে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে ফুটবলারদের। ক্লাবের বিপৎসীমার ওপরে থাকা বেতনের খরচকে নিয়ন্ত্রণে আনতে শীর্ষ লিগগুলোতে দলবদলের মৌসুম শেষ হওয়ার পরও কাজ চালিয়ে যাচ্ছে তারা। তুরস্কের দলবদলের বাজার এখনো খোলা, গতকাল তুর্কি লিগের দল বেসিকতাসে ধারে চলে গেছেন মিরালেম পিয়ানিচ।

ক্লেমঁ লংলে, সামুয়েল উমতিতি, ফিলিপ কুতিনিওদেরও আগামী কয়েক দিন কোথাও পাঠানোর জোর চেষ্টা চালাবে বার্সেলোনা। কিন্তু এরই মধ্যে এমন একজনকে বার্সেলোনা বিক্রি করেছে, যেটা চমক জাগিয়েছে সবার মধ্যে। মাসের শুরুতেই যাঁকে দলে টেনে গায়ে ৩০ কোটি ইউরো দাম সেঁটে দিয়েছিল, সেই এমারসন রয়ালকে শর্তসাপেক্ষে ৩ কোটি ইউরোতে টটেনহামের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে বার্সা। যে বার্সেলোনাকে ভালোবাসতেন, সেই বার্সেলোনাই এভাবে তাঁকে কিনে নেওয়ার মাত্র এক মাসের মধ্যেই বিক্রি করে দেওয়ায় প্রচণ্ড মন খারাপ হয়েছে ব্রাজিলিয়ান রাইটব্যাকের।

চলে গেছেন এমারসন
ফাইল ছবি: রয়টার্স

লিগে প্রথম তিন ম্যাচেই বার্সেলোনার হয়ে মাঠে ছিলেন এমারসন। পূর্বসূরি ব্রাজিলিয়ান রাইটব্যাক দানি আলভেজের মতো সমৃদ্ধ ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্ন ছিল বার্সেলোনায়। কিন্তু আন্তর্জাতিক বিরতির ঠিক আগে তাঁকে বিক্রি করে দেওয়ার এ সিদ্ধান্ত যে তাঁকে চমকে দিয়েছে, সেটা জানিয়েছেন এমারসন। মার্কাকে বলেছেন, ‘আমি ভেবেছিলাম, ক্লাব আমাকে রাখতে চায়। রোববার আমি মূল একাদশে ছিলাম, এক দিন পর ঘুম থেকে জেগে উঠে ঠান্ডা মাথায় অনুশীলনে গেলাম। সেখানে গিয়ে দেখলাম, অনেক কিছুই হচ্ছে। টটেনহাম বার্সেলোনার সঙ্গে কথা বলছে, ওরা চুক্তি প্রায় করেই ফেলেছে।’

‘যার বিয়ে তার খবর নেই, পাড়াপড়শির ঘুম নেই’ ব্যাপারটা এমন হয়ে গেল না? এমারসনেরও ভাষ্য, তাঁর দলবদলের ঘটনাটি ছিল অনেকটাই এমন, ‘আমি তো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না, কারণ কিছুই জানি না। বিকেলে ক্লাব আমাকে ফোন করল, কারণ তারা কথা বলতে চায়। বলল, আমাকে বিক্রি করে দিতে চায়। আমি ক্লাবের পরিচালকদের সঙ্গে দেখা করলাম। তাঁরা বলতে শুরু করলেন, ক্লাবের অবস্থা ভালো না। আমি খুব কঠিন সময়ে এসেছি এবং এই সময়ে বিক্রি করে দেওয়াটাই ভালো।’

বেতিসে আলো ছড়িয়েছেন এমারসন রয়্যাল
ছবি : টুইটার

এমন অবস্থাতেও বার্সেলোনায় ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্ন পূরণ করতে চেয়েছিলেন এমারসন, ‘আমি ক্লাবে থাকার ইচ্ছার কথা বারবার বলছিলাম। এখানে খেলার স্বপ্ন ছিল আমার এবং বার্সেলোনায় অবদান রাখতে চেয়েছি। আমি জানতাম আমার সেরা ফর্মে এখানে আমি রাজত্ব করতে পারব। কিন্তু আমি বুদ্ধিমান এবং বুঝতে পেরেছি যা-ই বলি না কেন, আমার এখানে দিন শেষ। মুখে মিষ্টি কথা বলে লাথি মেরে বের করে দিচ্ছে ওরা।’

প্রিয় ক্লাবের কাছ থেকে এমন আচরণে কতটা কষ্ট পেয়েছেন, সেটা তো এমারসনের কথাতেই স্পষ্ট, ‘খেলাই আমার মূল লক্ষ্য। আমি চাইলেই বলতে পারতাম, আমার এখানে চুক্তি আছে এবং আমি এখানে থাকব। কিন্তু আমি এমন একজন যে সুখে থাকতে চায়। মন খারাপ করে এমন এক ক্লাবে থাকতে চাই না যে ক্লাবকে আমি ভালোবাসি। ওরা না বললেও আমি বুঝতে পারছিলাম, আমি থাকি সেটা তারা চাচ্ছে না। তখনই আমি চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি বলে দিয়েছি এখানে থেকে মন খারাপ করে বসে থাকতে রাজি নই আমি।’

২২ বছর বয়সী রাইটব্যাককে এভাবে এক মাসের মধ্যে বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছে বার্সেলোনা। ৯০ লাখ ইউরো দিয়ে কিনে এককালীন প্রায় ২ কোটি ৫০ লাখ ইউরো পেয়েছে কাতালান ক্লাবটি। এতে মনে হতেই পারে, বার্সেলোনা তাঁকে কখনোই খেলোয়াড় হিসেবে ভাবেনি, শুধু টাকার জন্য ব্যবহার করেছে। এমারসন কি তেমনটা ভাবেন?

ব্রাজিলিয়ান রাইটব্যাকের উত্তর, ‘বার্সেলোনা আমাকে “ব্যবহার করেছে” এই শব্দটা বলব না, কিন্তু যেভাবে ঘটনা ঘটেছে খুব দুঃখ পেয়েছি। তারা অন্য কোনোভাবে এটা করতে পারত। এর চেয়ে ভালো উপায়ে সমস্যা সমাধান করা যায়। আমি যখন এসেছি তখন নিশ্চিত ছিলাম, বার্সেলোনা আমাকে বিক্রি করতে চায় না। কিন্তু যেভাবে ঘটনা ঘটল তাতে আমি নিশ্চিত আমাকে বিক্রি করার কথা মাথায় রেখেই কিনেছিল তারা।’