ভারতকে হারিয়েও শিরোপা জেতা হলো না বাংলাদেশের

ভারতের এক খেলোয়াড়ের সঙ্গে বল দখলের লড়াইয়ে বাংলাদেশের নারী ফুটবলারছবি: বাফুফে

ম্যাচ শেষের বাঁশি বাজতেই জার্সিতে মুখ ঢেকে কাঁদতে শুরু করলেন আকলিমা খাতুন। পোস্টের সামনে বসে কাঁদছিলেন গোলরক্ষক রুপনা চাকমা।

জামশেদপুরে অনূর্ধ্ব-১৮ নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে আজ ভারতকে ১-০ গোলে হারিয়েছে বাংলাদেশ। একমাত্র গোলটি করেন আকলিমা খাতুন। কিন্তু গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচ জিতেও বয়সভিত্তিক সাফে চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি বাংলাদেশ।

রাউন্ড রবিন লিগের এই টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ ও ভারতের জয় সমান তিনটি করে। দুই দলেরই পয়েন্ট সমান ৯। কিন্তু গোল ব্যবধানে এগিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভারত। রানার্সআপ বাংলাদেশ। ভারত ৪ ম্যাচে জিতেছে ৩টিতে। হার ১ ম্যাচ।

প্রতিপক্ষের জালে দিয়েছে ১৩ গোল। বিপরীতে বাংলাদেশও ৪ ম্যাচে ৩টি জিতেছে। একমাত্র হার ভারতের কাছে। প্রতিপক্ষের জালে বাংলাদেশ দিয়েছে ৭ গোল।

ভারত ও বাংলাদেশ সমান ম্যাচ জিতলেও গোল ব্যবধানে পিছিয়ে থাকায় কপাল পুড়েছে মেয়েদের
ছবি: বাফুফে

বয়সভিত্তিক অথবা জাতীয় দল—গত কয়েক বছরে এত দিন সব জায়গায় ছিল চেনা মুখের ভিড়। অথচ মারিয়া মান্দা, মনিকা চাকমা, আনাই মগিনি, আঁখি খাতুন, শামসুন্নাহার সিনিয়র, নীলুফার ইয়াসমিন, তহুরা খাতুন, ঋতুপর্ণা চাকমা, মার্জিয়া আক্তার, আনুচিং মগিনিদের বাদ দিয়ে গড়া হয় এবারের দল।

গত ডিসেম্বরে ঢাকায় অনূর্ধ্ব-১৯ নারী সাফে বাংলাদেশকে চ্যাম্পিয়ন করেছিল এই মেয়েরাই। কিন্তু সাফের টুর্নামেন্টে খেলার নির্ধারিত বয়সসীমা পার হয়ে যাওয়ায় এবার এই দশ ফুটবলারের কাউকে পাওয়া যায়নি।

এবারের বয়সভিত্তিক দলের ক্যাম্পে ডাক পাওয়াদের মধ্যে শুধু গোলরক্ষক রুপনা চাকমা ও শামসুন্নাহার জুনিয়রের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে।

কিন্তু ইয়াসমিন আক্তার, সাথী বিশ্বাস, ইতি রানী, কোহাতি কিসকু, সুরমা জান্নাত, ইতি খাতুন, নাসরিন আক্তার, সোহাগি কিসকু, রেহেনা আক্তার, হালিমা খাতুন, স্বপ্না রানীরা সর্বশেষ বয়সভিত্তিক সাফের ২৩ জনের দলে থাকলেও একাদশে সুযোগ পাননি।

তবে ওই টুর্নামেন্টে আলো কাড়া আফঈদা খন্দকার, উন্নতি খাতুন ও শাহেদা আক্তার ভারতে গিয়ে ভালো করতে পারেননি। ঢাকায় সর্বশেষ সাফ টুর্নামেন্টে ৫ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা ও সেরা খেলোয়াড় শাহেদাও আজ জ্বলে উঠতে পারেননি।

আক্রমণাত্বক ফুটবল খেলেছে বাংলাদেশের মেয়েরা
ছবি: বাফুফে

ভারতের কোচ থমাস লেনার্ট ডিনারবির কৌশলই ছিল রক্ষণাত্মক। নিজেদের রক্ষণ সামলে আক্রমণে উঠেছে ভারতীয় মেয়েরা। আর বাঁচা-মরার ম্যাচে বাংলাদেশ খেলেছে অতি আক্রমণাত্মক ফুটবল। বাঁ দিকে শাহেদা, ডান প্রান্তে উন্নতি খাতুন। আর আক্রমণে শামসুন্নাহার ও আকলিমা নেতৃত্ব দেন।

ম্যাচের ৩০ মিনিটে উন্নতি ভারতের গোলরক্ষক মেলোডি চানুকে একা পেয়েও উন্নতি বল পাঠালেন বাইরে। অবশ্য ভাগ্য ভালোই বলতে হবে বাংলাদেশের। ম্যাচের ৪০ মিনিটে ভারতের ফরোয়ার্ড নিতু লিন্ডার শট সাইড পোস্টে লেগে ফেরে! পোস্টের সামনে তখন শুধু গোলকিপার রুপনা চাকমা।

ম্যাচে যতই সময় গড়িয়েছে, ততই যেন চাপ বেড়েছে বাংলাদেশের। দ্বিতীয়ার্ধে একাধিক সুযোগ পেয়েও আকলিমা কখনো বল মেরেছেন বাইরে। কখনো বল তুলে দিয়েছেন ভারতের গোলকিপার মেলোডির হাতে।

তবে ৭৪ মিনিটে আর ভুল করেননি আকলিমা। বক্সের মধ্যে বাঁ পায়ের গড়ানো প্লেসিংয়ে করেছেন একমাত্র জয়সূচক গোল। বাকি সময়ে অবশ্য চেষ্টা করেও আর কোনো দল গোল করতে পারেনি দল।