বিশ্বকাপে যেতে এখন কী করতে হবে আর্জেন্টিনাকে?

বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব নিয়ে কিছুটা মাথাব্যথা থাকারই কথা মেসিদের। ফাইল ছবি।
বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব নিয়ে কিছুটা মাথাব্যথা থাকারই কথা মেসিদের। ফাইল ছবি।

এদগার্দো বাউজা বেশ বাস্তবতাবাদী। চিলির সঙ্গে ম্যাচ, না জিতলে আর্জেন্টিনার ২০১৮ বিশ্বকাপে যাওয়ার সম্ভাবনা আর জিলাপির প্যাঁচ—দুটি ব্যাপার একই রকম হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। বাংলাদেশ সময় আগামীকাল ভোর সাড়ে পাঁচটায় চিলির সঙ্গে ম্যাচটি সামনে রেখে আর্জেন্টিনা কোচ তাই সোজা বলে দিলেন, ‘জয়টা কীভাবে এল, সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, জয় এলেই হলো।’
বোঝাই যাচ্ছে, জয় পেতে কতটা মরিয়া লিওনেল মেসিরা। হবেন না! দক্ষিণ আমেরিকান বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের সমীকরণটা যেমন জটিল হয়ে যাচ্ছে, তাতে একেকটা ম্যাচে জয় এখন সোনার হরিণের মতো। পয়েন্ট তালিকাটাই দেখুন। বাংলাদেশ সময় কাল ভোর পাঁচটায় উরুগুয়ের সঙ্গে খেলতে নামা ব্রাজিল তালিকার শীর্ষে। ১২ ম্যাচে ২৭ পয়েন্ট নেইমারদের। কিন্তু দুই থেকে ছয়—তালিকার এই পাঁচটি দলের মধ্যে পয়েন্টের ব্যবধান মাত্র ৫! দুইয়ে থাকা উরুগুয়ের পয়েন্ট ২৩, ছয়ে থাকা কলম্বিয়ার ১৮। এমনকি সাতে থাকা প্যারাগুয়ে (১৫) ও আটে থাকা পেরুরও (১৪) এখনো রাশিয়ার টিকিট পাওয়ার আশা আছে।
মেসিদের নিয়ে সমর্থকদের ভয়ও এখানেই। একটু এদিক-ওদিক হলেই, ১৯৭০ সালের পর প্রথম কোনো বিশ্বকাপ হয়ে যেতে পারে আর্জেন্টিনাবিহীন। কনমেবল অঞ্চল থেকে সরাসরি বিশ্বকাপে যাবে চারটি দল, পঞ্চম দলটি খেলবে প্লে অফ। বাদ পড়ার শঙ্কা ঝেঁটিয়ে বিদায় করতে কী করতে হবে আর্জেন্টিনাকে? খুবই সহজ উত্তর দেওয়া যায় এই প্রশ্নের, বাকি যে ছয়টি ম্যাচ আছে, সব কটি জিতলেই তো হলো। কিন্তু কাজটা যদি এতই সহজ হতো, তাহলে নিশ্চয়ই মেসিদের নিয়ে এত শঙ্কাও থাকত না সমর্থকদের। 

আর্জেন্টিনার বাকি ছয়টি ম্যাচই আগে দেখে নিন। কাল ঘরের মাঠে চিলির সঙ্গে ম্যাচটা কঠিন। ২০১৫ ও ২০১৬—টানা দুটি কোপা আমেরিকার ফাইনালে এই চিলির কাছে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে মেসিদের। এবারও নিশ্চয়ই ছেড়ে কথা বলবেন না অ্যালেক্সিস সানচেজরা। কঠিন হবে আর্জেন্টিনার বাকি পথটুকুও। কালকের ম্যাচের চার দিন পর মেসিরা যাবেন বলিভিয়ায়। প্রতিপক্ষের নাম শুনে ম্যাচটা সহজ মনে হতে পারে। কিন্তু ম্যাচটা ভেন্যুর নামটা শুনলে তা বলতে দ্বিতীয়বার ভাবতে হবে যে কাউকেই। লাপাজ—সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সাড়ে তিন হাজার ফুট উচ্চতায় খেলতে হবে আর্জেন্টনাকে। ডিয়েগো ম্যারাডোনা কোচ থাকার সময় সেখানে ৬-১ গোলে হেরেছিল তারা।
এই দুটি ম্যাচ দিয়ে এবারের রাউন্ড শেষ হবে। পরের রাউন্ডে শুরুতেই আর্জেন্টিনা পড়বে কঠিন পরীক্ষায়, খেলতে যেতে হবে উরুগুয়ের মাটিতে। এরপরের ম্যাচটা কাগজকলমে কিছুটা সহজ, ঘরের মাঠে ভেনেজুয়েলার সঙ্গে। কিন্তু মাঠে তেমনটা হবে, সে নিশ্চয়তা কে দেবে? এই বাছাইপর্বেই ভেনেজুয়েলার মাটিতে ২-২ গোলে ড্র করে এসেছিল আর্জেন্টিনা। শেষ রাউন্ডে মেসিদের শেষ দুটি ম্যাচও জটিল হওয়ারই কথা। পেরুর সঙ্গে ঘরের মাঠে খেলার পর আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব শেষ করবে ইকুয়েডরে গিয়ে। এখানে ইকুয়েডর ম্যাচটাই বেশি কঠিন। এই মুহূর্তে পয়েন্ট তালিকার তিনে আছে দলটি। এই ইকুয়েডরের কাছেই ২-০ গোলে হেরে শুরু হয়েছিল আর্জেন্টিনার বাছাইপর্ব।
তবে আর্জেন্টিনার জন্য একটু স্বস্তি হয়ে উঠতে পারে এ তথ্যটি। সেরা ছয়ে থাকা অন্য দলগুলোর তো একে অন্যের সঙ্গে আরও অনেক ম্যাচ বাকি। সেগুলোও প্রভাব ফেলবে মেসিদের বিশ্বকাপ ভাগ্যে। কাল ব্রাজিল-উরুগুয়ে ম্যাচ তো আছেই। এই রাউন্ডেই দ্বিতীয় ম্যাচটিতে (আর্জেন্টিনা যখন বলিভিয়ায় খেলবে) ইকুয়েডর খেলবে কলম্বিয়ার সঙ্গে। এখনো বাকি আছে ব্রাজিল-ইকুয়েডর, কলম্বিয়া-ব্রাজিল, চিলি-ইকুয়েডর, ব্রাজিল-চিলি ম্যাচগুলোও!
আপাতত তাই বাউজার মন্ত্রে দীক্ষা নিয়ে একেকটি ম্যাচ খেলতে পারেন মেসিরা—জয় কীভাবে এল সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, জয় এলেই হলো। সূত্র: ফিফাডটকম।