বেনজেমার গোলটি বৈধ ছিল: সাবেক ইংলিশ রেফারি

ফাইনালে গোল পাওয়া হলো না বেনজেমারছবি: টুইটার

২৮ মে স্তাদ দে ফ্রান্সে বিজয়ী দলটির নাম রিয়াল মাদ্রিদ বলেই হয়তো এ নিয়ে খুব বেশি উচ্চবাচ্য নেই। না হলে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে ওভাবে গোল বাতিল হওয়া বড় আলোচনার জন্ম দিত। লিভারপুলের বিপক্ষে প্রথমার্ধের শেষ দিকে রিয়ালের করিম বেনজেমা একটি গোল করেছিলেন। কিন্তু লাইনসম্যান অফসাইডের পতাকা তোলেন। তিন মিনিট ধরে দেখে ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি সে সিদ্ধান্ত সঠিক বলেই জানিয়েছেন।

সে সিদ্ধান্তের পক্ষে অফসাইডের যে যুক্তি দেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে দ্বিধান্বিত অনেক বিশ্লেষক। অনেকে নিয়ম নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন। ওদিকে চ্যাম্পিয়নস লিগ ও ইউরোর ফাইনালে দায়িত্ব পালন করা সাবেক রেফারি মার্ক ক্ল্যাটেনবার্গ বলেন, বেনজেমার গোল বাতিলের সিদ্ধান্তটা ভুল ছিল।

বেনজেমার এই গোলই বাতিল হয়েছে
ছবি: রয়টার্স

গত পরশু ম্যাচের ৪৩ মিনিটে আলিসন বেকারকে একা পেয়েছিলেন বেনজেমা। কিন্তু এরপরই বলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। শেষ মুহূর্তে বলটা সতীর্থ কেউ পাবে, এই আশায় পাস দেন। কিন্তু সে বল বুঝে নেওয়ার মতো কেউ ছিল না। আলিসন, ইব্রাহিমা কোনাতে, ফাবিনিও বল ক্লিয়ার করতে গিয়েছিলেন। রিয়ালের ফেদে ভালভার্দেও ছিলেন। ভালভার্দের পা থেকে বল ফাবিনিওকে ছুঁয়ে বেনজেমার কাছে চলে যায়। বল জালে জড়ান ফ্রেঞ্চ ফরোয়ার্ড। কিন্তু লাইন্সম্যান অফসাইডের ফ্ল্যাগ উঁচিয়ে ধরেন।

এ ব্যাপারে ম্যাচের বিরতিতে বিশ্লেষণে কারণ হিসেবে বলা হয়, ‘অফসাইডের নিয়মে আছে আক্রমণে থাকা খেলোয়াড় যদি গোলকিপারের সামনে থাকা শেষ ডিফেন্ডারের চেয়ে এগিয়ে না থাকেন তবে অফসাইড হবে না।’ কিন্তু যদি কোনো কারণে গোলকিপার তাঁর দলের দুজন খেলোয়াড়ের চেয়ে এগিয়ে যান, সে ক্ষেত্রে গোলকিপারের অবস্থান আর গুরুত্বপূর্ণ থাকে না। সে ক্ষেত্রে শেষ দুই রক্ষণাত্মক খেলোয়াড়ের অবস্থানই গুরুত্বপূর্ণ এবং সে ক্ষেত্রে দ্বিতীয় ডিফেন্ডারের চেয়ে এগিয়ে থাকলেই অফসাইড।

ডাইকের চেয়ে একটু এগিয়ে থাকায় অফসাইড দেওয়া হয়েছিল
ছবি: টুইটার

বল যখন বেনজেমার কাছে যায় তখন অ্যান্ডি রবার্টসন ছিলেন সবচেয়ে পিছিয়ে, ওদিকে বেনজেমার সঙ্গে প্রায় একই লাইনে ছিলেন ভার্জিল ফন ডাইক। বিশ্লেষণে বলা হয়েছিল যেহেতু বল ভালভার্দের কাছ থেকে এসেছে এবং বেনজেমা ফন ডাইকের চেয়েও পিছিয়ে থাকায় গোলটা অফসাইড বলে বাতিল হয়েছে।

পরে জানা যায়, অফসাইড আইনের ১১.২ ধারা এখানে প্রযোজ্য হয়েছে। ধারায় লেখা হয়েছে, ‘অফসাইডে থাকা একজন খেলোয়াড় যদি প্রতিপক্ষের কাছ থেকে বল পায়, যা ইচ্ছাকৃতভাবে পাঠানো হয়েছে, তাহলে আর সুবিধা গ্রহণ (অফসাইডে থাকার) করা হয়েছে বলে ধরা হবে না।’

পরশু জটলা থেকে বলটা ফাবিনিওর পা হয়ে বেনজেমার কাছে এসেছিল। ফলে বেনজেমার পেছনে ক জন আছে, সেটা আর গণ্য হওয়ার কথা নয়। কিন্তু ভিএআরের মনে হয়েছে ফাবিনিও বলটা নিয়ন্ত্রণে থাকা অবস্থায় দিতে পারেননি, অর্থাৎ অনিচ্ছাকৃত স্পর্শ ছিল সেটি। এ কারণেই এটা অফসাইড বলে ধরা হয়েছে।

গোল না পান, চ্যাম্পিয়ন তো হয়েছেন বেনজেমা!
ছবি: রয়টার্স

ডেইলি মেইলের কলামে ২০১৬ চ্যাম্পিয়নস লিগ ও ইউরোর ফাইনালের দায়িত্বে থাকা ক্ল্যাটেনবার্গ বলেন, এই সিদ্ধান্ত ভুল ছিল। কলামে বলেছেন, ‘প্রথমার্ধে করিম বেনজেমার গোল ভুলভাবে বাতিল হওয়ায় রিয়াল মাদ্রিদ এই জয়কে প্রকৃতির বিচার বলেই মানবে। ফেদেরিকো ভালভার্দে ফিরতি বলটা পেয়েছিল কিন্তু এরপর বলটা পরিষ্কারভাবেই ফাবিনিওর কাছ থেকে এসেছে।’

এটুকু নিয়ে কারও মনেই সন্দেহ নেই। মূল প্রসঙ্গটা ছিল, ইচ্ছাকৃত নাকি অনিচ্ছাকৃত স্পর্শে ফাবিনিও বল পাঠিয়েছিলেন বেনজেমার কাছে। এ ক্ষেত্রে তর্ক সাপেক্ষে গত এক দশকের সেরা এই ইংলিশ রেফারির ধারণা, স্পর্শটা ইচ্ছাকৃত ছিল, ‘ভিএআরকে সিদ্ধান্ত নিতে হতো, লিভারপুল মিডফিল্ডার ইচ্ছাকৃতভাবে বল পাঠিয়েছিলেন নাকি দুর্ঘটনাবশত বল গিয়েছিল। যেহেতু ফাবিনিও বলটা ধরার জন্য স্লাইড করেছেন, আমি বলব তাঁর স্পর্শটা ইচ্ছাকৃত ছিল। কিন্তু ভিএআর সিদ্ধান্ত নিয়েছে এটা ইচ্ছাকৃত ছিল না। ওদের হয়তো মনে হয়েছে মাঠের সিদ্ধান্তের পক্ষে থাকাই ভালো। লিভারপুল ভাগ্যবান।’