ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করতে গিয়ে আরও ঝামেলায় নেইমার?

ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার হচ্ছে না নেইমারের! ফাইল ছবি
ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার হচ্ছে না নেইমারের! ফাইল ছবি
বিশ্বকাপজুড়ে চলা সমালোচনার জবাব দিতে বিজ্ঞাপনে হাজির হয়েছেন নেইমার। নিজের ভুলও স্বীকার করেছেন সেখানে। তবে আত্মপক্ষ সমর্থনও করেছেন। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতে হিতে বিপরীত হতে যাচ্ছে তাঁর


বিশ্বকাপের পর নাকি পুরোপুরি নতুন মানুষ নেইমার। রাশিয়ায় যতটা না পারফরম্যান্সের কারণে আলোচনায় এসেছিলেন নেইমার, তার চেয়েছে অনেক বেশি সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন মাঠে গড়াগড়ি করে। যদিও বিশ্বকাপে ফাউলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ফাউলের শিকার হওয়া খেলোয়াড় এই ব্রাজিলীয় তারকা, এরপরও অনেক সময় আলতো টোকায় মাঠে পড়ে গিয়ে বিতর্ক তৈরি করেছেন।

বিশ্বকাপের পর এ নিয়ে চুপ থাকলেও জিলেটের একটি বিজ্ঞাপনচিত্রে নেইমার তাঁর সমালোচনার জবাব দিয়েছেন। যদিও বিজ্ঞাপন বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, এটা নেইমারের জন্য হিতে বিপরীতই হতে যাচ্ছে। পুরো ব্যাপারটিতে নিজের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের বদলে এটি আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

বিজ্ঞাপনটিতে কী বলেছেন নেইমার? বিশ্বকাপের সময় কিছু বাড়াবাড়ি যে তিনি করেছেন, সেটি স্বীকার করে আবেগাপ্লুত কণ্ঠে তাঁর বক্তব্য, ‘জঙ্ঘাস্থিতে বুটের স্পাইকের আঘাত, মেরুদণ্ডে লাথি, পায়ের পাতায় পাড়া—বিশ্বকাপের ম্যাচগুলোতে সবকিছুরই শিকার হয়েছি আমি। আপনারা হয়তো মনে করেন আমি সবকিছুতে বাড়াবাড়ি প্রতিক্রিয়া দেখাই। হ্যাঁ, এটা ঠিক মাঝেমধ্যে আমি একটু বাড়াবাড়ি করি। কিন্তু সত্যিটা হচ্ছে, আমাকে মাঠে ভুগতে হয়। আপনাদের কোনো ধারণাই নেই মাঠে আমাকে কীসের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। আপনাদের মনে হতে পারে, আমি মাঠে কেন এত পড়ে যাই। এটি একটু বেশিই হয়ে যাচ্ছে কি না। বাস্তবতা হলো, আমি ভেঙে খান খান হয়ে যাচ্ছি।’

নিজেকে শিশুর সঙ্গেও তুলনা করেছেন ব্রাজিলীয় তারকা, ‘আমার মধ্যে একটি শিশু বাস করে। মাঝেমধ্যে এটা গোটা পৃথিবীকে মুগ্ধ করে দেয়, আবার অনেক সময় তার দুষ্টুমি সবাইকে বিরক্ত করে। আমি এই শিশুটিকেই বাঁচিয়ে রাখতে লড়ে যাচ্ছি। তবে বলে দিচ্ছি, এটা আমার ভেতরেই থাকবে, মাঠে থাকবে না এটি।’

বিপণন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এটা নেইমারের জন্য বরং উল্টো ফল বয়ে নিয়ে আসবে। মার্কেটিং ভ্যালু নামের একটি প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞ আমির সোমাগি বলেছেন, ‘বিশ্বকাপের পর ১৫ দিন কেটে গেছে। সবাই নেইমারের মুখ থেকে তাঁকে নিয়ে সমালোচনার বিষয়ে শুনতে চেয়েছিল। কিন্তু তিনি তখন চুপ করে ছিলেন। নেইমার গণমাধ্যমে কিছু সাক্ষাৎকার দিয়েছেন, কিন্তু সেগুলোতে কোথাও নিজের ভুল স্বীকার করেননি। এখন তিনি একটি টেলিভিশন বিজ্ঞাপন সামনে রেখে, এর মধ্যে নিজেকে আড়াল করে এসব বলছেন। এটি প্রতিষ্ঠানটির জন্য খুব ভালো। ব্র্যান্ডের জন্য খুব ভালো। কারণ এতে ব্র্যান্ডটি আলোচিত হবে। কিন্তু এটি দিয়ে নেইমারের উপকার হবে না। নেইমার ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাঁকে এখন খুব বড় ভাবমূর্তি-সংকটের সঙ্গে লড়তে হচ্ছে।’

আরেক ক্রীড়া বিপণন বিশেষজ্ঞ এরিক বেটিংয়ের ধারণা, ‘নিজের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের এই বিজ্ঞাপনটির সময়টা ঠিক হয়নি। এ ব্যাপারে রীতিমতো ভুলই করেছেন তিনি।’

বেটিং মনে করেন, নেইমারের যে সমস্যা, সেটি মাঠের। তাঁকে মাঠেই প্রমাণ করতে হবে যে তিনি বদলে গেছেন। সুতরাং একটি বিজ্ঞাপন দিয়ে তিনি দর্শকদের মানস পরিবর্তন করতে পারবেন না।
হেসে কোলাগ্রোসি নামের আরেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, নেইমার সবচেয়ে ভালো করতেন বিশ্বকাপের পরপরই কোনো সংবাদ সম্মেলনে নিজের ভুল স্বীকার করলে। এতে করে সবার মধ্যে তাঁর আন্তরিকতা নিয়ে ধারণা জন্মাত।

২০১১ সালেও নেইমার এভাবেই একটি বিজ্ঞাপনচিত্রের মাধ্যমে নিজের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করেছিলেন। সেবার মাঠে বাজে আচরণের জন্য ব্যাপক সমালোচিত হয়েছিলেন তিনি।